সংগৃহিত

সংগৃহিত

দ্য গ্রেট থিফ

শেষ পর্ব

মুনতাসির মামুন

প্রকাশিত : মে ২০, ২০১৮

“কীরে, মান্নানের তো খবর নাই কোনো...তর সাথে কথা হইছিল?”বেঞ্চে বসে দাঁত খোঁচাচ্ছে অনন্ত।

“নাহ, ফোন দেয় নাই তো।” চায়ের কাপটা হাত থেকে মাটিতে রাখলো রুম্মন।

“তোর কি মনে হয়, ও পারবে? “বললো সে।

“আমি জানি না, আমার কিছু ভাল্লাগতাছে না।” পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো ওর। ফোনটা বের করেন রিসিভ করলো ও।

“হ্যালো।”

“কী? ও, আসিচ্ছি।” ফোন রেখে রুম্মনের দিকে তাকালো ও।

“মান্নানে ফোন দিসে। রাজলা আইতে কইলো।”

 

 

“এর কমে কিছুতেই হবে না?”হতাশ কন্ঠ অনন্তের। 

“ভাই, তুই যদি নতুন কিনবার যাস তাইলে তোর কতো লাগবো, একবার ভাবছস?” সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো মান্নান।

“তাই বলে পনেরো হাজার?”

“দ্যাখ, ভাই...আমার যদ্দূর করনের, আমি করসি...এখন তুই বুঝবি, তুই কী করবি।” বিরক্ত হয়ে গেল মান্নান।

“দ্যাখ, তুই বলসিলি...তোর গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপাতি আছে ল্যাটপটায়...যদি সেরকম হয়, আমার মনে হয় তুই টাকাটা দিয়ে দে।” অনন্তর কাঁধে হাত রাখলো রুম্মন। মেঝের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অনন্ত। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

“আমি বাসায় কথা বলতেসি।”

 

 

“তাইলে দীপু ভাইই কাজটা করসিলো?”চায়ের কাপে চুমুক দিল রাশেদ।

“হঅ,হেয় তো আবার তুমার জিগরি দোস্ত!”

“কিন্তু,উনি এসব লোকজনের সাথে কন্টাক্ট করলো ক্যামনে?

“আরে, হ্যার এলাকাই তো গ্যান্জামের...মদ-গান্জা-গুটি-বাবার ডিপু। হ্যায় থিরি কোয়ার্টার পড়নের সুময় থাইক্কা এগো লগে ঘুরে।”

“হুমম!”

“এইবার আসি ‘ক্যান’ করল এই কাম। রুম্মনরে ফাঁসানোর লেইগা করসে হ্যায়। রুম্মনের লগে তো হ্যার আগেই গ্যান্জাম...রুম্মনে হ্যার ছবি তুলা আর ফিলিম লিয়া মাজে-মইদ্যেই উল্টা-পাল্টা কমেন্ট করতো, খুঁটা দিতো। তবে, আসল গ্যান্জামটা হইসিলো অগো মইদ্যে নীতুরে লিয়া।”

 

“দীপু ভাইগো ইয়ারের মাইয়াটা?”

“হঅ,মনে রাখবা, যেকোনো গ্যান্জামের পিছনে সবসুময় একটা মাইয়া থাকে। তো,দীপু ★★★দে তো জানোই ক্যামুন ★★য়া হালায় একটা আস্ত ★★খোর।আর, চিহারাও মাশাল্লাহ্...তো, হেয় যহন দ্যাখলো, হ্যার মতো একটা ক্যারেক্টার, যারে দেখলে মাইয়ারা হামলায়া পড়ে, নীতু তার এপ্রোচগুলানরে না গুইনা রুম্মনের লাহান একটা পোলার লগে ঘুরতাছে, হ্যার মিজাজ গেল চইড়া। হ্যায় তহন থেইকাই রুম্মনের কুনো একটা ক্ষতি করনের লাইগা উঁত পাইতা রইছিলো।”

“তো,তুমি বুঝলা ক্যামনে, হ্যায়ই এই কামডা করসে?”

“প্রথম কতা হইতাসে ঘটনা যখন আমি অনন্তর থেইকা শুনি, তখন সেইটা আর ঘটনা নাই,’গল্প’ হয়া গেছে। সবসুময় খিয়াল কইরা দেখবা, একজনের থেইকা যখন তুমি একটা ঘটনা শুনবা, তখন সেইটা আর ঘটনা থাকে না, ঘটনার মইদ্যে স্টোরি ঢুইক্কা যায়...ফ্যাক্টসের পার্সেন্টেজ কইমা আসে ঘটনায়। তো, আমি সবার কাছ থেইকা গল্পগুলা শুইনা শুইনা সেগুলার ভিতরে লুকানো ফ্যাক্টসগুলা খুঁইজা বাইর করনের চেষ্টা করি। কথাগুলা ক্রস চেক করি, গুজবগুলার বিষয়ে খুঁজ লেই...হ্যারপর পাওয়া ডেটাগুলার উপ্রে রিসার্চ কইরা মনে মনে পুরা ঘটনার একটা ইমেইজ বানাই। দীপু-রুম্মনের ক্যাচালটার বিষয়ে আমার আগেই একটা আইডিয়া আছিলো, সেইটার বিষয়ে খোঁজ লাগাই।চুরির মাল যেই এলাকায় যাইতে পারে, সেইহানে পরিচিত পোলাপানের কাছে খুঁজ লাগাই...ঘটনা জাইনা যাই, কে তাদের কাছে মালটা বেচতে লিছিলো এইসব।”

“সুবহানআল্লাহ! কী কাহিনী শুনাইলা,মিয়া!” বাম হাতে পরা রোলেক্স ঘড়িটায় সময় দেখল মান্নান। “আমার এইবার উঠা লাগবো,এপয়েন্টমেন্ট আছে একখানে।” চোখ টিপল সে।

 

 

একটা আধো অন্ধকার রুম। একটা ছোট্ট টেবিলে ক্যান্ডেল লাইট জ্বালিয়ে প্যাকেট থেকে খাবার খাচ্ছে দুই যুবক-যুবতী।

“অ্যাই,এরকম আমরা প্রতি উইকে একবার করতে পারি না?” উচ্ছসিত কন্ঠ যুবতীর। সাবধানে হালকা শ্বাস ছাড়লো মান্নান। এইসব ক্যান্ডেল লাইট ডিনার-টিনার তার একদমই ভালো লাগে না। এই মেয়েটার জন্য করতে হয়। মেয়েটার দিকে তাকালো ও। কী খুশিটাই না হয়েছে পাগলীটা! মোমবাতির আবছা আলোয় এই মিষ্টি মেয়েটার হাসিমুখ দেখতে ভালোই লাগছে তার। এই গুটিবাজিময় পৃথিবীতে এই মেয়েগুলোর সাথে কাটানো সময়গুলোই তার কাছে চিরশান্তির।অন্যদের কথা কী বলছে, সে নিজেও কি কম গুটি করেছে জীবনে!এই যে ল্যাপটপটা উদ্ধার করে দিল, তার জন্য কি সে পাঁচ হাজার টাকা বেশি দাম বলে অনন্তের থেকে নেয়নি?

“আস্তে আস্তে খাও, খাওন পালায়া যাইতাছে না কুথাও।” নরম স্বরে বললো সে। নিজের প্যাকেটে মনোযোগ দিল সে। 

 

 

“বললাম তো,পরে খাবো...এখন ভাল্লাইগছে না!” খাটের ওপর জবুথবু হয়ে বসে আছে দীপু আহাদ। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছে সে। হারামজাদা আমার বোনের দিকে নজর দিছে! যেদিন ওর বাড়িতে এলো দেখা করতে মান্নান, ও বাড়ি ছিল না। ফোন পেয়ে রুমে এসে দেখলো, ওর বোন ইশিকা কোচিং থেকে ফিরে কাঁধের ব্যাগটা না খুলেই মান্নানের সাথে বসে গল্প করছে। মেজাজ খিঁচড়ে গেছিলো সেদিন। বোনকে বকেছিল খুব সেদিন রাতে। আজ দুজনকে সে দেখলো এক রিকশায়! ফোন হাতে নিল সে।

 

 

 একটি উষ্ণ পানিতে টইটম্বুর বাথটাব। সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় তাতে আধশোয়া হয়ে সিগারেট টানছে মান্নান মিসৌরী।

“এখন ওটা ফেলো তো, ফেলো বলছি!” ওর ঠোঁট থেকে সিগারেটটা টেনে নিয়ে কমোডের ভেতরে ছুঁড়ে ফেললো ওর বুকে শুয়ে থাকা তরুণী। একেবারে নিখুঁত নিশানা! পড়ে গিয়ে কমোডের সরোবরে ভাসতে লাগলো ছয়টান দেয়া নেশাজাত দ্রব্যটা। সিগারেট ধরা হাতটা মুক্ত করতেই সেটাকে অন্য একটা নেশার কাজে নিয়োগ করল মান্নান। এ নেশা, আবিস্কারের নেশা! ভালোবাসার স্পর্শে সঙ্গীকে জাগিয়ে তুলতে ব্যস্ত মান্নান জানতেও পারলো না,কেউ একজন প্রবল আক্রোশে তার কথা ভাবছে অনেক দূরে। কিংবা,কে বলতে পারে...হয়তো খুব কাছেই। ★★★_★★★

 

 

শেষ