আগৈলঝাড়ায় দুশো ৪০ বছরের ঐতিহ্য মার্বেল মেলা

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৫, ২০১৯

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে দুশো ৪০ বছরের ঐতিহ্য মার্বেল খেলা। এ খেলা চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। নানা বয়সের হাজারো নারী-পুরুষ পৌষ সংক্রান্তির মেলায় এ অংশ নেয়।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান চন্দ্র বিশ্বাস ও উপদেষ্টা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানী রায় গোসাই এ মেলার উদ্ভব সম্পর্কে জানান, “এ গ্রামে ছয় বছর বয়সী সোনাই চাঁদ নামে এক মেয়ের বিয়ের বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর সোনাই শ্বশুরবাড়িতে একটি নিমগাছের নিচে মহাদেবের আরাধনা ও পূজা অর্চনা শুরু করে। সাধনার মার্গে সিদ্ধ হয়ে তার অলৌকিক কর্মকাণ্ড এলাকা ছাপিয়ে বাইরেও প্রচার পায়।”

তারা আরো জানান, সোনাইয়ের জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির’ স্থাপন করা হয়। সোনাইয়ের মৃত্যুর পরেও তার স্থাপিত মন্দির আঙিনায় চলে নাম সংকীর্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে ওই মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।

প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন নাম সংকীর্তন ও গোসাঁই নবান্ন মহাউৎসবের মাধ্যমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রায় আড়াইশো বছর ধরে। এ উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মারবেল খেলার মেলা। এ খেলা সম্পর্কে স্থানীয়রা জানায়, শীতকালে মাঠঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্বপুরুষেরা মেলার এ দিনে মারবেল খেলার প্রচলন শুরু করেন, যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে এখন গ্রামীণ ঐতিহ্যের মারবেল খেলা ধরে রেখেছে। এ দিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে কয়েকদিন থাকে উৎসবের আমেজ।

স্থানীয়রা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এই মার্বেল খেলায় আমন্ত্রণ জানান। প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়, স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে গ্রামটি থাকে লোকারণ্য। বাড়ি বাড়ি চলে চিড়া, মুড়ি, পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম। সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্দির এলাকার প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মারবেল খেলার আসর বসেছে।

থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) নকিব আকরাম জানান, মেলাতে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পুলিশের নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।