জাস্টিস ফর এশা বনাম জাস্টিস ফর নারী

শাহেদ আলম

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৭, ২০১৮

জুতার মালা পরার যে কষ্ট সেটা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে দেখে একটা সমবেদনা তৈরি হয়েছে। দুঃখিত এবং সমব্যথিত। আচ্ছা, একটা অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেটাকে বলা হচ্ছে সুফিয়া কামাল হলের নেত্রী এষার গেস্টরুমে সাধারণ ছাত্রীদের ডেকে ডেকে টর্চার করার একটি অডিও। কয়েকটি কথা রুচি থাকলে শুনতে পারেন:

‘তোর মতো শ্রাবণীরে এখানে দাঁড়ায়ে মারতে মারতে মেরে ফেলতে পারি’
‘শোন, আমাদের কারো বাল ওঠেনি, এমন না। তোমাদের যেমন বাল উঠেছে, আমারও বাল উঠেছে’
‘তোর আসলে হলে থাকার কোনও ইচ্ছা নেই, একা তোরে মেরে পিটিয়ে বের করে দিলে সবগুলো টাইট হয়ে যাবে’
‘নদী কই? সে নদীরে ডাক দে, তুই আগে গিছিলি মিছিলে, নদী তোর পেছন পেছন ছিল, ওরে ডাক দে’
`প্রোগ্রামের মিছিলে বললে তোমার কুড়কুড়ানি লাগে, রাত ১২টার সময় মিছিলে যাও?
‘পপি কই, পপিরে ডেকে নিয়ে আয় তো’

আমরা সারাজীবন চিৎকার করলাম নারীর মর্যাদা নিয়ে। আজকে যারা জুতার মালা বরণ করার কষ্ট মেনে নিতে না পেরে কষ্ট ভাগাভাগি করছে, জাস্টিস ফর এষা প্লাকার্ড লাগাচ্ছে, তারা কি এই অসভ্য নারীটির পক্ষ নিয়ে কথা বলছে? অথচ তার এখন কারাগারে আটক থাকার কথা ছিল, তাকে কিনা ফুলের মালা দিচ্ছে? ভালোই হলো, আলোচনাটা অব্যাহত রাখার সুযোগ পাওয়া গেল।

প্রগতিশীলতা দেখান, মুক্তিযুদ্ধের বঞ্চনা নিয়ে মুখে ফেনা তুলে দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়াগায় নারী হলে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর কী অমানবিক অত্যাচার হয়, কোনোদিন খোঁজ নিয়েছেন? খোঁজ নিন, এরপর জুতার মালা গলায় দেয়ার কষ্ট ভাগাভাগি করে নিয়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশবিক আনান্দ তাতে আরো বাড়বে।

যারা বলছে, বিচার করা যেত নির্যাতন হলে, জুতার মালা পরানোটা অন্যায়, তাদের সাথে দ্বিমত করছি না। বলছি, বিচার আপনি চেয়েছেন কিনা? কলা ভবনে অবরুদ্ধ ভিসিকে মুক্ত করার নামে যেই শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি করলো আরেক ছাত্রনেত্রী, তাকে দেশের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন ভারতে মোদির সাথে সাক্ষাৎ করতে। আপনি বিচার চেয়েছিলেন তার? যেই ছেলেটিকে তার ক্যালকুলেটর চাওয়ার অপরাধে চোখ খুঁচিয়ে আঘাত করা হলো, তার প্রতি অবিচারের বিচার চেয়েছিলেন। চাননি বলেই যখন সুযোগ এসেছে, সাধারণের ক্ষোভটাই জুতার মালা হয়ে এসেছে। সেটা আপনাদের সবার গলাতেই যাওয়া উচিৎ। এই যে এখন পোস্ট দিচ্ছেন, মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ওইদিন সবাই্ মিলে মালাটা আবার পরবেন আশা করি। অগ্রিম সমবেদনা থাকলো।

এমন এশা প্রতিটি হলে আছে। প্রতিটি গণমাধ্যমে আছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে আছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে। নারী রূপে অথবা পুরুষ রূপে। এরা নির্যাতনকারী, নীলচাষি। যারা ছড়ি ঘুরায়, আর পুলিশ ডেকে রেইপ করার হুমকি দেয়। এরা এখন ভীত সন্ত্রস্ত। পুলিশি ব্যবস্থাপনায়, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এরা এতদিন নির্যাতন চালানোকেই টিকে থাকার পন্থা ভেবেছে। এখন সাধারণ ছাত্র/মানুষের ঐক্য হওয়ার চেষ্টা দেখে আরো ভীত, এবং মরণ কামড় দেয়ার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এদের কষ্ট আর ক্ষোভ দেখে, চলুন আমরাও একটু তাদের পাশে দাঁড়াই। জুতার মালাটার কষ্ট আসলেই বিঁধে গেছে তাদের বুকে। প্রতিজনের বুকে।