দিন যায় কথা থাকে

পর্ব ৬

হামিদ কায়সার

প্রকাশিত : অক্টোবর ১১, ২০১৮

তারা কেউ গান শুনিয়েছেন। কেউ লিখেছেন হিরন্ময় কবিতা। কেউ আবার গল্প-উপন্যাসের মালা গেঁথে সাজিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের ঢালি। কেউ বা নিরলস জ্ঞানচর্চায় যোগ করেছেন বুদ্ধিবৃত্তির নতুন মাত্রা। তাদের সেই দিন আজ আর নেই, কেউ হারিয়ে গেছেন মহাকালে, কেউ বা এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন সেই পথে। তবে তাদের কথা আছে; তাদের কর্মে আর সৃজনশীলতায় তো বটেই, আমার কাছেও— কাগজের ভাঁজে ভাঁজে, শব্দগুচ্ছের আড়ালে, বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সাক্ষাৎকারে। হয়তো সেই কথাগুলো আবারো জেগে ওঠতে পারে আপনার মননস্পর্শ পেলে। চলুন পাঠ নেয়া যাক।

ফিরে দেখা: প্রিয় লেখক প্রিয় বই ১
সেটা ১৯৯৭ সাল। তখন আমি দৈনিক সংবাদে খুব লিখি। আগস্ট মাসের এক-দুপুরবেলা গল্প দিতে গিয়েছি আবুল হাসনাত ভাইকে। তিনি আমাকে হঠাৎ করেই প্রস্তাব দিয়ে বসলেন, আপনাকে দিয়ে লেখকদের একটা ইন্টারভিউ-সিরিজ করাতে চাচ্ছি। করবেন? আমি আরেকটু বুঝতে চাইতেই তিনি বিশদ ব্যাখ্যা করলেন, লেখকদের কাছ থেকে বের করে আনতে হবে তাদের প্রিয় বই প্রিয় লেখক কারা? পারবেন না?
নিশ্চয়ই পারবো। আমি হাসনাত ভাইয়ের প্রস্তাবটা সঙ্গে সঙ্গেই লুফে নিলাম। প্রস্তাবটা লুফে নেয়ার মোটা-দাগের কারণ হলো দুটো— এক. বিষয়টা অতি চমৎকার, লেখকদের সাক্ষাৎকারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে একটা যুগ এবং সময়ের লেখাপড়ার কিছু ছবি, সাহিত্যের অনেক চালচিত্র কিংবা বই পড়ার প্রবণতা ওই সময়ে ঠিক কেমন ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। দ্বিতীয় কারণটি হলো, কবি-লেখকদের সান্নিধ্যস্পর্শ লাভ— তারা যে তখনো আমার কাছে অন্য গ্রহের মানুষ, যারা শুধুই সমীহের পাত্র।

যথারীতি শামসুর রাহমানকে দিয়েই শুরু হলো সাক্ষাৎকারমালা। তার শ্যামলীর বাসার বইয়ের বিশাল সংগ্রহের ভেতর অনেক অনেকক্ষণ ডুবেছিলাম। এরপর একজন অসম্ভব বিনয়ী মানুষ, বিনয়ের সঙ্গে যেখানে মিশে আছে খানিকটা লজ্জার উদ্ভাস— কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হারিয়ে গিয়েছিলাম বইয়ের রাজ্যে। এরপর রশীদ করীম, ক্রমে ক্রমে আবু রুশদ, আবুল হোসেন— একের পর এক শিল্প-সাহিত্যের নামিদামি সব মানুষ।

প্রথমদিকে বেশ উপভোগ করলেও, ধীরে ধীরে উৎসাহ ক্রমশ মিইয়ে আসতে লাগলো আমার। তার কারণ বা কারণসমূহ না হয় নাই বলা হলো! দুম করেই একদিন হাসনাত ভাইকে জানিয়ে দিলাম, আমি আর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারব না! তিনিও আর জোরাজুরি করলেন না। তবে যেসব কবিসাহিত্যিকের সাক্ষাৎকার নিইনি বা নেয়া হয়নি, পরবর্তীকালে লক্ষ্য করেছি তাদের অনেকেরই আমার প্রতি নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ। অনেকে চিনেও না চেনার ভান করেন। একজন তো নিউ মার্কেটে আমাকে একা পেয়ে নিষ্ঠুরের মতো মারতেই এলেন। লোকজন সবার সামনে মুখে যা গালিগালাজ এলো, তার সবই প্রয়োগ করলেন! থাকুক সেসব কথা। চলুন আজ শোনা যাক প্রিয় বই প্রিয় লেখক নিয়ে কবি শামসুর রাহমানের অভিমত।

বই পাঠের আনন্দ কোনোদিনই কমবে না— বইয়ের নৈকট্য যেরকম নিবিড়ভাবে পাওয়া যায়, তা অন্য কোনো কিছু থেকে পাওয়া অসম্ভব। বইকে ইচ্ছেমতো পড়া যায়, রেখে দেয়া যায়, নেড়েচেড়ে দেখা যায়, গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। —শামসুর রাহমান

বই আর বই। বই ছাড়া কবির ছোট্ট রুমটিতে আর কিছু নেই। শুধু দেয়ালে কবির তিনটি প্রতিকৃতি, আর মার সঙ্গে এবং স্ত্রীর সঙ্গে দুটি ছবি ছাড়া পুরো রুমটিই ডুবে আছে বইয়ের সাগরে। পূর্ব এবং পশ্চিমপাশের বুকশেলফগুলো দেশ-বিদেশের নানা বিষয়ের বইয়ে আপাদমস্তক ঠাসা। দক্ষিণপাশের টেবিলটাও ঢেকে আছে বইয়ের বিশাল স্তূপে। বিছানারও অর্ধেক অংশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বই, হাতের বইটা রেখে দিতে দিতে শামসুর রাহমান, বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘বই আমার সব-সময়ের সঙ্গী, আমার বিশ্বস্ত বন্ধু।’ শুরু হলো বই নিয়ে আমাদের কথোপকথন—

হামিদ কায়সার: আপনার প্রথম পঠিত বই কোনটি?
শামসুর রাহমান: তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। বাসায়ই হাতের কাছে পেয়ে গেলাম যোগেন্দ্রনাথ সরকারের ‘হাসিখুশী’ বইটি। গোগ্রাসে পড়ে ফেললাম, পাঠ্যপুস্তকের বাইরে ওটিই আমি প্রথম পড়ি।
হামিদ কায়সার: আপনার শৈশব-কৈশোরের বই পড়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাচ্ছি। তখন কোন্ কোন্ লেখকরা আপনাকে বেশি অভিভূত করে রেখেছে?
শামসুর রাহমান: ‘হাসিখুশী’র পর কৈশোরেই সুযোগ হয় মীর মোশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’ পড়ার। মনে আছে, বইটি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম। শুধু যে নিজে পড়েছি তা নয়, নানীকেও পড়ে শোনাতাম। তিনি শুনতে ভালোবাসতেন। তখন পাঠ্যপুস্তকের বাইরে ঘরে ‘বিষাদ সিন্ধু’ ছাড়াও ছিল নজিবর রহমানের ‘আনোয়ারা’ উপন্যাসটি। কিন্তু সে বইটি পড়ার সুযোগ আমার কখনোই হয়নি, কারণ মা সব-সময় বইটি লুকিয়ে রাখতেন সযত্নে। তিনি ‘আনোয়ারা’ লুকিয়ে পড়তেন। তখনকার সামাজিক পরিবেশ এমনই ছিল যে ‘আনোয়ারা’ উপন্যাস আমাদের মতো শিশু-কিশোরদেরকে পাঠ করতে দেয়া হতো না।। তারপর, কৈশোরের অবিস্মরণীয় পাঠ হলো রবীন্দ্রনাথের ‘গল্পগুচ্ছ’র দ্বিতীয় খণ্ড। গল্পগুলো পড়তে পড়তে অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। এ বই আমার জীবনে এক মস্ত ভূমিকা পালন করে।
হামিদ কায়সার: কবিমানস গঠনে তো বইয়ের ভূমিকা থাকেই...
শামসুর রাহমান: সেটা থাকে কিনা আমি জানি না। তখন, সেই কৈশোরে মুগ্ধ হয়েই বই পড়েছি, লেখালেখির বিষয়ে ছিলাম অসচেতন। লিখতে তো শুরু করেছি হঠাৎ করেই— জীবন এবং বই, আমার কবিমানস গঠনে দুটোরই ভূমিকা আছে। জীবন এবং গ্রন্থ— দুটো পাঠ করেই অনেক জেনেছি, শিখেছি এবং লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি।
হামিদ কায়সার: আপনার কৈশোর এবং প্রাক-যৌবনে বই ঠিকমতো পাওয়া যেত?
শামসুর রাহমান: তা যেত, সদরঘাটের বৃন্দাবন এন্ড সন্স নামের লাইব্রেরিতে নিয়মিত বই পাওয়া যেত। ওখান থেকেই প্রথম কিনি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’, বুদ্ধদেব বসুর ‘বন্দির বন্দনা’, মোহিতলাল মজুমদারের ‘বিস্মরণী’। জীবনানন্দ দাশের বই পড়ার অভিজ্ঞতা হয় আরো অনেক পরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়। সেটা আমার জীবনের এক উজ্জ্বল স্মৃতি। বন্ধু জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর কাছ থেকে পড়ার জন্য চেয়ে এনেছিলাম জীবনানন্দের প্রথম বই ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’। পাগলের মতো বুঁদ হয়ে একরাতেই পুরো বইটি পড়ে ফেলেছিলাম আর বিস্মিত হয়েছিলাম, আমি যাই-ই লিখবো বলে ভেবেছিলাম— সবই জীবনানন্দ দাশ লিখে ফেলেছেন কাব্যগ্রন্থটিতে।
হামিদ কায়সার: আপনার যৌবন তথা কবিসত্তার উন্মেষ-লগ্নে কোন্ কবিলেখকের বই পড়তেন?
শামসুর রাহমান: বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, মোহিতলাল মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের লেখা নিয়মিত পড়তাম।
হামিদ কায়সার: পরবর্তীকালে বাস্তব-জীবনে এসে বই পাঠে আপনার মনোসংযোগ কি আগের মতোই অপরিবর্তিত থেকেছে?
শামসুর রাহমান: বইপড়ার আগ্রহ আগের চেয়ে বরং বেড়েছে। এখন আমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে বইপড়ার স্পৃহা। বইয়ের মতো সঙ্গী তো আর নেই— বইয়ের সঙ্গে দেখা না হলে বই রাগ করে না— যখন তখন বন্ধ করে দেয়া যায়— যখন কেউ সঙ্গ দেয় না, তখন বই সঙ্গ দেয়— বাথরুমেও নিয়ে যাওয়া যায় বই— এক সময়ে আমি বাথরুমেও অনেক বই পড়েছি।
হামিদ কায়সার: সমগ্র জীবনের বই পাঠের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় থেকে জানাবেন কি আপনার প্রিয় বইয়ের তালিকা, প্রিয় লেখকের নাম—
শামসুর রাহমান: সংখ্যাটা প্রচুর— একটি দুটি হলে বলা যেত— অসংখ্য। তালিকা বানিয়ে লাভ নেই, সম্ভবও নয়। আমি সব-রকমের বই পড়তেই ভালোবাসি। সম্প্রতি ভালো লাগছে বিজ্ঞানের বই পড়তে। কবিতা লিখলেই যে শুধু কবিতার বই পড়তে হবে, এমন নয়। সব বিষয়েই পড়াটা যেমন জরুরি, তেমনি মনের খোরাকও মেলে।
হামিদ কায়সার: এমন কোনো বই কি আছে, যা আপনি বার বার পড়েন? পড়ে স্বর্গীয় আনন্দে উদ্ভাসিত হন, উজ্জ্বীবিত হন?
শামসুর রাহমান: রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’, জীবনানন্দ দাশের কবিতা।
হামিদ কায়সার: একটি মহৎ কবিতার রসকে কীভাবে আস্বাদন করেন?
শামসুর রাহমান: এক্ষেত্রে বাঁধাধরা কোনো নিয়ম নেই। আমি সাধারণভাবেই পড়ি, ভালোভাবে কমিনিকেট করলে রসটা ভালোমতোই পাওয়া যায়। খাবার খেতে ভালো লাগে, কিন্তু কীরকম ভালো লাগে সেটা বলা মুশকিল— আইসক্রীম, ভাত, মিষ্টি— একেকটির স্বাদ একেক রকম— বিভিন্ন কবিতার বা বিভিন্ন বইয়ের স্বাদও তেমনি বিভিন্ন।
হামিদ কায়সার: একজন মৌলিক কবি বা লেখকের ক্ষেত্রে গ্রন্থপাঠের বিষয়টি কতটুকু জরুরি?
শামসুর রাহমান: একজন কবি বা ঔপন্যাসিক দু’ভাবে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে থাকেন— জীবনের কাছ থেকে, অন্যটি বইয়ের কাছ থেকে। সুতরাং...
হামিদ কায়সার: সম্প্রতি কী বই পড়লেন?
শামসুর রাহমান: পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘কবিতার ঘর ও বাহির’, এখন আবার নতুন করে পড়ছি দস্তয়ভস্কি এবং দস্তয়ভস্কি সম্পর্কে আলোচনা। আগের বারের পাঠের চেয়ে এবারের আনন্দটা অন্যরকম। এছাড়াও পড়ছি কবীর চৌধুরীর ‘রঁদ্যা’।
হামিদ কায়সার: প্রতিদিনই তো দেশ-বিদেশে অসংখ্য বই বেরুচ্ছে— এক জীবনে সব বই-ই কি পড়া সম্ভব?
শামসুর রাহমান: নাহ্, সম্ভব নয়। সে জন্য বেছে বেছে ভালো বই পড়া উচিত। কিন্তু, আমাদের তো বাছাই করার সুযোগ তেমন থাকে না— সব সময় ভালো বই আসে না। তবু বাছাই করেই পড়ি। আবার অনেক সময় যা হাতে আসে তাই-ই পড়ে ফেলি।
হামিদ কায়সার: নতুনদের বই নিয়েও আপনাকে মাঝে মাঝে মূল্যায়ন করতে দেখা যায়— এই স্বতঃপ্রণোদনা আপনি কোত্থেকে পান?
শামসুর রাহমান: আমার ভেতর থেকে— এক সময় আমিও নতুন ছিলাম। আমি মনে করি, ভেতরে ভেতরে আমি এখনও নতুন। আমার আগের লেখকদের প্রতি, আমার সমবয়সী লেখকদের প্রতি আমার যেমন আগ্রহ— কমবয়সী লেখকদের প্রতিও আমার সমান আগ্রহ।
হামিদ কায়সার: এখন স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের যুগ। বই পাঠ কি হুমকির সম্মুখীন?
শামসুর রাহমান: কেউ কেউ বলে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অডিও ভিডিওয়ালাদের আক্রমণে বইয়ের গুরুত্ব কমে যাবে— কিন্তু আমার কাছে কখনো এরকম মনে হয় না। বইপাঠের আনন্দ কোনোদিনই কমবে না— বইয়ের নৈকট্য যেরকম নিবিড়ভাবে পাওয়া যায়— তা অন্য কোনো কিছু থেকে পাওয়া অসম্ভব। বইকে ইচ্ছেমতো পড়া যায়, রেখে দেওয়া যায়, নেড়েচেড়ে দেখা যায়, গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়।
হামিদ কায়সার: বই পড়ার বর্তমান সামাজিক রুচি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন।
শামসুর রাহমান: এখন হালকা জিনিসের প্রতিই যেন সবার আগ্রহ, ন্যাকামি-ছ্যাবলামি, মেকিত্ব এবং চটুলতার পেছনে সবাই ছুটছে— সাহিত্যের উৎকর্ষের জন্যে এ প্রবণতা কল্যাণকর নয়।
হামিদ কায়সার: বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে কার কার লেখা আপনি পড়ে থাকেন?
শামসুর রাহমান: আমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শওকত ওসমান, আবু রুশদ, রশীদ করীম, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, কায়েস আহমেদ প্রমুখের লেখা পড়েছি এবং পড়ে থাকি। এছাড়া আমার বন্ধু হাসান হাফিজুর রহমানের গল্পও আমার খুব ভালো লাগে।
হামিদ কায়সার: বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে কার কার লেখা আপনি পড়ে থাকেন?
শামসুর রাহমান: অনেকের কবিতাই পড়ি, অনেকের কী, প্রায় সবার কবিতাই আমি পড়ি— দৈনিকের সাময়িকীতে কিংবা লিটল ম্যাগে যে কবির প্রথম কবিতাটি ছাপা হলো তা-ও পড়ি, এক সময় বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা পর্যন্ত দেখতাম। আমার সমসাময়িক কালের কবিরা কে কেমন লিখছেন— তা আমি দেখবো না?
হামিদ কায়সার: আপনার বিবেচনায় বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের পর আর কে কে নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হতে পারতেন?
শামসুর রাহমান: কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে মানিক বন্দোপাধ্যায়, তারাশংকর, বিভূতিভূষণ, কমলকুমার মজুমদার এবং কবিতার ক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী নোবেল পুরস্কারের জন্য যোগ্যতর সাহিত্য প্রতিভা ছিলেন বলে আমি মনে করি।

১১ আগস্ট ১৯৯৭, সংবাদ সাময়িকী, দৈনিক সংবাদ