মেয়েরা গোডাউন আর ছেলেরা ফ্যাক্টরি

পাপিয়া জেরীন

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৭, ২০১৮

কোনো মেয়েরে যদি জিজ্ঞেস করেন, আপনার Obstetric career কি? সে একসাথে অবাক আর বিরক্তির একটা কম্বাইন্ড এক্সপ্রেশন দেবে। পড়াশুনার পরে ক্যারিয়ারের চিন্তাটা খুবই স্বাভাবিক। এই কর্পোরেট দুনিয়া আপনারে স্বাবলম্বী হইতে বলবে নিশ্চয়ই। ক্যারিয়ার প্ল্যানিং নিয়া কত কিছু শিখাবে আপনারে। কিন্তু অবস্টেট্রিক ক্যারিয়ারের কথা কোথাও নাই, না সমাজে না পরিবারে।

একটা মেয়ে পড়াশুনা শেষ করার পর কাজে যোগদান করতে করতে তার বয়স ত্রিশ তো হবেই। স্বাবলম্বী হওয়ার পরেও বাচ্চা নেবে কি নেবে না, তা নিয়া ভাববে অন্তত এক বছর। ততদিনে মেয়ের বয়স একত্রিশ কী বত্রিশ। এখনকার ডাক্তাররা অবশ্য মেয়েদেরকে বলবে পঁয়ত্রিশের মধ্যে সন্তান নিলেই চলবে। কারণ ডাক্তাররা এখন কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডপন্থী, এনজিও চিন্তার ধামাধারী। অথচ তিক্ত হইলেও সত্য যে, মেয়েদের বাচ্চা ধারণের জন্য সঠিক বয়স পঁচিশ বা তার আগে।

অনেকেই হয়তো জানে না, মেয়েদের শরীর গোডাউনের মতো। এরা একঝাঁক ডিম নিয়া জন্ম নেয়। মায়ের পেটের ভেতরে থাকতেই মেয়ে শিশুর পেটে তৈরি হয় আট থেকে দশ লাখ অস্ফুট ডিম। জন্মের পরে একটা সময় পরপর এই ডিমগুলার স্ফুটন হইলে ওভারি থেকে বের হয়ে আসে। কৈশোরেই মেয়েদের জন্মগতভাবে পাওয়া ডিমগুলি অর্ধেকে (আনুমানিক সাড়ে তিন লাখে) নামে।

৩৫ বছর বয়সী মেয়েদের ডিমের সংখ্যা দাঁড়ায় গিয়া ১০% এ, ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সে নামে ৫% এ। আরো জরুরি বিষয়, সংখ্যার সাথে সাথে ডিমের কোয়ালিটিও নিচের দিকে নামতে থাকে। অন্যদিকে ছেলেদের বিষয়টা ভিন্ন, তাদের নতুন শুক্রাণু তৈরি হয় প্রতিনিয়ত। এজন্য অনেক ডাক্তাররাই মজা করে বলে, মেয়েরা গোডাউন আর ছেলেরা ফ্যাক্টরি।

যাই হোক, একটা মেয়ে এই আধুনিক প্রতিযোগিতার জীবনে মানসিকভাবে কখনও স্থির হয়ে বলতে পারবে না, কখন সে একটা বাচ্চা নেবে। কিন্তু প্রকৃতি ও শরীর অনেক আগেই তার জন্যে রেডি। প্রগতিশীল মেয়েরা যে সময় মনস্থির করে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। আর মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ জেনেটিক ডিজঅর্ডার নিয়ে শিশুর জন্ম হইতে থাকে।

মেয়েদের ২০ বছরের মধ্যে ফার্টিলিটি রেট থাকে সবচেয়ে বেশি (৭৪%), গর্ভপাতের হার থাকে কম, ডাউন সিন্ড্রোম নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুর হারও কম ( ১৩৪০ জনে একজন) থাকে। বয়স ৩০ এর মধ্যে ফার্টিলিটি রেট কমে হয় ৬২% আর কিছু রিস্ক যুক্ত হয়। গর্ভকালীন ডাইবেটিস ও প্রেশার বেড়ে গিয়ে প্রিএক্লামশিয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে থাকে। জেনেটিক ও নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার নিয়ে শিশুরা জন্ম নেয়। ডাউন সিন্ড্রোমের সম্ভাবনা বাড়ে ৯৪০ জন শিশুর মধ্যে একজন।

এইভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অপেক্ষাকৃত পুরাতন ডিম থেকে তৈরি হওয়া নবজাতকগুলির নানান জটিলতা… এলার্মিং পজিশনে নিয়ে আসতেছে। মেয়েদের তাই বলতেছি, আমাদের গড় আয়ুর অর্ধেক সময়ে এসে প্রজননতন্ত্রের ক্রিয়াশীলতা স্থবির হইতে শুরু করে। সময় থাকতে আপনার ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আপনার Obstetric career নিয়েও ভাবেন, প্লিজ।