আদিম

রহস্যকাহিনি ৫

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : মে ২০, ২০১৮

দরজায় তালা মারা। নিচে তার জন্যে একজন সেন্ট্রি দাঁড়িয়ে ছিল। তার দিকে হাত ইশারা করলেন তিনি। লোকটা এসে তালা খুলে দিল। ভেতরে ঢুকে পায়চারি করতে লাগলেন আমজাদ হোসেন। বুক সেলফের কাছটায় দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়তে চেষ্টা করলেন বইয়ের নামগুলো। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন। উঁচু পাচিল দিয়ে ঘেরাও করা বাড়িটা। অনেক গাছপালা ঘেরা পাচিলের ভেতরে। ঘুরে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গেলেন রাজুর দিকে। তারপর মুহূর্তে রাজুর কাঁধ চেপে ধরে তাকে দেয়ালের গায়ে ঠেসে ধরলেন।
ভকচকিয়ে গেল রাজু। বড় বড় চোখ করে চেয়ে রইলো আমজাদ হোসেনের দিকে। ভয়ের চিহ্ন চোখমুখে।
ঘটনা সব খুলে বলো রাজু। না হলে ফেঁসে যাবা। কোনও আপিল হবে না, নো আপিল।
আমি কিছু জানিনা সার, দিব্যি কইছি।
রাখ শালা দিব্যি। দিব্যি তোর গুয়ার ভেতর দিয়ে দেব। ভালোয় ভালোয় সব বল, না হলে পুলিশের মাইর কি জিনিস টের তো এখনও পাস নাই, পুলিশে দিয়ে দেব। বুঝবি ঠ্যালা।
রাজু ঢোক গিলল।
তোর কিচ্ছু হবে না রাজু, তুই শুধু বল ম্যাডাম কোথায়। লুকিয়ে আর কি লাভ বল, আমি সবই জেনে গেছি। এখন শুধু আসল মালটাকে ধরতে পারলে খেইল খতম।
আমি জানিনা, আল্লার কসম সার। রাজুর চোখমুখে আটকে পড়া জন্তুর মতো ভয় দাপাদাপি করে।
আবার কসম কাটিস, মিথ্যে বলিস না আর রাজু। আল্লার নাম নিয়ে মিথ্যে বলতে নেই। বলে ফেল।
রাজু কিছু বলে না। চেয়ে থাকে। চোখমুখ অস্বাভাবিক ফ্যাকাসে। চোখের পাতা স্থির। পলক পড়ে না।
রাত হয়ে যাচেছ রাজু। খামোখা সময় নষ্ট করছো আমার। চটপট মুখ খোল, ঝামেলা করিস না।
বিশ্বাস করেন।
আগ বাড়িয়ে কেন নিজের জানটা খোয়াবি রে। একটা জীবনের অনেক মূল্য। আমার মনে হয় বলে দেয়ায় ভালো। গায়ে পড়ে কেউ ফ্যাসাদে জড়ায় নাকি বোকা।
মুখ খুলল রাজু। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বলল, মিনহাজ সাহেবের সঙ্গে আফার অনেক দিনের ভাব-ভালোবাসা। দুলাভাই ব্যবসার কাজে বাইরে গেলে ফোন করে আফা তাকে এ বাড়িতে ডেকে আনতো। মিতুলকে নিয়ে আমি বাইরে বেড়াতে চলে যেতাম। মাঝে মাঝে আপায় যেতেন মিনহাজ সাহেবের বাড়ি।
স্টপ ! ধমকে ওঠেন আমজাদ হোসেন।
নিরীহ চোখে চেয়ে থাকে রাজু।
এ বাড়ির ফোনটা কোথায়?
আসেন, দেখিয়ে দিচ্ছি।

এত রাত্রে অবিনাশকে ডাকা হয়তো ঠিক হবে না। তবু ওকে দরকার হতে পারে। আসল কাজ আজ রাতেই শেষ করতে হবে। এতক্ষণে কোথায় পালিয়ে গিয়ে না থাকলে হয়। আর পালিয়ে গিয়ে কত দূর যাবে সেটাও একটা ব্যাপার।
ডায়াল করলেন তিনি।
হ্যালো অবিনাশ?
কে বলছেন?
আমজাদ হোসেন স্পিকিং।
কি ব্যাপার সার?
ব্যস্ত নাকি?
না সার।
আসতে পারবা একটু, দরকার ছিল।
এখুনি আসছি সার।
ইউনুস মোল্লার বাড়িতে চলে আসো। ওকে।

রিসিভার রেখে ফিরলেন আমজাদ হোসেন। রাজু পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। কোথাও নড়েনি। তিনি জিগেশ করলেন, মিনহাজ সাহেবের বাড়ি চেন ?
জ্বি না সার।
আবার ঘোরপ্যাঁচ দিচ্ছ। বিরক্ত হলেন তিনি।
হাল ছেড়ে দেয় রাজু। চিনি সার।
গুড।
বারান্দায় বেতের চেয়ারে এসে বসলেন আমজাদ হোসেন। বেশ ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। উঠোন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কি যেন একটা গাছ। উঁচু, ঝাকড়ানো ডালপালা। অন্ধকারে ঠিক চেনা যায় না।
ওটা কি গাছ রাজু?
আমড়া গাছ সার।
আমড়া ধরে?
খু-উ-ব।

চলবে