‘ইন্ডাস্ট্রিকে কোন ভাইরাল প্রোডাকশন দেইনি’

সাক্ষাৎকার

রিফাহ সানজিদা

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ০৯, ২০১৮

আমাদের এবারের গপসপ ,তরুণ ইন্ডি-ফিল্মমেকার আবদুল্লাহ মাহফুজ অভির সাথে । কাজ করেছেন সুন্দরবন আন্দোলন, সুবোধসহ চলমান আরো লড়াকু বিষয়ে।
তাঁর কাছে তথাকথিত ইন্ডাস্ট্রির বাইরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকিং একটা যুদ্ধ। তাঁর ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখাচ্ছেন বাস্তবতার আঙ্গিকে গল্পের বাইরের বৃহৎ গল্প।
তাঁর কাছে নিজের নির্মিত শর্টফিল্মগুলো , তাঁর লড়াই-সংগ্রাম-দর্শনের প্রতিচ্ছবি। কখনো এটা প্রকাশ হয় প্রচ্ছন্ন ভাবে কখনো বা উঠে আসে সরাসরি আরো স্পষ্ট হয়ে।
ক্যামেরা হাতে তাঁর লড়াই এর সেসব কথা জানতে চেয়েছেন রিফাহ সানজিদা 


অভি, আপনার ফিল্ম-মেকিং এর নেশাটা নিশ্চয় একদিনে নয়, কিভাবে শুরু যদি জানতে চাই-
অভিঃ শুরুটা আসলে অনেক আগে থেকে যখন আমি সিনেমার করবো সেটা নিজেও জানতাম না।
মানে এই নেশার আগে আরেকটা নেশা আছে যাকে ‘প্রি-নেশা’ বলা যেতে পারে।
ফিল্মের দুনিয়ায়`তো আমরা একটি সিনেমা নির্মাণকে ৩টি ভাগে ফেলে থাকি, মোটা দাগে - প্রি প্রোডাকশন প্রোডাকশন এবং পোস্ট প্রোডাকশন।
কোন গল্প শুট করার আগে যাবতীয় কাজকে আমরা প্রি প্রোডাকশনে ফেলি। সে রকম ভাবে এই সিনেমা বানানোর বিষয়েও আমি প্রি-নেশা হিসেবে গল্প বলতে চেয়েছি।
আমি আসলে বুঝতে পেরেছি আমি কল্পনা করতে ভালোবাসি, গল্প বলতে ভালোবাসি। দেখা গেছে চলতি পথে আমার দেখা কোন একটা দৃশ্যের সাথে আমি কল্পনায় আরো অসংখ্য দৃশ্য যুক্ত করে ফেলি। যে দৃশ্যগুলো একটি গল্প তৈরি করে ফেলে। আর সেইসব গল্পকে আমার দেখাতে ইচ্ছা করে।
এই ইচ্ছাটাই নির্মাণের দিকে নিয়ে এসেছে। ক্রমশ এই আগ্রহ এক জটিল জালের ভেতর আটকে ফেলছে, এবং শেষ পর্যন্ত নানা যন্ত্রণা সয়েও আমি এই নির্মাণটাই করে যেতে চাই ,যা বলবো বলে এসেছি এখানে।

 

 

নিজের প্রথম কাজ যেটাকে ধরবেন-
প্রথম যেদিন ফিল্মমেকার হওয়ার চিন্তা থেকে কারো উপর ক্যামেরা তাক করেছি সেটাই তো আমার প্রথম কাজ।
সেই অর্থে প্রথম কাজটির কোন নাম নেই। এক বন্ধুর মোবাইল ফোন এর ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করেছিলাম এবং অন্য আরেকটি মোবাইল দিয়ে মিউজিক বাজিয়ে ভিডিওর সাথে লাইভ সাউন্ড নিয়ে ,এক বন্ধুকে মডেল বানিয়ে মাঠের ভেতর হাটিয়ে ছিলাম। ওটা মনে হয় প্রথম কাজ।  
তখন আসলে এডিটিংয়ের বিষয়টা অনেক দূরে ছিলো এমনকি ফোনে এডিট করার বিষয়টিও...।
একটু ভেবে চিন্তে সাহস করে হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসে একটা ছোট নাটক বানিয়ে ছিলাম "ডিভি লটারী" নামে।
ওটা ২০০৭ সালের দিকে হবে। ওই কাজটাকে প্রথম কাজ বলা যেতে পারে। আসলে আমার গল্পে অনেক রকম প্রথম আছে।

 

 

আপনার প্রথম দিকের শর্টফিল্মগুলোর নাম আর বিষয় বেশ ইন্টারেস্টিং...
অভিঃ ইন্টারেস্টিং কিনা জানি না। তবে নাম গুলো আমার গল্পের কারণেই এমন। ‘একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, ‘ভাঙ্গা ডানার গল্প’, ‘জার্নি বাই ডাস্ট’, ‘বিলবোর্ড লাভ’- এরকম আরো আছে।
এ মূহূর্তে সব ক`টা নাম মনেও নেই ( হাসলেন তিনি) 

 

ফেসবুকে আপনার নিজের একটা গ্রুপ আছে, যেখানে হতাশা চর্চাকে আপনারা শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এ নামে একটা নাটক ও তৈরী হয়েছিলো বর্তমান সময়ের তরুণ আর্টিস্টদের নিয়ে-
অভিঃ "হতাশা চর্চা কেন্দ্র" নিয়ে বলছেন ? হ্যাঁ, ওটা এখনো মুক্তিই পায়নি। এখানে ফিকশনটির যে নাম রাখা হয়েছে গল্পটি ঠিক তার বিপরীত।

 


আপনার ডকুমেন্টারী ধরণের কাজ আছে অনেক, সুন্দরবন আন্দোলন নিয়ে আপনি বেশ কিছু কাজ করেছেন, সেটা শুনতে চাই-
অভিঃ সুন্দরবন আন্দোলন নিয়ে কিছু কাজ করার চেস্টা করেছি। কারণ, খুব কাছ থেকে এই আন্দোলনকে দেখার আর বোঝার সুযোগ পেয়েছি।
৭ বছর আগে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের প্রথম থেকেই দেখে আসছি এর ব্যাপকতা এবং গণ চরিত্রকে। এতো শ্রেণীপেশার মানুষ এর সাথে যুক্ত হয়েছে যে,
সেখান থেকে আমি নিজেও কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ হই। এই আন্দোলনের উপর একটি ডকুফিল্ম বানিয়েছি "রাজপথে বসন্ত" নামে।
৩০ মিনিট দৈঘ্যের্র এই ফিল্মটি মূলত আন্দোলন চলাকালীন ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ কেটে বানানো হয়েছে। আমরা ২০১৬ সাল থেকে এই আন্দোলনের
বিভিন্ন কর্মসূচির উপর ভিডিও করে ফুটেজগুলো জমা করতে থাকি। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ছোট বড় বিভিন্ন কর্মসূচিসহ এক্টিভিস্টদের নানা কার্যক্রম ধারণ করি।
এরপর সংগ্রহিত ফুটেজ থেকে একটি চিত্রনাট্য তৈরি করে ‘রাজপথে বসন্ত’ নামে ডকুফিল্মটি বানাই।
এখনো এর অনলাইন রিলিজ আমরা দিতে পারিনি নানা বাস্তবতার কারনে। তবে দেশে বিদেশে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়েছে।
প্রত্যেকটি প্রদর্শনীই আসলে কোন ব্যক্তি বা কোন সংগঠনের উদ্যোগে হয়েছে। এখনো অনেকে প্রর্দশনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে। 

 



সুবোধের প্রসঙ্গ নিয়ে জিজ্ঞেস করি- একটা গল্প ও আছে এ নিয়ে, আমাকে যেটা বলেছেন খানিকটা?
অভিঃ সুবোধতো একটি গ্রাফিতি চরিত্র। আমি এই চরিত্রটিকে ভর করে একটি শর্টফিল্ম বানিয়েছিলাম- ‘তোর ভাগ্যে কিছু নেই’ নামে।
সুবোধ চরিত্রটি ঢাকার দেয়াল থেকে বিভিন্ন মানুষকে যেমন নাড়া দিয়েছে তেমনি আমাকেও আকৃষ্ট করেছে। সেখান থেকেই আমি একটি শর্টফিল্ম বানাই।
তবে আসলে সুবোধের কাঁধে ভর করে আমি অন্য কোন গল্প বলে গেছি হয়তো। যার সাথে সুবোধ চরিত্রটির কোন সরাসরি যোগ-সাজশই নেই ।  
বলতে পারেন সুবোধকে সামনে রেখে আমি অন্য গান শুনিয়েছি। সেখানে অনেক মানুষের গল্পের প্রতিচ্ছবি আছে। কারো ব্যক্তিগত গল্প আছে, কারো ব্যক্তিগত ক্ষোভ আছে, কারো আশা-আকাঙ্খা নিরাশার কথা আছে, শহরের বিচিত্রসব মুখের গল্প আছে।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে এই সুবোধকে নিয়ে বিচিত্র সব কান্ডও ঘটেছে। সুবোধ শর্টফিল্মটি বানানোর পর কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন আমিই সুবোধ!

 

মানুষ আপনাকেই সুবোধের সাথে জড়াতে থাকে তখন?এবং ব্যাপারটা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়?
অভিঃ হ্যাঁ, আবার কেউ বলেছেন এটা আমার ব্যক্তিগত গল্প। কেউ উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছেন,
"সুবোধ" সন্দেহ করে আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ ( তখন একটা কথা শোনা যেতো সুবোধের আর্টিস্টকে খুজছে পুলিশ)। হাহাহা...।
সে এক বিচিত্র কান্ডকারখানা শুরু হলো। আরো অনেক মজার গল্পের একটি হলো এই সিনেমাটির নাম ছিলো- তোর ভাগ্যে কিছু নেই।
এর ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই। এটা একটা ‘জিরো বাজেটের’ সিনেমা। আমার টিম নিয়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আমরা বানিয়েছি। তো শুরু থেকেই ছিলো নানা বিপত্তি।
ক্যামেরা সার্পোট পাওয়ার কথা ছিলো এক জায়গা থেকে সেটা পাইনি। ফলে হাতের কাছে যা ছিলো তা নিয়েই নেমেছি। পরে একটি ফেস্টিভালে জমা দেই।
সেখানে দুটি ক্যাটাগরি ছিলো- জুরি বোর্ডের রায় আর দর্শক প্রিয়তা রায়। দর্শক ভোটে ৩য় হয়। আর জুরি বোর্ডের রায় তারা ঘোষণা করেননি। 
কিন্তু ঘোষিত ক্যাটাগরির ফলাফলের পুরস্কারটিও আমরা পাইনি । আয়োজকরা শেষ পর্যন্ত পুরষ্কার না দিয়েই সরে পড়ে। বলতে পারেন, এক ধরণের প্রতারিতই হয়েছি আমরা সেখান থেকে।  
এটাও একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিলো। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের টিমের আগে হয়নি।

 

আচ্ছা, ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকিং প্রসঙ্গে আসি, আসলে এটা এই দেশে কতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে এখনো, আপনার মতে?
অভিঃ দেখুন, পুঁজিবাদ এমন একটা সমাজ আপনাকে উপহার দিবে যেখানে সবকিছুই নির্ধারন করে অর্থের উপর।
কে সম্মান পাবে কিংবা পাবে না এ সব কিছুই অর্থ দ্বারা পরিচালিত হতে দেখছি আমরা আমাদের চারিপাশে। খুব প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকেই ঝুকে পরেছে সমাজ।
ফলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকারদের জন্য এই বলয়ের বাইরে থেকে কাজ করাটা যেমন খুব বেশি পরিশ্রমের, তেমনি সামাজিক ভাবেও গ্রহণযোগ্যতা খুব একটা হয়ে উঠছে না।
মর্যাদা, আস্থা এসব কিছুর সাথেই ফাইট দিতে হয়। পরিবার থেকে রাষ্ট্র সবার সাথেই যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠে একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকার। এই জগতে আমরা অনেকেই নিঃসঙ্গ এবং অনেকটা নিরবেই গেরিলার মতো লড়ে যাচ্ছি।
প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে বা ‘সিন্ডিকেটের’ বাইরে গিয়ে কাজ করতে গিয়ে যেমন খুব স্ট্রাগল করতে হয় তেমনি অর্থনৈতিক অনেক ঝক্কি-ঝামেলাও পোহাতে হয়।
ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে যেসব বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠছিলো ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকারদের শক্তি সেখানে এখন পুঁজিওয়ালারা থাবা বসিয়েছে।
যাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে টাকা। শর্টফিল্মকেও এখন বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে...।
যার ফলশ্রুতিতে দেখা যাচ্ছে শর্টফিল্মে আমরা আগে যে চিন্তা, গল্প এবং আর্টের ধার দেখতাম সেখানটায় এখন রাজত্ব করছে বাহ্যিক গ্লামার, যৌন সুড়সুডি, ফালতু ভাঁড়ামো। 
কিন্তু তারপরও কাজ হচ্ছে, হবে। অনেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে চাকচিক্যের জোয়ারে নিজেকে না ভাসিয়ে,তাই এই কিছু মানুষের চেষ্টাটাই এখনো ভালো দিক। 

 

এখন কি নিয়ে কাজ করছেন?
অভিঃ কুমুদিনী হাজং। বিট্রিশদের বিরুদ্ধে কৃষকদের গড়ে তোলা ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলনের আন্দোলনকারীদের ভেতর একমাত্র উনিই বেঁচে আছেন।  
আমাদের ইতিহাসের সুন্দর মুখ। ওনার উপর কিছু কাজ করেছি আরো কিছু শ্যুট বাকি আছে। ওগুলো শেষ করার পরিকল্পনা চলছে। হয়তো জানুয়ারীর শেষে বা ফেব্রুয়ারীতে শুট শেষ করবো। ৩০ মিনিটের একটি ডকুফিল্ম হবে। "ভালোবাসার বাংলাদেশ" ক্যাম্পেইন কন্টেস্টে এটা সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছে।

 

আর সিনেমা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন না? 
অভিঃ স্বপ্ন দেখাবো বলেই তো এসেছি...। সেই সাথে স্বপ্ন দেখাতেও এসেছি। সিনেমার স্বপ্ন জারি আছে।

 

এই যে এত স্ট্রাগল, সেটা নিয়ে কোনো রাগ-ক্ষোভ বা কোন অভিযোগ নেই? এসব নিয়ে যদি জানতে চাই- 

অভিঃ যেখানে অর্থ আছে সেখানে চোর-বাটপার-লম্পটেরও আনাগোনা আছে। এখানেও তাই। তবে দিন দিন এর মাত্রাটা বাড়ছে।  দুঃখটা হচ্ছে- নূন্যতম মোরালিটির চর্চাটা যদি একজন আর্টিস্ট না করেন তাহলে তিনি কিসের আর্টিস্ট?
অথচ এইসব মুখগুলোকেই সামনে ঘুরতে দেখি। তরতর করে বেড়ে উঠতে দেখি। যেটা অনেক তরুণদের জন্য বিপথগামী হওয়ার সিগন্যাল বহন করে। যে তরুণ এসে দেখবে একটা নীতিহীন বাটপার জোচ্চুরি করে, দুই নম্বরি করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্টাবলিস্ট হয়ে যাচ্ছে ( তথাকথিত সামাজিক স্টাবলিস্টশমেন্ট)
অথচ সে সুযোগ পাচ্ছে না তখনতো ওই পথেই হাঁটতে উৎসাহী হবে ,তাই না ?
কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক না দেয়া, আর্টিস্টকে যোগ্য সম্মান না দেয়া এমন অনেক অসংখ্য বঞ্চনার গল্পতো বাড়ছেই।
আমি মনে করি যার নূন্যতম আদর্শবোধ নেই, নীতি নেই, দর্শন নেই শুধু মাত্র এমন মিডিয়ার ঝলকানি আর ‘ফেম’ যে উপভোগ করতে এসেছে সেতো আর্টিস্ট না।  
এরা হচ্ছে লুম্পেন। এই লুম্পেনগুলোকে জন সম্মুক্ষে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মানুষের খুব অভাব।

 

তরুণ ফিল্মমেকাদের জন্য আপনার কিছু বলার আছে? যারা স্ট্রাগল করছে? 

অভি: যারা আমরা মতো স্ট্রাগল করছেন তাদের তো আসলে বলার কিছু নেই। কারণ, যুদ্ধের ময়দানে আছেন তাঁরাও। সুতরাং, লড়াইয়ের রণ-কৌশল যে যার আঙ্গিকে বের করে নেবেন। তবে একটা কথা হচ্ছে আর্টিস্ট হিসেবে নীতিবোধটা যেন ঝরে না যায়। সেই চর্চাটা করতে হবে। এই চর্চাটা খুব কষ্টের। কিন্তু, একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়িয়ে এই মূল্যবোধের চর্চাটা বাড়াতে হবে। 

 

এতক্ষণ তো শুধু স্ট্রাগল নিয়ে অনেক কথা হলো, এবার ,আপনার একটি সফলতার গল্প শোনান-
উত্তর: আমার কোন সফলতার গল্প নাই। আমার আছে শুধু সংগ্রামের গল্প। আমার পুরোটাই সংগ্রাম। আমি কোন আলোচিত ফিল্ম বানাইনি এখনো।
আমি ইন্ডাস্ট্রিকে কোন ‘ভাইরাল’ প্রোডাকশন দেইনি । আমি আমার মতো পথে হেঁটেছি। হাঁটতে হাঁটতে মানুষের সংগ্রাম জীবনের গল্পকে বোঝার এবং তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং সেটাই করবো। আমি আবিষ্কার করতে পেরেছি আমি আসলে কি বানাতে চাই এবং কেন চাই। এইটা খুব জরুরী। এবং সেই কাজটি করতে পেরেছি। এবার অনুশীলনের পালা। 
আমার ক্যামেরা কত রেজুলেশনের তারচেয়েও আমার কাছে বড় আমার ক্যামেরায় কার মুখ আমি আঁকছি।
সেখানে যখন ধরা পড়ে ফুলবাড়ি আন্দোলনের গোলবানু, টঙ্ক আন্দোলনের কুমুদিনী হাজং, সুন্দরবন আন্দোলনের হাজার হাজার মুখ, জীবনানন্দের উঠানের ঝাঁক ঝাঁক শালিক- তখন আমি স্বস্তি বোধ করি। আমার ভালো লাগে। ট্রাইপডের অভাবে তখন ফ্রেম কেঁপে গেলেও ভালো লাগে।
নিজেকে এই ভালো লাগাটা শেখাতে পেরেছি এটাই আমার সফলতা। 

 

অভি, আপনার কাজ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে লড়ছে, সময়কে ধারণ করতে, সে পথে আরো এগিয়ে যান, শুভ কামনা, ছাড়পত্রকে এতখানি সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ । আবারো আড্ডা হবে আপনার আরো নতুন কাজ নিয়ে।
অভিঃ আপনাকেও ধন্যবাদ, এই কথাগুলো একসাথে এইভাবে তুলে আনার জন্য। ছাড়পত্রের জন্য শুভ কামনা রইলো।