স্বকৃত নোমানের গদ্য ‘মহাকালে রেখাপাত’

পর্ব ৭৪

প্রকাশিত : আগস্ট ২৮, ২০২২

সরকারি কর্মকর্তাদের জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস বাড়ানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেওয়া উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশসংনীয়। প্রাথমিকভাবে ১৪৭৭টি বইয়ের তালিকা করা হয়েছে। তালিকার প্রতিটি বই ও লেখকের নাম খুঁটিয়ে দেখলাম। কয়েকটি দুর্বল বই আছে সত্য। তবু আমাকে যদি এই তালিকায় নম্বর দিতে বলা হয়, আমি ১০০ এর মধ্যে ৯০ দেব।

আমার দেখা গত ১৫ বছরে সরকারি উদ্যোগে যেসব বই কেনা হয়েছে, জনপ্রশাসনের এ তালিকা সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ থেকে শুরু করে ম্যাক্সিম গোর্কি, গার্সিয়া মার্কেস প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের বই বাদ যায়নি। বাদ যায়নি ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোও। বই নির্বাচন কমিটি হলে এর চেয়ে ভালো তালিকা কমিটি তৈরি করতে পারত না। আমি নিশ্চিত। অতীতে কমিটির কাজ দেখেছি। দেখে হতাশ হয়েছি।

কিন্তু খারাপ হয়েছে তালিকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলাম বুলবুলের ২৯টি বই রাখাটা। এই লেখকের নাম সাহিত্য জগতের কেউ আগে কখনো শোনেনি। শুনতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক নিভৃতচারী লেখক থাকেন। সকাল থেকে বিভিন্ন সূত্র থেকে নবীরুল ইসলামের কয়েকটি বইতে চোখ বুলিয়েছি। অত্যন্ত নিম্নমানের লেখা। এটাই সমস্যা। ভালো মানের লেখা হলে তার বই রাখা যেতেই পারে। আমলা বলে তাকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তার লেখা সাহিত্য গুণহীন।

যেহেতু জনাব নবীরুল ইসলাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, এবং যেহেতু বইয়ের তালিকাটি তার মন্ত্রণালয় থেকে হয়েছে, সেহেতু বোঝাই যাচ্ছে তিনি ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে নিজের ২৯টি বই ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এটা অন্যায়। বড় ধরনের অন্যায়। তার যদি ৫টি বই থাকত, সিস্টেম লস হিসেবে মেনে নেওয়া যেত। রাস্তার কাজ করতে গেলেও সিস্টেম লস হয়। কিছু ইট-খোয়া-সিমেন্ট অপচয় হয়। কিন্তু একজনের ২৯টি নিম্নমানের বই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই তালিকা থেকে তার বইগুলো বাদ দিলে তালিকা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

প্রথম আলোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, লেখক তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এটা একটি অমূলক তথ্য। সরকারি কর্মকর্তাদের বই তালিকায় রয়েছে, এ কথা মিথ্যে নয়। যেমন, চাকরির বিধানবলি, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন, সরকারি ও আধা সরকারি দপ্তরের আদর্শ পত্র লেখন কৌশল, ছুটি বিধিমালা, পেনশন বিধিমালা, মোবাইল কোর্ট আইন, ফৌজদারি কার্যবিধি, নিরিক্ষা ও হিসাব বিধি ও পদ্ধতি, প্রশাসনিক পরিভাষা, সরকারি কাজে ব্যবহারি বাংলা ইত্যাদি বই। এসব বই তো সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য লাগবেই। অপরিহার্য। এসব বই সরকারি কর্মকর্তারাই লিখবেন, এটাই স্বাভাবিক। তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের এসব বই রাখাটাকে দোষণীয় মনে করছি না।

ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, এই তালিকা বহাল থাকুক। শুধু বাদ দেওয়া হোক অতিরিক্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলামের ২৯টি বই। অধিক পরিমাণে ভালো মানের বই তালিকায় রাখার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ। কেবল এ বছর নয়, প্রতি বছর এই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভালো বইগুলো কিনুক। কর্মকর্তাদের সাহিত্য ও ইতিহাসের ভালো বইগুলো পাঠে উৎসাহিত করুক। বই পড়ার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে বিকশিত হবে মানবিক গুণাবলি।