আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে

আতিফ অনিক

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৬, ২০১৮

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব এখন এক অমীমাংসীত রূপ পেয়েছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে আওয়ামী সরকারের অধীনে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ এর ভেতর দিয়ে ধনীদের জন্যে দেশে যতটুকু গণতন্ত্র ছিল, তাও হুমকির মুখে পড়েছে। দেশ-বিদেশে আওয়ামী লীগ আজ প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষকে কোনও ধরনের সুযোগ দিচ্ছে না। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ইউপি, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জনগণের ভেতরে আতংক তৈরি করেছে। বুর্জোয়া শ্রেণির নির্বাচন করার নূন্যতম যে অধিকার ছিল সেটাও আওয়ামী লীগ সরকার হরণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে মতপ্রকাশের সকল স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার  বর্তমান মহাজোট সরকার হরণ করেছে। এ রকম একটি অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচন করতে চাচ্ছে সরকার।
এই যে শাসকশ্রেণি ও তার বৈদেশিক প্রভুদের `অবাধ, নিরপেক্ষ,শান্তিপূর্ণ` নির্বাচনের ফর্মুলা, তা কি শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তসহ ব্যাপক সাধারণ জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে, নাকি জনগণের শত্রু সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ, আমলা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে?
বিগত ৪৫ বছর ধরে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, তা দলীয় সরকারের অধীনেই হোক বা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হোক, তাতে রাষ্ট্র ক্ষমতার বড় ভাগটা জনগণের শত্রু শ্রেণির কোনও না কোনও গোষ্ঠী দখল করছে। অর্থাৎ, তারা হলো সাম্রাজ্যবাদ-ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দালাল আমলা-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ার বৃহৎ অংশ-দুর্নীতিবাজ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটকারী, কমিশনভোগী, কালো টাকার মালিক ঋণ খেলাপী, সামরিক শাসনের হোতা, সন্ত্রাসী গডফাদার, কালোবাজারি, ভূমিদস্যূ, মাদক ব্যবসায়ী, নারী পাচারকারী, ধর্মব্যবসায়ী, `৭১-যুদ্ধাপরাধী, রক্ষীবাহিনী-সেনাবাহিনী-র‌্যাব গণহত্যাকারী এবং গুমকারী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ সৃষ্টিকারী ও রক্ষাকারী গডফাদার, মানবাধিকার বিরোধী, পিরবাদী, জঙ্গিবাদী, সংখ্যালঘু জাতি সত্ত্বার জমি-সম্পদ দখলকারী এবং শ্রমিক-কৃষক বিরোধী নির্মম শোষক। যেমন, গার্মেন্টস মালিক।
এসব গণশত্রুরাই নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত শ্রেণি, আদিবাসী জনগণকে শোষণ ও শাসন করে। তাদের জমি-সম্পদ দখল করে। তারা গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি, তেল, কৃষি উপকরণ ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে কৃষককে সর্বশান্ত করে। শ্রমিক-কৃষক দরিদ্র জনগণেরর জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত করে তোলে। তারা ও তাদের নিজস্ব লোকেরা অল্প দিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। তারা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করে। তারা বিদেশি পণ্য দিয়ে দেশ ছেয়ে ফেলেছে। জাতীয় শিল্প ধ্বংস করে বিদেশ নির্ভর শিল্প গড়ে তুলছে। দেশের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিরাপত্তা প্রশ্নে দাসত্বমূলক চুক্তি করছে। তারা উন্নয়নের নামে কৃষি জমি ও পরিবেশ ধ্বংস করছে। শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একদিকে মধ্যযুগীয় প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা-সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখেছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী অপসংস্কৃতি আমদানি করে তরুণ-তরুণীদেরকে কলুষিত করছে। তরুণ প্রজন্মকে মাদকাসক্ত করে বিপথগামী করছে।
এসব গণবিরোধী কর্মসূচির বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামকে প্রতিটি নির্বাচিত সরকারই দমন-পীড়ন চালিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। সন্ত্রাস দমনের নামে বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতন করছে। প্রতিটি সরকারই গণবিরোধী নিত্যনতুন আইন ও বাহিনী বানিয়েছে। বর্তমানের র‌্যাব, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশ, অতীতের রক্ষীবাহিনীর আধুনিক সংস্করণ।
তাই শ্রমিক-কৃষক-আদিবাসী ও মধ্যবিত্ত জনগণকে বুর্জোয়া ফর্মুলার বিপরীতে তাদের নিজ নিজ শ্রেণি পেশার স্বার্থের অবস্থান থেকে, সর্বোপরি তাদের নিজেদের রাষ্ট্র ক্ষমতার অবস্থান থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত নির্ধারণ করে তার ভিত্তিতে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। জনগনের স্বার্থের গ্যারান্টিপূর্ণ শর্তারোপ করতে হবে। যাতে গণশত্রু শাসক শ্রেণির স্বরূপ উন্মোচন করা যায়। গণদাবি পূরণের অনুপস্থিতিতে দেশ ও জনগণের শত্রুদের মধ্যকার ক্ষমতা ভাগাভাগির এই বুর্জোয়া প্রহসনমূলক নির্বাচন বয়কট করা জনগনের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে।