স্লেভারি
মাহিন আহমেদপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
বেসিক্যালি ছোটবেলা থেকে নানু দাদু, আম্মা আব্বা, চাচা মামা, ফ্রেন্ডস কলিগস, ইত্যাদি সবাই যা শিক্ষা দিয়েছে এর ৯০%+ হল স্লেভ থিংক, অর্থাৎ একজন কৃতদাস কিভাবে চিন্তা করবে সেটা নির্ধারণ করা। দেশের ছেলেমেয়েরা স্মার্ট হয়ে ওঠে স্কুল এবং কলেজ পার হয়ে ভার্সিটিতে পড়ার সময়ে বা তার কিছু পরে। প্রাইমারি বা সেকেন্ডারিতেই জিনিয়াসগুলাকে আইডেন্টিফাই করা যায়। আবার কিছু ব্যাক বেঞ্চার দুষ্টু পোলাপান থাকে যারা ক্যারিয়ারে শাইন করে। কেউ হয় স্ট্রিট স্মার্ট, আবার কেউ ইন্টেলেকচুয়াল। বাকিরা মিডিওক্রিটিতে আটকে থাকি। তো দেখা যায় যে ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী পরবর্তীতে কে কত বড়লোক হবে এটা জেনারেলি নির্ধারিত হয়ে যায় উইথ এ ফিউ এক্সেপশনস। কেউ কেউ বেশ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে আসা সত্ত্বেও ফিনানশিয়াল ব্যারিয়ার ব্রেক করে অনেক টাকার মালিক হয়ে যায়।
বেশি টাকা ইনকাম করার কতকগুলা বেসিক ফর্মুলা আছে যেমন ডাক্তার বা লইয়ার হওয়া। চাউলের আড়ত কিম্বা ষ্টীল মিল। ভাতের হোটেল কিম্বা ফাস্ট ফুড। সেদিন আমার বউয়ের সাথে ডার্টি আলাপ করা ওর এক কলিগ বলছিল যে মাহিন তো রিটায়ার্ড, ও একটা ওষুধের দোকান দিলেই পারে। শুনে একেবারে ঝাঁট জ্বলে গেল। মুভি ফুভিতে দেখায় যে এভাবে বউ বা গার্লফ্রেন্ডের পিছে কেউ লেগে থাকলে তাকে গিয়ে নায়কটা ধোলাই দিয়ে আসে। আমি আবার এইসব পারিনা। আমার যত চোট এই সোশ্যাল মিডিয়াতেই।
তো স্লেভ থিংক হল এভাবে সবকিছুকে স্বাভাবিক ভেবে নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিয়ে পড়ে সংসারী হয়ে পড়া। সংসার করা হল স্লেভের কাজ। মানব জন্মের কারণ নাকি সংসার। স্লেভারি ছাড়া সংসার হয় কিভাবে? আমরা বিয়ে শাদী প্রেম ইত্যাদি করি জাস্ট দেখাদেখি। সবাই যা করে, আমরাও দেখাদেখি তাই করি। এটাই স্লেভ থিংক। ধরেন সব মুসলিম টুপি পাঞ্জাবী পাজামা পরে, আবার সব হিন্দু প্যান্ট শার্ট পরে, এরকম আর কি। সবাই একটা লাইন ঘাট ধরে ফেলি আমরা, তারপর অন্যদের নিয়ে হাহা হিহি, ছিছি, ইত্যাদি করতে থাকি। এটাই স্লেভ থিংক। এর কারণ হল যে আমরা জানিই না আমি কে, কেন এখানে এসেছি, কি আমার পারপাস। এগুলা কিছু যে জানেনা, সেই স্লেভ। এর চিন্তার কোন মাথামুণ্ডু নাই। এই ব্যক্তি সবার দেখাদেখি দৌড়াচ্ছে। সেই যে দুই ইঁদুরের গপ্প, এক ইঁদুর জানপ্রাণ ছিঁড়ে দৌড়াচ্ছে দেখে আরেক ইঁদুর বলে কিরে কি হইছে? ওই ইঁদুর বলে আগে দৌড়া পরে শুনবি। তো দুই ইঁদুর প্রাণপনে ছুটছে। ছুটতে ছুটতে দ্বিতীয়টা বলে এবার বল ঘটনা কি। প্রথমটা তখন বলে, আর কইস না, হাতির মায়েরে কে জানি ভরছে আর দোষ পড়সে আমার উপরে!
তো স্লেভ থিংক ব্যাপারটা এরকম যে আপনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যা যা ভাবেন, এর প্রায় সবই স্লেভ থিংক। এটাতে মাইন্ড করার কিছু নাই কারণ ওই যে বললাম আমাদের অ্যান্সেস্টর নানা দাদা থেকে শুরু করে প্রতিবেশি পরিজন সবাইই সারাক্ষণ স্লেভ থিংকই করে চলে। এর বাইরে কেউ আসলে কিছু ভাবতে শেখেনি। কিন্তু তাইলে আমি কিভাবে এটা বুঝলাম যে সব কিছুই স্লেভ থিংক? মেয়েবি আমি একটা আস্ত পাগল? তা নয়। যুগে যুগে আমার মত কিছু মানুষ এসেছে যে কোন কারণে হোক এদের চোখ খোলা। এরা সবার ভণ্ডামি খুব স্পষ্ট দেখতে পায়। এটা গিফট কিম্বা কার্স যেটাই হোক না কেন।
তো আমাদের বেসিক ভুলটা যা হয় যে আমরা অন্যদেরকে আমাদের চেয়ে ইনফেরিওর মনে করি। যেমন নাস্তিকরা ধার্মিকদের এবং ধার্মিকরা নাস্তিকদের। হিন্দুরা মুসলমানদের এবং মুসলিমরা হিন্দুদের। বাঙালিরা ইন্ডিয়ানদের এবং ইন্ডিয়ানরা বাঙ্গালিদের। কম্যুনিস্টরা ক্যাপিটালিস্টদের এবং ভাইস ভার্সা। ছেলেরা মেয়েদের এবং তার উল্টাটা। এই নিজেকে সুপিরিয়র ভাবাটাই একটা স্লেভ থিংক। এর মধ্যে সবচেয়ে পাওয়ারফুল স্লেভ থিংক হল ফিনানশিয়াল স্লেভ থিংক। মানুষ গরীব হলে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে অপমানজনক একটা ব্যাপার। এই অপমানের কারণেই মানুষ অপরাধ করে, আম্লিক করে, র-সিয়াইএ-মসাদ, ক্রসফায়ার সিন্ডিকেট, ব্যাংক ডিফল্টার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ভূমি দস্যু, পলিটিশিয়ান, কর্পোরেট শিটহেড, ইউএসেইড, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, বিল গেইটস, জর্জ সরোস, জো বাইডেন, বিম্পি, জামাত, এরশাদ, হেফাজতে ইসলাম, ইস্কন, ইত্যাদি ইত্যাদি। বিসিএস ক্যাডার আর মিলিটারি অফিসার, পুলিশের এসাই, র্যাবের চিফ। অর্থাৎ আপনি যে পথেই অগ্রসর হননা কেন, আপনি স্লেভ থিঙ্কের মধ্যে দিয়েই অগ্রসর হচ্ছেন।
এখন আপনি বলতে পারেন, তাইলে তো আর কিছুই নাই স্লেভ থিংক ছাড়া। তাইলে আমার স্লেভ থিংকই ভাল। আর তো কিছুই নাই। না। ইহা ঠিক নহে। স্লেভ থিঙ্কের বাইরে অনেক কিছুই আছে কিন্তু আপনার সেটা সম্পর্কে কোন ধারণা নাই। এই ধারণাটা তৈরি করে দেয়ার জন্যই এই লেখা। কারণ একটা ধারণা ঠিকমত বুঝতে পারলে সেটা অ্যাপ্লাই করে বিশ্বজয় করা সম্ভব। এবং ঠিক সেটাই আমরা করছি।
পৃথিবীর মানুষকে একটা জিনিষ বুঝানো সবচেয়ে কঠিন যে সে একটা স্লেভ। যে যত বেশি ইগোবান, সে তত বেশি রেজিস্ট করে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সবাই স্লেভ থিঙ্কে থাকতে বাধ্য কারণ আমাদের এই রেয়াল্মটা ম্যাক্রো লেভেলে একটা স্লেভারি সিস্টেম। আমাদের সমাজের যতগুলা স্তর আছে প্রতিটাতে বিভিন্ন স্কিলের স্লেভ এমপ্লয় করা আছে যারা যার যার লেভেল অনুযায়ী স্লেভারি করে যাচ্ছে। কিছু লোক অ্যাকচুয়ালি বুঝতে পারে যে সে স্লেভ। কিন্তু মোস্ট কেসে এদের স্পিরিট এতটাই ভাঙ্গা থাকে যে এরা ধরেই নেয় যে এই স্লেভারি সিস্টেম ভেঙ্গে কেউ কোনদিন বের হতে পারবেনা। কাজেই ফাইট শুরু করার আগেই হার স্বীকার করে বসে থাকে।
অর্থাৎ মূলত, স্লেভ দুই শ্রেণীর, ১) যারা জানে তারা স্লেভ, আর ২) যারা জানেনা। যারা বেশ টাকা পয়সার মালিক বা কোন কারণে বিখ্যাত হয়ে গেছে, টিভি স্টার বা এই জাতীয় কিছু, তারা মনে করে তাদের জীবন ধন্য। তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। কাজেই তারা শান্তিতে মরতে পারবে। কিন্তু আসলে তা নয়। এই খ্যাতি প্রতিপত্তি আসলে একটা ভুয়া জিনিষ। এটা অনেকেই হাড়ে হাড়ে বোঝে কিন্তু তারপরও গরীব হওয়ার চেয়ে কম অসম্মানজনক বিধায় কম্প্রোমাইজ করে বসে থাকে। বেসিক্যালি অ্যাভারেজ মধ্যবিত্ত তো বেসিক সার্ভাইভাল ইন্সটিংট থেকেই বের হতে পারেনা।
বিল পেয়মেন্ট, ব্যাংক ব্যালেন্স, কলেজ এজুকেশন, মরগেজ, গাড়ি, জমি কেনা, অ্যাপার্টমেন্ট কেনা, এই ইঁদুরের দৌড় একবার শুরু হলে আর শেষ হয়না। তবে হ্যাঁ, আমার চাচাদের দেখেছি আমেরিকা গিয়ে চাকরি করে আমার বাপের জমি বাড়ি ইত্যাদি কিনে কিনে বাড়ি ঘর করে টরে অনেক টাকার পেনশনসহ রিটায়ার করতে। আমেরিকায় বাড়ি আছে একাধিক, মরগেজ পেইড। এই স্লেভারি খুব সুখের স্লেভারি। কিন্তু উনাদের চিন্তা কখনও স্লেভ থিংক থেকে বের হয়নি। উনারা জাস্ট অত্যন্ত স্মার্টনেস আর অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যার যার জীবনকে একটা আরামদায়ক স্টেটে নিয়ে এসে স্লেভ মাস্টারদের এক প্রকার ফাঁকি দিতে পেরেছেন। এবং আমাদের আত্মীয় বন্ধু সবাই এটাই অ্যাকমপ্লিশ করার জন্য ইঁদুর দৌড় পাড়তে থাকে। কেউ কেউ পেরে যায়, তবে মেজরিটি ওই দৌড়াতে দৌড়াতেই মরে।
এখন যেটা হয়েছে পৃথিবীতে যে একদল লোক স্লেভ থিঙ্কের বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। এরা সবাই জানে যে আমরা একটা স্লেভারি সিস্টেমে বন্দী এবং কোন সুপারম্যান এসে আমাদের মুক্তি দিয়ে যাবেনা কোনদিন। এই স্লেভারি আমাদেরই বন্ধ করতে হবে ফাইট দিয়ে। এই ফাইটটা দেয়ার জন্য সবার আগে আমাদের কিছু তথ্য জানতে হবে যে কারা এই স্লেভ সিস্টেমের মালিক। তারা কোথায় থাকে, কি খায়। স্লেভারি সিস্টেমটা এক ধরনের হাইয়ারআর্কিকাল মডেলে চলে সেটা আগেই বলেছি কিন্তু সেই পিরামিডের সব লেভেল সবার কাছে দৃশ্যমান নয়। প্রতিটা স্তর বুঝতে হলে প্রচুর ইগো কমাতে হয়, কারণ সারাজীবন স্লেভ থিংক ছাড়া আর কিছু না করা এবং করতে না দেখার দরুণ কেউ বুঝতেই পারেনা স্লেভ থিংক বলে কিছু আছে এবং সেটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কিভাবে সেটা করতে হবে সেটা হয়ত আরেকটা লেখায় বুঝাতে হবে। আজকে এই প্রিলিমিনারিটুকুই হজম হোক।
























