সংগৃহিত

সংগৃহিত

দ্যা গ্রেট থিফ

পর্ব ৩

মুনতাসির মামুন

প্রকাশিত : মে ০৮, ২০১৮

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বিরস মুখে সিগারেট টানছে মান্নান মিসৌরী। শরীরী খিদেটা মেটানোর পর পরই প্রচন্ড সিগারেটের তেষ্টা পায় তার। সিগারেট টানতে টানতে বেলকনিতে ঝোলানো আয়নাটার সামনে দাঁড়ালো ও। ফর্সা গায়ের রং। ঘন কালো নিখুঁত ভাবে ব্যাকব্রাশ করা চুল। শকুনের মতো তীক্ষ্ণ দুটো চোখ। নাকের নিচে পরিপাটি ছোটো করে ছাঁটা গোঁফ। সদ্য দাঁড়ি কামানোর কারণে গালের চামড়া থেকে এক প্রকার নীলচে আভা বের হচ্ছে। বুকের ওপর আর গলার চামড়া ক্রমাগত মেহনে লালচে হয়ে আছে। কী দেখে নারীরা ওর প্রতি এতো আকর্ষণ বোধ করে? ভাবলো মান্নান। সদ্য তেইশ বসন্তে পা দেয়া যুবক মান্নানের জীবনে নারী শরীরের অভাব কখনো হয়নি। তার নিজের কিশোর বয়সের কথা মনে পড়ে। সে তখন মাত্র কৈশোরে পা দিয়েছে। তাদের পাড়ার এক ভাবী ছিলেন,স্বামী বিদেশে থাকতো ওনার। ওনার ছেলের সাথে সে প্রায়ই খেলতে যেতো। ওনাদের বাসায় গেলে সবসময়ই উনি এটা-সেটা খেতে দিতেন ওকে। একদিন ওনার ছেলেকে খেলতে ডাকার জন্য ওনাদের দরজায় নক করতেই ভাবী দরজা খুলে দিলেন। “বাবু তো একটু বাইরে গেছে ওর দাদুর সাথে,তুমি বসো...এসে পড়বে ও। ” ওকে ড্রইং রুমে বসিয়ে আপেল আর মাল্টা খেতে দিলেন ভাবী। খাওয়া শেষ করে ও “পরে আসবে” বলে উঠে যাওয়ার উপক্রম করতেই উনি ওর হাত ধরে বসিয়ে দিলেন। “বাসায় তো যাবেই,এসেছো যখন একটু বসে না গেলে কি হয়!” ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন উনি।তারপর শাড়ির আঁচলটা খসিয়ে ওর কাছে কিছুটা ঘন হয়ে আসলেন। সেদিনই প্রথম নারী দেহের স্বাদ পায় সে। সেই থেকে ওর জীবনে আর নারীর অভাব হয়নি,যখনই চেয়েছে কাউকে না কাউকে পেয়েই গেছে। কোনো কোনো সময় যে নিজেকেও ব্যবহৃত হতে হয়নি,তা অবশ্য নয়। এই বেলকনিটা তার বেশ ভালো লাগে। ফ্ল্যাটটা কিছুটা উঁচু তলায় হওয়ায় ওপর থেকে অপেক্ষাকৃত নিচু দালানগুলো দেখতে তার বেশ লাগে। কতো কিছুই না দেখা যায় এখান থেকে। ঐতো এক তরুণীকে দেখা যাচ্ছে ছাদের দঁড়িতে মেলে দেয়া কাপড় উঠিয়ে বালতিতে ভরতে। আরেকটা বিল্ডিংয়ের ছাদে কয়েকটা বাচ্চা ক্রিকেট খেলছে। হঠাৎ করে বিল্ডিংটার চার তলার জানালার দিকে চোখ পড়লো তার,একটা মেয়ে জানালার দিকে মুখ করে মাথা হালকা ঝুঁকিয়ে বই টেবিলে রেখে পড়ছে...মেয়েটার বুকের ক্লিভেজ জামার ফাঁক দিয়ে কিছুটা দেখা যাচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে সিগারেট টানলো সে। তারপর চোখ সরিয়ে নিলো আকাশের দিকে। আকাশের রঙ লালচে হয়ে এসেছে। সন্ধ্যে হবে হবে পরিবেশ।

 

“অ্যাই,কী করছো ওখানে এতোক্ষণ?”আদুরে বেড়ালের মতো গরগর করে উঠলো ভেতরের রুমের বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটা। সিগারেটে শেষ একটা টান দিয়ে ওটার অবশিষ্টাংশ বেলকনিতে রাখা ফুলের টবগুলোর একটায় ছুঁড়ে দিয়ে রুমের ভেতর ঢুকলো ও। ভেতরে ঢুকেই মেজাজটা খিঁচড়ে গেল ওর। মেয়েটা এখনও জামা গায়ে দেয়নি। ও ঢুকতেই বিছানা থেকে উঠে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খেতে এগিয়ে এলো মেয়েটা। বিবমিষায় হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিল ও মেয়েটাকে,’খিদে’ একবার মিটে যাওয়ার পর কয়েকদিন কোনো নারীর স্পর্শ সহ্য হয় না ওর। এমনকি দেখলেও বিরক্তি লাগে! বিছানার এক পাশে দলামুচড়ি করে রাখা শার্টটা গাশে দিল সে।

“বের হইলাম আমি,পরে ফোনে কথা কমুনে...থাকো।”বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে থাকা মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল সে। 

 

অলির মোড়ের বর্ণালী চা স্টোরে বসে আছে দুজন যুবক।এই চায়ের দোকানটা প্রতিদিন সন্ধ্যাতেই বেশ জমে ওঠে।কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ভীড়টাই বেশি। চা-সিগারেট-আড্ডাবাজি চলে রাত ১১/১২টা অবধি। এখানে যারা আড্ডা দেয়,তাদের গলার আওয়াজ সাধারণত উঁচুই থাকে। কিন্তু আমাদের গল্পের এই দুই যুবকই কিছুটা গলা নামিয়ে কথা বলছে। চলুন,তারা কী বলছে একটু শুনে আসা যাক।

“শ্যাষ কখন দ্যাখছস জিনিসটা?”অনন্তের মুখের ওপর ধোঁয়া ছাড়ে মান্নান।

“ঐতো,দীপুর সাথে বাইরে যাওয়ার আগে।”

“দীপুর লগে কতক্ষণ বাইরে ছিলি?”

“তা,ঘন্টা তিনেক তো হইবোই।”

“তারপর ফিইরা আইসাই দেখলি জিনিসটা নাই?”

“না,ফিরে এসে প্রথমে আমি গোসলে ঢুকি,তারপরে গোসল থেকে বের হয়ে দেখি,বেশ ঝড়ো বাতাস দিচ্ছে।তখন ছাদে যাই।ক্যামেরা নেয়ার জন্য ছাদ থেকে আবার রুমে ফেরৎ আসতেই ল্যাপটপ খোয়া যাওয়ার বিষয়টা ধরা পড়ে।”

“যখন তুই বাইরে গেছিলি,তখন বাসায় কেডা কেডা আছিল? “

“রুম্মনই ছিল শুধু।অবশ্য আমি বের হওয়ার একটু পরেই ওর বের হয়ে যাওয়ার কথা,পড়ানো ছিল ওর বিকাল ৫টায়।”

“বুঝলাম,ওর লগে একবার কথা কইতে হইবো...।” অন্যমনস্ক ভাবে মাথা নাড়লো মান্নান,দুই আঙুল দিয়ে গোঁফের এক কোণ মোচরাচ্ছে সে।

“কখন কথা বলবি?”

“আজকেই চল,বাসায় আছে অয়?”

“হঅ,থাকার তো কথা...।’

“ওউক্কে,চা-টা শ্যাষ কইরাই উঠমু তাইলে।”

 

 

 “তোরা বলতে চাস,আমি চুরি করসি!”কিছুটা রাগত স্বর রুম্মানের।

“আমি কখন কইলাম,তুই চুরি করছস! আমি তো তোগো থেইক্যা শুইনা শুইনা ঘটনাডার একটা ইমেইজ বানাইতে চাইতাসি!”

“ওকে,ফাইন...কী জিগাবি,জিগা।”

“অনন্ত বাসা থেইক্যা বাইর হইছে বিকাল চারটার দিক,সৌম্য আর অক্ষর আগে থেইকাই বাইরে ছিল...তাইলে শ্যাষ বাসা থেইক্যা বাইর হইছস তুই...তুই কয়টায় বারাইছস?”

“আমার টিউশনি ছিল ৬ টায়,আমি সাড়ে পাঁচটায় বের হইসি।”

“আর,বাড়িত ফিরসস কয়টায়?

“ ৮:৩০টার আশে পাশে।”

“তর টিউশনিডা কুথায়?”

“ভদ্রার মোড়...আমার বাইরে যাওয়া লাগবো,কাজ আছে,তোর আর কোনো প্রশ্ন আছে?”

“না,বন্ধু...চেইতো না,তুমি চেতলে আমরা কই যামু কও!“

“গো অ্যান্ড ★ক ইওরসেলফ।”খিস্তি করে নিজের রুমে ঢুকে গেল রুম্মন।

“অয় কি সত্যি কথা কইতাছে,কী মনে হইলো তোর?” মান্নানের দিকে তাকালো অনন্ত।

“তাই তো মনে হইলো,তয় আমরা একট চেক কইরা দ্যাখতেই পারি“।জানালার কাছে সরে এসেছে মান্নান।

“সেইটা ক্যামনে?”অবাক হয় অনন্ত

“কালা যন্তরের লাল চউখ দিয়া।”রহস্য করে একটু মান্নান। “

মানে?” ইশারায় জানালার দিকে নির্দেশ করে মান্নান। জানালার কাছে এসে বাইরে তাকায় অনন্ত।

স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোয় বাসার সামনের রাস্তাটা বেশ ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে। রাস্তার উল্টোপাশের দোকান ঘেঁসে কয়েকটা কুকুর বসে আছে। ওদের এই গলিটায় সবসময়ই কুকুরের দলের দেখা পাওয়া যায়। রাতে আরো বেশি।

“কিসের কথা কচ্ছিস,বুঝলাম না তো!”

“নিচে চল” দরজাটা টান দিয়ে নিচে নেমে এলো ওরা। “এইবার আবার দ্যাখ।”

চারপাশে তাকালো ও,কিন্তু আগের দৃশ্যগুলো ছাড়া নতুন কিছু দেখতে পেল না।

“কই আমি তো কিছু...।”বলতে গিয়ে কথার মাঝখানে ব্রেক কষে ও।কিছু একটা চোখে ধরা পড়েছে ওর। একটা লাল চোখ যেন কটমটিয়ে তাকিয়ে আছে ওরই দিকে।লাল চোখের ওপরে কালো কাভার।

“সিসি ক্যাম।”বিড়বিড় করলো সে। “একদম ঠিক ধইরেছো,গুরু!”

 

 

চলবে