মৃণাল সেনের বাড়িটি রক্ষা করতে হবে

বেলায়াত হোসেন মামুন

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৫, ২০১৯

আমাদের প্রিয়জন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ সড়কে `খুন` হয়ে যাওয়ায় কত যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে, তা আমরা ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করি। আজ জানলাম নতুন একটি তথ্য, জেনে খুব আহতই হলাম, মৃণাল সেনের ফরিদপুরের জন্মভিটা বা বাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে কাজ করার উদ্যোগটা তারেক ভাই নিয়েছিলেন।

২০১১ সালে তারেক ভাই হঠাৎ জানতে পারেন যে, মৃণাল সেনদের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হতে পারে। তখন তারেক ভাই উদ্যোগী হয়ে পুরো বাড়িটির আলোকচিত্র ও ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। সেই কাজটি যখন তারেক ভাই করেছেন তখনকার কয়েকজনের সাথে আজ কথা হলো। তারা বললেন, তারেক ভাই তখন বলেছিলেন শীঘ্রই তিনি ঢাকায় প্রেসক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে দাবিটি সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। কিন্তু তারেক ভাই সে সময়টুকু করে উঠতে পারেননি। এর কিছুদিন পর তারেক ভাইয়ের পিতা প্রয়াত হন আর তারপর তো তারেক ভাইও ‘খুন’ হয়ে গেলেন।

তারেক ভাইয়ের ছোট ভাই নাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা হলো। তিনি বললেন, “হ্যাঁ, ভাইয়া কাজটি (আলোকচিত্র ও ভিডিও ধারণের কাজ) করেছিলেন। আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো সেগুলো।”

এসব জেনে এটুকু বলতে পারি, আজ তারেক ভাই যদি আমাদের মাঝে থাকতেন তবে হয়তো সাত বছরে এ কাজটি হয়ে যেত। আজকে আমাদের এ দাবিটি তোলার দরকারও হতো না। আর যদি মৃণাল সেন এটুকু জেনে যেতে পারতেন যে, বাংলাদেশের মানুষ তার বাড়িটি তার প্রতি শ্রদ্ধায় ও স্মরণে সংরক্ষণ করেছে তাহলে তিনি কী শান্তিই না অনুভব করতেন!

আমি এটুকু ভেবে অন্তরে গভীর দুঃখ অনুভব করছি আর আফসোসবোধ করছি যে, তারেক ভাইয়ের এ উদ্যোগের কথা এতপরে জানতে পারলাম! আরও আগে জানলে হয়তো আমরা তারেক ভাইয়ের এই অসমাপ্ত কাজটি সমাপ্ত করতে একটা উদ্যোগ নিতে চেষ্টা করতাম।

১৪-১৫ বছর আগে উপমহাদেশের সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের বাড়িটি এর চেয়ে আরও করুণ অবস্থায় ছিল। সেই বাড়িটি বাংলাদেশ সরকার সংরক্ষণ করে, সেখানে একটি আধুনিক ভবন গড়ে তুলেছে। সেই কাজটি যদি হতে পারে বা বাংলাদেশ সরকার সেই কাজটি যদি যত্ন নিয়ে করতে পারে তবে মৃণাল সেনের বাড়িটিও আমরা রক্ষা করতে পারবো বলে আশা করছি।

মৃণাল সেনের বাড়িটি রক্ষা করতে হবে, এটাই এখন আমাদের প্রধান দাবি হওয়া উচিত। বাড়িটি রক্ষা করতে হবে ইতিহাসের স্মারকচিহ্ন হিসেবে। স্মৃতি হিসেবে। দেশভাগ আমাদের কতটা ক্ষতিগ্রস্থ করেছে তার স্মারক হিসেবেও বাড়িটি রক্ষা করে সেখানে মৃণাল সেন স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তুলতে হবে। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। ফরিদপুর জেলার মানুষের নিজেদের গর্বের জন্যই এই কাজটি করতে হবে। আর আমরা সারাদেশের মানুষ এ দাবিটি করবো এজন্য যে, আমরা স্মৃতিচিহ্নটি দেখে অনুভব করবো, আমরা কী ছিলাম, কী আছি এবং কী হতে পারি।

লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গদ্যশিল্পী