অঙ্কনঃ রিফাত বিন সালাম

অঙ্কনঃ রিফাত বিন সালাম

আন্ডারগ্রাউন্ড

উপন্যাস ১

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : জুন ১১, ২০১৮

তোফাজ্জলের দিকে অবাকভাবে তাকিয়ে আছে ওসি মামুন। তোফাজ্জলের মতো একটা আধামরা মানুষকে দেখে একই সাথে মামুনের বিরক্তি-আগ্রহ দুই অনুভূতিই কাজ করছে। মামুনের এই মানসিক দ্বন্দ্ব দেখে তোফাজ্জলের পাশবিক আনন্দ হচ্ছে ভেতরে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না তোফাজ্জল। খুব শান্ত হয়ে বসে নিজেকে আরো রহস্যময় হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে সে। ও যে লাইনের লোক, তার জন্য ওকে নানা কিসিমের অভিনয় করতে হয়। মানুষ অভিনয় ছাড়া কাছে ভিড়ে না। আর পুলিশের মতো চিড়িয়াদের সাথে খেলতে হলে অভিনয় আরো বেশি করতে হয় এটা ভালোভাবেই জানা আছে তোফাজ্জলের।

 

ওসি মামুন একটা সিগারেট জ্বালালো। রোজার দিন কারো সামনে বসে সিগারেট খাওয়াটা অন্যায় কিন্তু মামুন জানে তার সামনে বসে থাকা লোকটা রোজা নাই। মামুন কোটি টাকার বাজি ধরতে রাজি আছে এটা নিয়ে। আর তারচেয়েও বড় কথা লোকটা ন্যায় অন্যায়ের কোনো ক্যাইটেরিয়ার মধ্যেই পড়ে না। সাদা শার্ট আর লুঞ্জী পরে বসে থাকা লোকটা খুব সাধারণ আবার একই সাথে অসাধারণ। রাস্তায় লেবার শ্রেনীর লোক রোজই দ্যাখে মামুন। তোফাজ্জলও প্রায় একই, খুব একটা রোগা না, চোয়াল দুটো ভাঙা, নাক খাড়া আর গায়ের রঙ কিছুটা তামাটে, চোখের মধ্যে আলাদা কোনো আকর্ষণ নাই। কিন্তু তোফাজ্জলের বেশভূষায় ব্যাপক ভিন্নতা আছে। ওর গায়ের শার্টটা অনেক দামী ব্রান্ডের। হতেই পারে লোগোটা ডুপ্লিকেট, আজকাল ঢাকা শহরে তো সবই ডুপ্লিকেট হয়। দুই চারটা ডুপ্লিকেট কোম্পানি প্রতিমাসে থানাতে টাকাও দিয়ে যায়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে তো ডুপ্লিকেট আইফোন কোম্পানির সন্ধান মিলেছে মহাখালী এলাকায়। এদেশের নকলবাজরা স্টিভ জবসের বাবা। মামুনের ধারনা বাংলাদেশ নকলের মার্কেটে চীনাদেরও পিছে ফেলে দিবে দ্রুত।

 

তোফাজ্জলের শরীর থেকে দারুণ একটা ঘ্রাণ আসছে। কোন ব্রান্ডের পারফিউম সেটা মামুনের জানতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারছে না। সিগারেটে জোরে একটা টান দিয়ে হতাশ হয়ে ধোয়ার সাথে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মামুন। আবার তোফাজ্জলের শার্টের দিকে দেখলো সে। না এটা কোনোভাবেই ডুপ্লিকেট না, আসল পিটার ইংল্যান্ড! একেবারে চকচক করছে। নকল মাল এত উজ্জ্বল হবে না। এত দামি একটা শার্ট পরা লোককে তুই বা তুমি বলতে অস্বস্তি লাগছে মামুনের। আবার ছেড়া লুঙ্গী পরা একটা লোককে আপনি বলাটাও অস্বস্তিকর।

 

কিন্তু পুলিশকে এসব কাটিয়েই চলতে হয়। আর বাংলাদেশে তো মারের উপর কোনো কথা নাই, এখানে টিকতে হলে মার ছাড়া রাস্তা নাই। তাই সরাসরি তুই বলাটাই সেরা। তোর নাম কি? তোফাজ্জল শান্ত হয়ে বলল "এ পি তোফাজ্জল" মামুন আরেকটা ধাক্কা খেল। নামের আগে এপি, এস কে, আর কে তো ধনী লোকদের স্টাইল। রিক্সাওয়ালা টাইপ লোকজনের নাম এমন হয় না সাধারণত! এপি মানে কি!! মানে তো বলা যাবে না স্যার, গুরুর না আছে- তোফাজ্জলের সহজ জবাব। মানে, কিসের গুরু? তুই পীরের মুরিদ নাকি? এই প্রশ্নটা করেই ওসি মামুনের হাসি পেলো।

 

এই পীর দরবেশ টাইফ লোকগুলা খুব মজার হয়। ওদের চেয়ে বড় টাউট দুনিয়াতে কমই আছে। কিছুদিন আগেই রাষ্ট্রীয় একটা প্রোগ্রামে এক সাদা দাড়ির দরবেশ দেখেছে মামুন। লোকটা এত বড় বাটপার যে আস্ত একটা স্বৈরশাসককে এক্কেবারে ঘোল খাওয়াচ্ছে সকাল-বিকাল।

 

 

 

চলবে....