সংগৃহিত

সংগৃহিত

হিন্দু নই বলে কি আমার শুনতে বারণ?

অনসূয়া যূথিকা

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৩, ২০১৮

আমি তখন খুব ছোট,যখন শাস্ত্রীয় নৃত্য অভ্যাস করছি খুব মন দিয়ে শিখছি ভূমিপ্রণাম,গণেশ বন্দনা এত ভালো লাগতো সুর ও ছন্দে সেই গণেশ স্তুতি ৷ আজও গণেশ বন্দনার সুরটা গুঞ্জরে আমার মনে নিভৃতে আমি তো ধর্ম মতে মুসলিম ,কোরাণপাঠের সুর যেমন আমার ভালো লাগে তেমনি গণেশ বন্দনার শাব্দিক উচ্চারণ ও প্রিয়৷মহালয়ার শিউলী সুরভিত ভোর বা দূর্গা পূজায় যখন মন্দিরের মাইকে ভাসে দূর্গাস্তোত্র, কি ভালোইনা লাগে শুনতে ৷ যেমন ভাল লাগে শুনতে আযানের ধ্বনি ৷ ব্রাহ্ম মুহুর্তে যখন চরাচর ব্যাপি ধ্বনিত হয় আযানের সুর ঘুম ভেঙ্গে মনে হয় যে আমার মানব জনম সার্থক ৷ তেমনি ভোরে যখন আশপাশের কোন ঘর থেকে ঘন্টা ধ্বনি বাজে, বেদগান কি স্তোত্রপাঠ হয় সেটাও শুনতে ভাল লাগে ৷ আমি হিন্দু নই বলে কি আমার শুনতে বারণ? নাকি ভিন্ন ধর্মের ভালো কিছু দেখতে নেই, কোনটা? এইদেশের খুব কম মুসলমান আছেন যার বংশতালিকা খুঁজলে উর্ধ্বতন তৃতীয় নাহয় চতুর্থ পুরুষে কেউ হিন্দু নেই ৷ পদবী দেখুন, কি বংশ তালিকা খুঁজুন, অধিকাংশ মুসলমানই ধর্মান্তরিত নিম্নবর্ণ হিন্দু । সবাইই নয় নিশ্চয়ই তবে একটা বড় অংশ তাইই বটে । তবু যেকোন উৎসবে, পার্বণে উল্টোপাল্টা বক্তব্য কেন ? ব্যবহার্য সামগ্রীর সঙ্গে হিন্দুয়ানি সম্পর্কের ধুঁয়া তোলা কেন ? ডালা কুলা সব হিন্দুর ? প্যাঁচা, ইলিশও ? তবে আর মুসলমানের রইলো বাকি কি? এতো সব কূটকচালে না গিয়ে বরং তাদের জানা উচিৎ সনাতন ধর্ম একটা উদার ধর্ম ৷ একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী যাকে চলতি কথায় হিন্দু বলা হয়, তার অন্য ধর্মাবলম্বীর সাথে মেলামেশায় তার ধর্ম তাকে আটকায় না, আটকায় যা তা হলো আচার মাত্র ৷ ঈদের জামাতের পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায়নি বলে ,কোরবানী আর ঈদের নামাজ পড়া হয়েছে কোন মন্দির , আশ্রমের মাঠ বা পূজার প্যান্ডেলে ৷ যেরকম ছবি ফেসবুকে আপলোড করা নিয়ে ফেসবুকার ভাইগণ চায়ের কাপে প্রায়শ তুলছেন ঝড় ৷ এই রকম ঘটনা এই প্রথম না ৷ একজন মুসলিম নামাজ পড়ে কেবলামুখী হয়ে, সামনে কোন বিগ্রহ না থাকলেই হলো ৷ নামাজের ভিতর ও বাহিরের যেসব শর্ত আছে, নামাজ শুদ্ধ করতে তা জানেনা বেশীরভাগ মানুষ ৷ নিজের ধর্মকে জানুন, জানুন ইতিহাসকে ৷ আপনারা না জানলেই তো ইতিহাস বদলে যাবেনা ৷ এদেশে জোর করে মুসলমান বানানো বা ধর্মান্তরিত যেমন হয়েছে তেমনই অন্য ধর্মের কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করার ঘটনাও আছে ৷ উদাহরণ টানা যাবে ভুরিভুরি। দেশ বিভাগ যেমন সত্য, সত্য মুক্তিযুদ্ধ তেমনি সত্য হিন্দুদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়া যা স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরেও বাস্তব! আবার সেই ছাড়া ভিটার তুলসি মঞ্চ না ভেঙ্গে সেখানে কোন মুসলিম নারীর গলবস্ত্রে সন্ধ্যা প্রদ্বীপ দেয়াটাও সত্য ৷ সেইরকম বাড়িগুলোর পুকুরপাড়ে থাকা ছোট ছোট শিবমন্দিরগুলো রেখে দেয়া এটাও বাস্তব ৷ কাশ্মিরে ঘটা কোন অনভ্রিপেত ঘটনায় তাই আজও আমরা উদ্বেলিত হই, আসানসোলের সেই ইমামের ছেলের মৃত্যু আমাদের নাড়া দেয়। সঙ্গে শিক্ষাও পাই বড় কম নয়। এদেশটা এইরকমই একে এত সহজে তো বদলানো যাবে না ।