সুলতান সুলায়মান ধারাবাহিকের কাল্পনিক চরিত্ররা

মারিয়া সালাম

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩

সুলতান সুলায়মান ধারাবাহিকে প্রধান কিছু চরিত্র ছাড়া বেশিরভাগই কাল্পনিক। ইতিহাস ঘাটলে সুলায়মানের হারেম সম্পর্কে খুব কম জানা যায়। তাই সেই সময়কার হারেমের প্রকৃত অবস্থা বুঝাতে কিছু কাল্পনিক চরিত্রের অবতারণার প্রয়োজন অবশ্যই ছিল। সেরকম কিছু চরিত্র হচ্ছে: সম্বুল আঘা, গুল আঘা ও মেরজান আঘা। এদের মধ্যে হুররমের কাছের ও ভরসার পাত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে সম্বুলকে। অথচ, ইতিহাসে এরকম চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু নথিপত্রে হুররমের কাছের সহযোগী হিসেবে একমাত্র নওবাহার নামের একজনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

 

অন্যান্য মূল সহযোগীর চরিত্রে যাদের দেখানো হয়েছে তারা হলো: নিগার কালফা, গুলশা হাতুন, ফিদান হাতুন, দায়া হাতুন, ফারিয়া কালফা ও আফিফা হাতুন। এদের মধ্যে একমাত্র আফিফা হাতুন ছাড়া অন্যসব চরিত্রই কাল্পনিক। উপরন্তু, আফিফা হাতুনকে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেটিও ইতিহাস নির্ভর নয়। ইতিহাসে দেখা যায়, আফিফা হাতুন ছিলেন সুলতান সুলায়মানের দুধমাতা। তাকে সুলতান অত্যন্ত সম্মান করতেন ও গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু, হারেমে তার এরকম ভূমিকার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না।

 

আলোচ্য চরিত্রগুলোর মতো হারেমে শাহজাদা মুস্তফা ও বায়েজিদের নারীসঙ্গী আয়েশা, রানা, ডেফনে ও রুমেশা হাতুনরাও কাল্পনিক। ইতিহাস মতে, এই দুই শাহজাদার কোনো প্রধান স্ত্রী ছিল না এবং তাদের সন্তানদের জন্ম হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন নারীর গর্ভে।

 

এদের বাইরে কিছু চরিত্র আছে যেগুলো ধারাবাহিকে একটা বড় অংশজুড়ে উপস্থিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে তাদের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এদের মধ্যে প্রথমেই আসে লিও ও রাজকুমারী ইসাবেলার কথা। লিওকে দেখানো হয়েছে হুররমের তরুণ বয়সের প্রেমিক হিসেবে। ধারাবাহিকে দেখানো হয়েছে, লিও একজিন শিল্পী ও প্রেমিকা হুররমের খোঁজে সে ইস্তাম্বুলে আসে। তাকে হারেমে নিয়ে আসে নাসু ইফেন্দি (একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ও শিল্পী) এবং ঘটনাক্রমে হুররমের সাথে লিওর সম্পর্কের কথা প্রকাশ পাওয়ার আগেই হুররম লিওকে বিষ দিয়ে হত্যা করে।

 

বাস্তবে হুররমসহ হারেমের অন্যসব মেয়েদের নিয়ে আসা হয় শিশুকালে। তরুণ বয়সে তাদের প্রেমিক বা বাগদত্তা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া নাসু ইফেন্দি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী ও গুণী শিল্পী। তাকে বলা হতো মুসলমান লিওনার্ডো দ্য ভিনসি এবং তার সাথে সুলতান বা ইব্রাহিম পাশার তেমন কোনো হার্দিক সম্পর্ক ছিল না।

 

এদিকে, রাজকুমারী ইসাবেলার চরিত্রটিও কাল্পনিক। স্প্যানিশ এই রাজকুমারীকে দেখানো হয় একজন অষ্ট্রিয়ান রাজকুমারের বাগদত্তা হিসেবে যাকে অটোমান জলদস্যুরা অপহরণ করে। একপর্যায়ে দেখা যায়, হুররমকে উপেক্ষা করে সুলতান সুলায়মান তার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান এবং হুররম বাধ্য হয়ে ইসাবেলাকে গুম করেন। অথচ, ইতিহাসে এরকম কোনো ঘটনা নাই। তাছাড়া সেসময় একজন ক্যাথলিক রাজকন্যা কোনো অবস্থাতেই স্বেচ্ছায় একজন মুসলমান সম্রাটের সাথে সম্পর্কে জড়াতেন না।

 

ইতিহাসে সমসাময়িক একজন ইসাবেলার সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি এরাগনের রানীর কন্যা ছিলেন। তার জন্ম হয় ১৫১৮ তে এবং মৃত্যু ১৫৩৭ এ। কিন্তু, তাকে কখনো অটোমান জলদস্যুরা অপহরণ করেছে এরকম কোনো দলিল নাই। উপরন্তু, ১৫২০ এ হুররমকে বিয়ে করার পরে সুলতান সুলায়মানের জীবনে আর তেমন কোনো নারীর আগমন ঘটেনি। সুলতান জীবনের শেষদিন পর্যন্ত হুররমের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন এবং তার অন্যকোনো নারীসঙ্গী ছিল না। চলবে