রক্ত চা

আফসারা মীম

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮

বিকেলের ঘুমে স্বপ্নেরা মইরা গেলে যখন আসরের আজান একা সুরে বাইজা উঠলো, একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘইটা গেলো। আমি স্বপ্নে দেখলাম আমার সাদা গেঞ্জি জুইড়া কালচে লাল রক্ত মাখামাখি আর হাতে একখান ধারালো ছুড়ি। আমি মানুষ খুন করবো এইরক যে ভাবিনাই তা না কিন্তু স্বপ্নগুলান বাস্তব যখন মনে হয় তখন ঘুম ভাঙনের পর প্রচন্ড সুখবোধ জন্মায়, ভেতর থেইকা বইলা উঠি উফ ভাগ্যিস স্বপ্ন আছিলো! আইজ মনে হইলো খুন কইরা যাইতেছি আসলে প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন। বাহির হইয়া শ্রীনিকেতন বাজার ঘুইরা সন্ধ্যা সারে সাতটা বাজে যখন ডিপার্টমেন্টে সিঁড়িতে বইসা বিড়ি ফুকতেছি আমি নন্দ আর নিষাদ, তহন পুরোপুরি আনমনে একখান পিঁপড়া (ভুল কইরা) মইরা গেলো স্যান্ডেলের তলায় পইড়া তখন প্রকান্ড আকারের কষ্টবোধ জন্মাইলো আমার ভেতর। হায় প্রাণ তো! হোক পিঁপড়া বা মাছি বা যা কিছু (যেখানে আমি দরকার ছাড়া গাছের পাতাও ছিঁড়ি না)। অথচ নিজের জীবন নিয়া কোনো ফ্যাসিনেশন আমার ছিলো না, বহুতবার মরতে চাইছি, বাঁচতে চাইছি খুব মাঝে মাঝে। মরতে চাওয়ার ইচ্ছাগুলান মইরা গেলে বাঁচার সাধ জাগে বইলা আমার মনে হয় আর বাঁচতে বাঁচতে ধৈর্য্য হারাইলে মরার গন্ধে বুক ভইরা উঠে।

 

আমার জীবন হুট কইরা আটকায়া গেছে, এত স্থির সময় আমার মতোন অস্থির মানুষের জীবনে আইবো এইটা আমি সমেত আমার পরিবার বা আশেপাশের কারো কল্পনায় কখনো ছিলো না। যাই হোক পৃথিবীতে হইতে পারেনা বইলা কিছু যখন নাই, তখনো আমার মনে হয় আছে এমন অনেক কিছুই। যেমন আমি সুষ্পষ্ট একটা নকশা বানাই যেটা সাকসেস হয়া গেলে আমি নিজে সেইটারে ভাইঙা দিই তারপর তার বিপরীতে আরেকটা অন্যকিছু মেরামত শুরু করি। যা কিছু আমার ছিলো তার কিছুই আমি আমার করতে পারিনাই কারণ যা কিছু আমার তা কিছুর প্রতি আগ্রহবোধ ছিলো না বইলা। পড়াশোনা বা প্রেম কোনোটাতেই কখনো থিতু হইতে পারিনাই বইলা বহুত মানুষের বহুত কথা আমারে শুনতে হইছে ছোটকাল থেইকা, যদিও কে কি কইলো/কে কি ভাবলো সেইটারে গন্যই করিনাই কোনো সিচুয়েশনে। তবে সবকিছু ছাপাইয়া প্রচন্ড ভালোবাসার একটা শক্তি আমার ভেতর অন্তর্নিহিত আছে আমি টের পাই ভেতরে ভেতরে।

 

গতকাল দমবন্ধ একটা পরিবেশ ছিলো শ্রীনিকেতনে, হুস পাইতে ছিলাম না কই যাবো, কি করবো, কই বসবো; আজকে তার বিপরীত আবহাওয়া____ ঝিরঝিরে বাতাস সারাদিনে দুইদফা বৃষ্টিও আছিলো। কিন্তু গতকাল শরীরজুইড়া শান্তি ছিলো আজ ইন্টার্নাল কিছু পেইন। প্রচন্ড সংবেদশীল আমার শরীর এটুকু আমি জানতাম, এই আবহাওয়া আমারে আরেকটু বুঝায়া দিলো, শান্তিনিকেতন ঢুইকা একদফা পিরিয়ড হবার সাতদিনের মাথায় আরেকদফা পিরিয়ডের পেইন নেওয়া দুর্বিসহ হইলেও আমি শান্তিতে আছি এটুকু অস্বীকার করার উপায় নাই।

 

ডিপার্টমেন্টের দুপুরের ক্লাসগুলাতে প্রচন্ড ঘুম পায়, আশেপাশে বন্ধুরা খুব উৎপাত করে ঘুমের। গুতাগুতি চুল টানাটানিতে সে ঘুমের ব্যঘাত ঘটে না, স্যারের বকবকানি জুইড়া আমি কবিতার গন্ধ পাইছি আজকে; তারপর হইলো গানের রিহার্সাল। একটু ঘরোয়া আড্ডা শেষে আমার হোস্টেল নামক রিহ্যাভে ঢুকতেই হয়। নিজের বলতে সময় থাকে সন্ধ্যার পরের সময়টুকু। এই সময়টারে আমার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সময় মনে হয়। মনে হবার যথযথ কারণও আছে।

 

আমার রুটিন গুলানের বিস্তর পরিবর্তন ঘইটা গেছে জীবনের সাথে। পাখির জীবন কখনো ছিলো না টাইপ হতাশা হইতে আমি মুক্ত অহন। কিন্তু মানুষ হইয়া জন্মানোর কারণে কোথাও সেইটা বাঁধা পইড়াই থাকে তা যতই পাখির জীবন ভাইবা বইসা থাকি। অথচ এই শেকল আমি যত্ন কইরা আগলায়া রাখছি, ভালোবাইসা বন্দি হইছি, তার চাবিও আমার হাতে______ বিন্দুমাত্র খোলার আগ্রহ না দেখাইয়া আমি দিনরাত্রি পাড়ি দিয়া যাইতেছি।

 

আমি ফিরা যাইতে চাইনা আর কোথাও, সতেরো তারিখের আগের কোনো সময়ই আমারে ফিরাইতে পারবেনা, না ফিরাইতে পারবে কোনো ইমোশন। ইল্যুশন ভেদ কইরা আসা মানবী থেকে একটা পরিপূর্ণ দানবে রূপান্তরিত হওয়া আমারে আমি সাধুবাদ জানাই সময়ে অসময়ে আর শান্তিযাপন করি এইসব পশুপাখি গাছপালা আর তাদের যারা ভালোবাইসা আছে আমারে আমার মতো কইরা। জীবন বা মরণ আপাততো কোনোকিছু নিয়াই আমার আর ফ্যাসিনেশন নাই কেবল সকাল বিকাল বুদ্ধদার দোকানে বইসা চা খাওয়া ছাড়া।

 

 

৩১অগাস্ট`২০১৮

শ্রীনিকেতন গার্লস হোস্টেল