জীবনের পরমাণু গল্প

শাহরুখ পিকলু

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৩, ২০১৮

ঘন্টা ঘুমিয়ে সকাল সাতটায় চোখ খুলে এতটাই বিহ্ববল হয়ে গেলো আবুল কাশেম যে সে রীতিমত চিৎকার করে সায়মাকে বলে উঠলো যে, জানো আমি না প্রায় ছয় ঘন্টা ঘুমিয়েছি! সায়েমা শুধু একবার তাকালো, তারপর তার নিজের কাজে যেতে উদ্যত হ’লো। কিন্তু আবুল কাশেম কি আর এত সহজে ছাড়ে! সে বললো, বুঝেছো, আমি না মধ্যরাতের কিছু পরেই বিছানায় শুয়ে চিন্তা করলাম যে, জেফ বয়কট অত্যন্ত মরা একটা উইকেটে একজন অফ-স্পিনারকে ফেস করছে। প্রতিটা সোজা বল সে রক্ষণাত্মকভাবে সামনে বোলারের কাছে ঠেলে দিচ্ছে, বোলার বল কুড়িয়ে আবার বল করছে আর বয়কট সেই একই- চলতে চলতে আমার চোখ দুটো ঢুলুঢুলু হয়ে বুঁজে গ্যালো, ব্যস, তারপর এই সকাল। আজব না! সায়েমা, যে কিনা মুহূর্তের জন্য চিরচেনা গপ্পোটা শুনলো তারপর আবার ঠিকই তার নিজের পথে চললো, সে ভাবলো অন্তত একটা রাতে আলোভরা রুম আর টিভির কচকচানি থেকে সে মুক্ত হয়ে ঘুমিয়েছে, আরেকদিন যেন গাভাস্কার কোন ইনিংস খ্যালে। ক্রিকেট না দেখলেও এদের খেলা সম্বন্ধ্যে সে জানে, আবুল কাশেমের বদৌলতে। আবুল কাশেম একজন অকালে অবসর নেওয়া মানুষ, স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে। তার সঞ্চিত থেকে আয় যদিও ভালো। সেই ‘সঞ্চিত’ কেমনে হ’লো তা জিগ্যাসিয়া লজ্জা দিবেন না!

 

চা বানাতে হবে, ছেলেমেয়ে দুটোর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় মত যাওয়ার জন্য ডাক দেওয়া, নাশতা তৈরি করা, নিজে গোসল করে স্কুলের চাকরিটাতে যথাসময়ে যাওয়া- সায়মার জীবনের ইকুয়েশন সিম্পল, সেখানে কোন অজানা ভ্যারিয়েবল নেই। সে গণিত পড়ায়, হাইস্কুলে। তার স্বামী, আবুল কাশেম, অসময়ে অবসর নেওয়া অবস্থাপন্ন লোক, তা যেনেও সে চকুরি ছাড়েনি। সে, সায়মা, সব কিছু মেনে নিয়ে জীবন্মৃতের মত বেঁচে আছে।

 

হাঁটতে বেরিয়ে আবুল কাশেম কিছুটা উদাসীন হলো, সে হঠাৎই বুঝলো, যেন হাজার বর্ষ পরে, যে সে এই ঘুমুতে পারার কথা ফাঁদলো আজ সকালে তার বউয়ের কাছে তা একান্ত আদিম, সে আরো বহুবার এমনটা বলেছে কিন্তু প্রতিবারই তার কাছে তা অভিনব মনে হয়েছে। সে কি তবে সেই আরো দশ জনের মত বার্ধক্যের মতিভ্রমে আক্রান্ত? সিনাইল? সে মেনে নিতে পারছে না। সামনে তার রমনা লেকের টলটলে জল, যথেষ্ট গভীর। তার বিবেকের কাছে সে প্রশ্ন ক’রে সে অদ্ভুত উত্তর পেলো- ঠিক আছে আর হা হা হা .........। আবুল কাশেম সেই হাসির সব ক’টা দাঁত দেখতে পেলো।

 

রাতে আবুল কাশেমের বাড়ির কেউ ঘুমালো না। এর পর থেকে সবাই একটা অসস্ত্বি নিয়ে ঘুমোলো, শুধু আবুল কাশেম ছাড়া। সে আর কোনদিন বয়কট বা গাভাস্কারকে স্বপ্নে দেখেনি।

 

ঢাকা ৩রা অক্টোবর ২০১৭