সংগৃহিত

সংগৃহিত

অ ও আ

পর্ব ৩

মোহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সল

প্রকাশিত : জুলাই ২৮, ২০১৮

সময় এক হাস্যকর খেচর, বন্দিত্বের মুক্তি যখন শিকল ভেঙে ফেলে তখন সময় মুহূর্তে থমকে দাঁড়ায়। বেঁচে থাকার সময়গুলোতে আমরা সবাই যাত্রী, নোঙর তোলা নৌকার যাত্রী। আর, সেখানে ভালোবাসা হলো অনেকটা তেপান্তের নির্ঘুম জানালার মত, যেখানে শীতল হাওয়া ফুসকুড়ি হয়ে ফোঁটে! জীবনের কিছু চরিত্র আছে, যা তাদের গল্পের ইতি না টেনেই হারিয়ে যায়। কিছু অনুভূতি মানুষকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে, তখন সম্পর্কগুলো ফাঁপা কলসের মতো ঠো-ঠো শব্দে বাজতে থাকে!

 

ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের পাশের গলিতে বেশ সুউচ্চে বেড়ে উঠেছে ‘ইবনে সিনা হসপিটাল’, শংকর। নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে উঠা হসপিটাল বেশ উচ্চমানের, চিকিৎসা ও যাবতীয় আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো অন্যান্য হাসপাতালগুলো থেকে বেশ এগিয়ে। বিশেষ করে গাইনী বিভাগের অধ্যাপক ডা. মেহেরুন্নেসা’র জন্য বেশ লোকসমাগম থাকে শংকর বাসস্ট্যান্ড থেকে খানিক দূরে থাকা এই হাসপাতলটি!

 

ভবনের দো’তলার ২০৪ নম্বর রুমে সামনে বেশ কিছু চেয়ারে পাতা আছে, সেগুলো বসে রয়েছে বেশ কিছু দম্পতি। আবারো কেউ কেউ নিজের অনাগত সন্তান নিয়ে একা চলে এসেছে এখানে! ছিমছাম, চুপচাপ পরিবেশের মাঝেও কেমন জানি এক অস্থিরতা কাজ করছিলো তখন। গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ নাম-ডাক থাকায় উনার কাছে রোগীর সিরিয়াল পাওয়া বেশ সময়সাপেক্ষের ব্যাপার। সপ্তাহের শেষদিনে পুরো এক সপ্তাহের রোগী দেখার সিডিউল নিয়ে নেন তিনি, তাই সপ্তাহের শেষদিনে বুকিং কাউন্টারে ‘ডিজিটাল ফোন ভিড়’ লেগে থাকে! বুকিং কাউন্টারে যখন ফোন করা হয় রোগীর সিরিয়াল দেওয়ার জন্য, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে জবাব দেয় – “আসসালামু আলাইকুম, ইবনে সিনা স্পেশালাইড হসপিটাল থেকে বলছি। আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”

 

“ডা. মেহেরুন্নেসা ম্যাডামের একটি সিরিয়াল চাচ্ছিলাম, কখন আসবো?” শুভ্র জবাব দিলো।

 

“তার আগে রোগীর নাম, বয়স, টেলিফোন নম্বর ও রোগীর সাথে কে আসবে বা আপনার সাথে রোগীর সম্পর্ক কি – এই গুটিকয়েক বিষয়গুলো লাগবে, স্যার।” অপর প্রান্ত থেকে মধ্যয়সী লোকটি জবাব দিলো।

 

“এতো বিস্তারিত তথ্য শুধু রোগী দেখানোর জন্য, একটু বেশি কিছু হয়ে যাচ্ছে না আপনাদের আবদার!”

 

“দুঃখিত স্যার, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে আমাদের নিদির্ষ্ট কোনো উৎফুল্লতা নেই। কিন্তু, পরিচালনা কমিটি আমাদেরকে ঠিক এগুলোর উপর যথেষ্ট কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।” সাবলীল কন্ঠে জবাব দিলো লোকটি।

 

“ঠিক আছে। লিখুন।”

 

“জ্বি স্যার, আপনি বলুন।”

 

“নামঃ শুভ্রা

 

বয়সঃ ২৫

 

টেলিফোন নম্বর হিসেবে বর্তমানের কলটিকে সংগ্রহে রাখুন।

 

.....সিরিয়াল কত নম্বরে এসেছে আর কখন আসবো?” উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করলো শুভ্র।

 

“স্যার, আপনার স্ত্রীর সিরিয়াল ৬ এবং আপনি আগামী শনিবার সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা-আটটা’র মাঝে চলে আসবেন।

 

.....আর স্যার, আপনার স্ত্রী মিসেস শুভ্রার সাথে আপনি নিজে আসছেন, রাইট স্যার? তবে, আপনার নামটি বললে রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করে দিতাম, অনুগ্রহ করে আপনার নামটি স্যার!”

 

“শুভ্র।”

 

“চমৎকার নাম আপনার স্যার।

 

......আপনাদের নামের মতো আপনাদের সম্পর্কও বিশ্বস্ত ও মজবুত হোক স্যার।”

 

“ধন্যবাদ।”

 

“আপনাকেও ধন্যবাদ স্যার আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য। আপনার স্ত্রী ও আপনার অনাগত সন্তানের সুস্থতা কামনা করছি।

 

....আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

 

“ধন্যবাদ।

 

ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”

 

নিরবিচ্ছিন্ন কথাগুলোর মাঝে যেন খেই হারিয়ে ফেলেছিলো শুভ্র। প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন যেন তার জবানকে রুদ্ধ করে ফেলেছিলো, সত্য-মিথ্যে আর সাদা-কালোর মাঝে জীবন যে সীমাবদ্ধ নয় তা যেন নিয়তি সেটি বেশ উল্লেখযোগ্য আকারে বুঝিয়ে দিচ্ছে। রুদ্ধ সময়ের বন্ধনে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে হয়ে সহসা এক আওয়াজে ফিরে আসে শুভ্র। পিছন থেকে আওয়াজ আসে – “এই, কার ফোন ছিলো?”

 

“চেম্বার থেকে ফোন এসেছিলো, দোলা।”

 

“সব ঠিক আছে তো, শুভ্র?”

 

“কেনো...? সব কি ঠিক থাকার কথা নয়, দোলা ম্যাডাম?”

 

“আরেহহ বাপরে.....!

 

স্যারের দেখা যায় এক রোমান্সের মুড চলে এসেছে। ঢং কম করো, খেয়ে আসো। .....আর হ্যাঁ, সামনের শনিবারে কিন্তু ইতিকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে। তাড়াতাড়ি চলে এসো কিন্তু!”

 

“আমার জরুরি কাজ আছে শনিবারে, আমি থাকতে পারছি না।

 

.....দুঃখিত!” মৃদু স্বরে বললো শুভ্র।

 

“কি এমন কাজ পড়ে গেছে যে তুমি তোমার শালিকার বিয়ে ব্যাপারে কথা বলতে আসতে পারবে না? নতুন নতুন ঢং দেখিও না আমায়, তুমি আসছো ব্যস!”

 

“আমি একবার না করেছি মানে না! বাংলা ভাষা বুঝতে কি কষ্ট হচ্ছে! আসতে পারবো না মানে আসতে পারবো না। কথা শেষ!” জোরালো কণ্ঠে উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলো শুভ্র।

 

শুভ্রের আচমকা এমন কর্কশ ব্যবহারে ঘরের পরিস্থিতি শীতল হয়ে গিয়েছে, দোলা কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে আসলো। সেখান থেকে ঠুং-ঠাং আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো, দোলাকে মানাতে হবে এই চিন্তা নিয়ে শুভ্র পা বাড়ানো মাত্র পকেটের মোবাইল ফোন ভাইব্রেট করে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পায় পরিচিত নম্বর থেকে ফোন এসেছে, ফোন রিসিভ করে কিছুক্ষণ পর বললো –

 

“হুম্ম...! ওয়া আলাইকুমুস সালাম।

 

.....কোন খোঁজ পেয়েছো ওর?”

 

“না স্যার, এখনো খোঁজ পাই নি। তবে স্যার, খুব শীঘ্র খবর পেয়ে যাবো।”

 

“খুব শীঘ্র বলতে?”

 

“দুঃখিত স্যার।

 

......ম্যাক্স ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘন্টা, স্যার!”

 

“কিভাবে? সোর্স কি বলেছে?

 

“স্যার, খবর পেয়েছি যে ঐ শুয়ার**** পরবর্তী শিকার ধরার জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করেছে। নিজের খোলস ছেড়ে দেশে এসেছে নতুন শিকার ধরতে, ইনশাআল্লাহ এইবার ঐ মাদার**** ছাড়বো না স্যার।”

 

“Keep me Updated. Got it?”

 

“জ্বি স্যার, অবশ্যই।”

 

“তোমার পেমেন্ট তোমার অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।”

 

“ধন্যবাদ স্যার। আসসালামু আলাইকুম স্যার।

 

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”

 

 

(চলবে)