হাসান আজারকাতের কলাম ‘লকডাউন ভুয়া নাকি কার্যকর’

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৭, ২০২১

ওয়ার্ল্ডমিটারের তথ্যমতে, বাংলাদেশে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ১৫০। ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনটি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে আঁচল ফাউন্ডেশনের তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ নারী-পুরুষ।

আত্মহত্যার মূল কারণ হিসেবে আর্থিক সংকট, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা সংক্রান্ত হতাশা এসব কারণ সামনে এসেছে। গতবছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন দিয়েছিল। ফলে অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকই ঢাকা শহর ছেড়ে চলে গেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো লকডাউনে বন্ধ থাকলেও অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলে নিয়মিত শিক্ষার ব্যয় মেটাতে অনেক পরিবার হিমশিম খাচ্ছে। চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতেও অনেক পরিবারের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। লকডাউনে দীর্ঘ একটা সময় গৃহবন্দি হয়ে পড়ে থাকা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা, বিষণ্ণতা অনেক পরিমাণে বাড়ছে। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহ অবনতি ঘটছে।

লকডাউনে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার ফলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও বেশ ঝুঁকির সম্মুখীন। অভিভাবকেরাও অসহায় হয়ে পড়ছে। কিছুটা অবস্থাসম্পন্ন অভিভাবকেরা ভিন্ন পন্থাও অবলম্বন করছে। গতবছর ফেসবুকে এক অভিভাবক তার সন্তানের জন্য খেলার সঙ্গী চেয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন। সে পোস্টে তিনি এর বিনিময়ে মাসিক কিছু টাকা পরিশোধ করার কথাও জানিয়েছিলেন।  বিপুলসংখ্যক মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির ফলে সমাজে এর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে অল্প মানুষের মনে প্রশ্ন না থাকলেও লকডাউনের কারণে সৃষ্ট বিশালসংখ্যক মানুষের অর্থনৈতিক ও মানসিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ক্ষমতাসীন সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। এরই মাঝে ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর লকডাউনের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জনগণকেই (বিশেষত, মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণিকে) বারবার নানাবিধ ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হবে। নিত্যপণ্যের ও সেবার দাম বাড়তে থাকবে। মানুষ শীঘ্রই পাহাড়সম অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপ নেয়ার ক্ষমতা হারাবে। ফলে লকডাউনের বিকল্প হাজির করাটাই এই মুহুর্তে অতি জরুরি কর্তব্য। লকডাউন আদতে কোনো সমাধান না। পথশিশু মারুফের বক্তব্য দিয়ে শেষ করতে চাই, লকডাউন ভুয়া।