আত্মহত্যা প্রসঙ্গ

মোরশেদ হাসান

প্রকাশিত : নভেম্বর ২০, ২০১৮

আত্মহত্যায় রোমান্টিসিজম আরোপ করার চেষ্টা করে অনেকে। এটাকে ওয়ারথার প্রভাব বলে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এর ভয়াবহ নেতিবাচক দিক আছে। যারা স্যুইসাইডের মধ্যে রোমান্টিসিজম বা মহত্ব দেখে, তারা জানে না সমাজের একটি বড় অংশের মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে আছে। আত্মহত্যা সুস্পষ্টভাবে মেন্টাল ডিজিজ। প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যায় মারা যায়। মানুষ যতগুলো ডিজিজে মারা যায় তার মধ্যে স্যুইসাইড আছে তের নাম্বারে। কিশোর-কিশোরী থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে আত্মহত্যা আছে এক নম্বরে। স্যরি, এটি হালকাভাবে দেখার বিষয় নয়।

কেউ আত্মহত্যা করতে চায় বা আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে আছে এটা আশেপাশের কেউ যদি বুঝতে পারে তার তৎক্ষণাত দায়িত্ব হচ্ছে, অন্য সবাইকে জানানো এবং মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। আত্মহত্যার অ্যাটেমপ্ট নিয়ে বেঁচে যাওয়ারা পুনরায় আত্মহত্যা করতে গেছে, এমন রেকর্ড খুব কম। জীবনে খারাপ সময় বা চরম খারাপ সময় সব মানুষেরই যায়। নিজেকে শেষ করে দেয়া বা আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় উঁকি দেয়। কিন্তু আত্মহত্যা সবাই করে না।

প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরি হারানো বা না পাওয়া, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা স্পর্শকাতর মানুষকে আত্মহত্যার দিকে তাড়িত করে। অনেকে আবার শারীরিক সক্ষমতার অভাবে বা সাহসের অভাবে আত্মহত্যায় অন্যের সাহায্য নেন, একে বলে ইউথানসিয়া। অনেকের ধারণা, নারীরা বেশি আত্মহত্যা করে। কিন্তু পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে চার গুণ বেশি।

যারা স্যুইসাইডপ্রবণ তাদের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার যার একটি উপাদান সেরোটনিন তা কম থাকে। মানসিক রোগ বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার— সিজোফ্রেনিয়া, ট্রমা উত্তর স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার থেকে অনেকে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে।

প্রেমিক-প্রেমিকার মৃত্যুতে আত্মহত্যার কিছু দিক আছে। এসময়টায় পৃথিবীকে অসহনীয় লাগে। মৃত্যুর হীমশীতল স্পর্শই তখন পরম কাম্য মনে হয়। এটাই ডেঞ্জারাস পিরিয়ড। এই পিরিয়ডটি খুবই সাময়িক কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে প্রেমাস্পদের সঙ্গে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মিলন চান। সমস্যা হলো ধর্মে আস্থা থাকলে এ ধরনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রেমাস্পদকে পাওয়া যায় না, বরং কঠিন শাস্তির বিধানের কথা বলা হয়েছে। আর ধর্মে যারা বিশ্বাস করে না তাদের কাছে মৃত্যুর পরে তো কোনো জীবনই নেই। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সেখানেও প্রেমাস্পদকে পাওয়ার উপায় নেই। উভয় দিকেই সংকট।

পরিসংখ্যান বলছে, ধার্মিক হলে আত্মহত্যার ঝুঁকি কমে যায়। পৃথিবীর কোনো ধর্মই স্যুইসাইডকে উৎসাহিত করে না। ধর্মে আত্মহত্যা মহাপাপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, নিজেকে ভালোবাসো, আত্মহত্যা থেকে দূরে থাকো। প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। ল্যাটিন স্যুই সেইডেয়ার থেকে স্যুইসাইড শব্দটি এসেছে যাকে প্রতিরোধ করা সমগ্র মানব সমাজের দায়িত্ব। রূপক অর্থে এটি এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। ক্যানসার রোগীরাও একদিন বেশি বাঁচার জন্য লড়াই করে, ক্যান্সার রোগীর আত্মহত্যার খবর শুনবে না; শুনবে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মানুষটির। তবে তিনিও অসুস্থ, মানসিকভাবে। সমাজের দায়িত্ববানদের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো।