আদিম

রহস্যকাহিনি ৪

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : মে ১৯, ২০১৮

অনেক ভেবেচিন্তে ফোন করলেন আমজাদ হোসেনকে। গোয়েন্দা বিভাগই দেখুক ব্যাপারটা।
আচ্ছা উঠি। বেরিয়ে এলেন আমজাদ হোসেন।
হাওয়া কেটে এগিয়ে চলেছে গাড়ি। ইউনুস মোল্লার বাড়িটা ঘুরে আসা যায়। বাড়ির কাজের লোকদের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। একটু সময়েই পৌঁছে গেলেন তিনি। অন্ধকার ধরে এসেছে এরই মধ্যে। চারদিক ধূসর অন্ধকার। সুন্দর ঝকঝকে একফালি চাঁদ আকাশে। পাতলা একটা মেঘের আবরণ আছে অবশ্যি। শুকনো হাওয়া দিচ্ছে থেকে থেকে শিরশির করে। গেটের একপাশে উঁচু একটা গাছ। কি গাছ চিনলেন না তিনি। অন্ধকার ঝুলে আছে তার ডালপালায়। পুলিশ দেয়া হয়েছে গেটে। এগিয়ে গেলেন আমজাদ হোসেন। স্যালুট ঠুকল গেট পাহারায় পুলিশ দুজন। সেদিকে ভুরুক্ষেপ না করে বড় বড় পা ফেলে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। কোথাও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এক ধরনের রহস্যময়তা ঘিরে আছে বাড়িটা। মৃত্যু-বাড়ির আলাদা এক রকম গন্ধ থাকে। বাতাসে সে গন্ধটা ছড়িয়ে ভেসে বেড়ায় বেশ কিছু দিন। সকলেই এ গন্ধটা পায় না। যে পাবার চেষ্টা করে, সে-ই পায়। ভেতর থেকে অনুভব করতে হয়। আর গন্ধটা উঠে আসে অনুভবের ভেতর দিয়েই। এই মুহূর্তে ওই গন্ধটা পাচ্ছেন আমজাদ হোসেন। দারুণ একটা মাদকতা আছে গন্ধটার ভেতর।

সিঁড়ির মুখেই দেখা হলো রাজুর সঙ্গে। এ বাড়ির কাজের লোক।
ইউনুস সাহেবের ছেলে কোথায় ?
ওপরে।
ওপরে চলো।
গোয়েন্দা অফিসার ওপরে উঠে এলেন। পেছনে রাজু।
আপনে পুলিশের লোক?
হ্যাঁ।
বেজায় কানতেছে ছেলেটা।
কানতে দ্যাও। কান্নাকাটি করলে শরীর ভালো থাকে। তোমার দেশের বাড়ি কোথায় রাজু?
যশোর জেলায় সার। আফার বাপের বাড়ির লোক আমি। ওনাদের বাড়িতেই তো আগে ছিলাম। বিয়ের পর আফার সাথে এখানে আসি।

পর্দা সরিয়ে ভেতরের কোণার দিককার একটা ঘরে ঢুকল রাজু। পেছনে আমজাদ হোসেন। খাটের ওপর পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে বছর সাত-আটের এক ছেলে। দারুণ ফুটফুটে দেখতে। দৃশ্যটা বড় বেশি হাহাকারের। পাথরচাপা কষ্ট টের পেলেন আমজাদ সাহেব তার বুকের ভেতর। বুকের মধ্যে কোথায় যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। বাচ্চাটাকে সান্ত্বনা দেবার মতো যুৎসই কোনও ভাষা তিনি খুঁজে পেলেন না। কী-ই বা সান্ত্বনা দেবেন আর। ওপথে গেলেন না তিনি। তবে মনটা একটু যেন খচখচ করতে লাগল।
কি নাম তোমার বাবা ?
ছেলেটা তাকাল। ওর চোখ দুটো জবা ফুলের মতো টকটকে লাল, খেয়াল করলেন তিনি। এই এতটুকু বয়েসে মা-বাবা হারিয়ে কি করবে ও এখন? কি আর করবে, মরে যাবে। নিজেকে বোঝাতে লাগলেন তিনি। বেঁচে থাকার তো আর কোনও দরকার নেই। শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেয়া। কি এক টানে একটা হাত রাখলেন ছেলেটার কাঁধে। ঠিক তেমন করে যেমনটা তিনি রাখতেন তার নিজের যদি কোনও ছেলে থাকত। এক মাথা ঘন কোকড়ানো কালো চুল। ভারি মিষ্টি দেখতে কচি মুখখানা। তিনি জিগেশ করলেন, আব্বু যখন খুন হন কোথায় ছিলে তুমি?
ছেলেটা এতক্ষণ হাতের চেটো দিয়ে চোখমুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে বসেছে। কেমন বয়স্ক মানুষের মতো দেখাচ্ছে এখন তাকে। ভেজা গলায় বেশ কিছুক্ষণ পর জবাব দিল সে, এ ঘরে।
কি করছিলে?
ঘুমোচ্ছিলাম।
আমজাদ হোসেন বেশ ভালো করেই জানেন মাঝরাতে মানুষজন বিশেষ করে এই বাচ্চাছেলেটা কি করতে পারে। তবুও বোকার মতো জিগেশ করলেন তিনি। কেননা তার মনে ক্ষীণ একটা সন্দেহ, খুনটা হয় রাত এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে। লাশের পরনে ছিল স্যুট। তার মানে ইউনুস মোল্লা বাইরে থেকে ফিরতেই ঘটনাটা ঘটে।
উঠলে কখন?
গুলির শব্দে।
তোমার আম্মু কোথায় তখন?
জানি না।
জেগে উঠলে, তারপর?
ভয় পেয়ে আমি নিচে নেমে এলাম।
কি দেখলে?
আব্বু মরে গেছে। রক্ত। কেঁদে উঠলো ছেলেটি।

বেরিয়ে এলেন আমজাদ হোসেন। ছেলেটি কাঁদছে কাঁদুক। বিরক্ত করতে চাইলেন না তিনি। নিচে নেমে সিঁড়ি ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন।

চলবে