লুনা আহমেদের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ০১, ২০১৮

হেমলক

পৃথিবীর এক কোণে ধুলো
আর এক কোণে গুটি কয়েক মাতাল কবি
লিখে রাখলো—
পৃথিবী ধৌত অতীব জরুরি।

সে কোণে না গিয়েছে কোনো পাঠক,
না পৌঁছেছে সেথায় কোনো ঈশ্বরের চোখ।

বহুবছর পর কবিগণ বের হন পৃথিবী ভ্রমণে
পুরো পৃথিবীই ধূলো ময়লায় একাকার,
দেখেন মাতাল কবিদের লেখা
লেখার দিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে অবাক তারা—
অদৃশ্য হচ্ছে লেখা চোখের জলে।

কোনো মাতাল কবির চোখে জল থাকে না
কান্না থাকে বুকের গভীরে
কবিরা উন্মাদ থাকে লেখা নিয়ে।

কবি হৃদয় থেকে সেই কবিতা মুছতে মুছতে
পুরো লেখাও মুছে ফেললো
আর মনেমনে উচ্চারণ করলো
এ কবিতা—
পৌঁছবে না যখন কারো দৃষ্টিপটে
তখন হৃদয়পটে থেকেই বা কী লাভ!

তুমি চলে যাও কবি—
তোমার আত্মহত্যা করা প্রয়োজন এখন।

বৃত্তাদি

জীবন হলো একটা ‘বৃত্ত’
যার—
       কেন্দ্র থেকে পরিধি
       পরিধি থেকে বৃত্ত
এর বাইরে আমরা যেতে পারি না।
অথচ, আমরা একে বর্গাকৃতি ধরে নিয়ে
চারকোণায় গিয়ে নিজেকে আঁটকাতে চাই।

       অদ্ভুত হলেও সত্য
       মুক্তি মেলে না।
       না দেহের, না মনের।
ঘূর্ণন চলে; ঘুরতে থাকি
ক্লান্ত হই; থেমে যাই।

নিয়মের বাইরে যখন খুব অনিয়ম
       তখন অসুস্থ হই
       প্রথমে আত্মা
       পরে দেহ।
       তারপর দুজনে
কেন্দ্রে এসে জড়ো হয়।
আর ছোঁয়া হয় না পরিধিকে।

বিপুল ক্ষুধা

আকাশে সাদা বাতাবি লেবুর মতো ঝুলে আছে চাঁদ
জেনে রাখো—
একদিন তাকে খেয়ে ফেলবে ক্ষুধার্ত পৃথিবী।
হাতের নাগালে যা কিছু আছে
সব হাতে আনবে ক্ষুধার তাড়নায়।

জগৎ জুড়ে ক্ষুধার বসবাস,

ভাতের ক্ষুধা— জাতের ক্ষুধা
পাওয়ার ক্ষুধা— হারানোর ক্ষুধা
ক্ষুধা আর ক্ষুধা।

এক জীবনের পেটে জ্বলে শুধু ক্ষুধার উনুন
কিছুতেই তার উপর বসানো হয় না একটি আশাভরা হাড়ি।

যে উনুনের তাপ বাড়ছে
         উত্তপ্ত হতে হতে
         খেয়াল রেখো— সুন্দর পৃথিবী যেন পুড়ে না যায়।

বিবর্তনের মিথ্যে ধাপ

জলের ঢেউ গড়িয়ে পড়ে
গড়াতে গড়াতে শুকিয়ে যায়।
গড়াতে গড়াতে সাগরে মিলায়।

ক্ষতগুলো শুকায় না
দাগ কেটে রাখে অদৃশ্যভাবে
ভিতরে ভিতরে রক্তক্ষরণ।

কষ্টের দাগ বিলীন হয়
হৃদয়ের গহীনে— আঁশটে যন্ত্রণা লেগে থাকে
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস নিজেকে জড়ায়।

থেমে থাকে না সময়
থামে না আবেগ
ভালোবাসা ক্রমশ বাড়ে।

এত কিছু হয়ে যায়
তবুও মানুষ ভুল করে
প্রেমে পড়ে আবার নতুন।

বিবর্তনবাদ চলছে
যুগযুগ ধরে বাঁচার জন্য,
ভালো থাকার ব্যর্থ প্রয়াস।

বেওয়ারিশ কবর

হাঁটুতে ভর করে এগিয়ে আসা স্বপ্নেরা
জীবনের তীর ধরে হাঁটে,
পাশ দিয়ে— কোনো নদী বয়ে গেলে— স্বপ্ন
তুমি নদীতে সাঁতার দিতে চাইবে!
ঘোলাজলে স্নান সারতে চাইবে;
নাকি কিনারে কিনারে ঢেউগুলো গুনতে চাইবে?

মাঝিহীন কোনো নৌকা কি নদী দিয়ে সাগরে যেতে পারে!
দুঃসাহস দেখাবে?
নাকি স্বপ্নের ডানায় ভর করে—
উড়বে বিরামহীন অদৃশ্য আকাশে?

আকাশ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা
স্বপ্নে বিভোর,
সেথায় তুমি কিভাবে দাঁড়াবে?
তার চেয়ে হামাগুড়ি দাও
চলে যাও ধীরে ধীরে;
যদি কোনো বেওয়ারিশ কবরের সন্ধান পাও—
ঢুকে পড়ো ভিতরে,
আর গোপনে গোপনে
মৃত্যু কে ভালোবাসো।

মৃত্যু জীবনের কথা বলে—
মৃত্যু ভালোবাসার কথা বলে।