নাঈমুল হাসানের ২ কবিতা
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯
শৈশব
আমার সোনালি শৈশবের কথা মনে পড়ে।
মনে পড়ে, কী দারুণ উৎসাহ নিয়ে-
দুটাকা দামের ডালপুরি খেতে ভালোবাসতাম আমি।
সেই দুটাকার ডালপুরিতে যে স্বাদ ছিল,
সেই স্বাদের সন্ধান এ শহরের বিলাসী খাবারগুলোতে একরত্তি নেই।
গ্রাম্য শৈশবের স্মৃতিগুচ্ছ আমার মনে পড়ে।
মনে পড়ে, লাউয়ের ডগায় শিশির আর রোদের খেলার অমিয় সৌন্দর্য।
মাটির ছোটো ছোটো ঘরগুলোতে যে পল্লি শৈল্পিকতা পেতাম,
আজ আধুনিকতার নামে গ্রামের বুকে দৈত্যের মতো গড়ে ওঠা-
কংক্রিটের বাড়িগুলোকে গুড়িয়ে দিতে বড্ড ইচ্ছে করে।
আমার দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পড়ে।
মনে পড়ে, মিসির আলি কিংবা তিন গোয়েন্দা পড়ার দিনগুলো।
সেই বইগুলোর প্রতিটি পৃষ্ঠায় যে অবর্ণণীয় রোমাঞ্চ আমাকে হাতরে গেছে,
সেগুলো নিয়ে নির্মিত নিছক চলচ্চিত্রগুলোই যেন উপহাস করে তার লেখকদের!
আমার ইচ্ছে করে শৈশবে ফিরে যেত
যেখানে কোনো ব্যস্ততা নেই,
অপূর্ণতা নেই-
যেখানে সন্তুষ্ট থাকার এক অলৌকিক মন্ত্র আছে,
সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরবার তাড়া আছে,
কিংবা আছে ছেলেমানুষি করবার চূড়ান্ত বৈধতা।
আমার শৈশব,
আমার অজস্র আমি যেখানে হারিয়ে আছে।
আমি আরেকবার খুঁজে নিয়ে, ফিরে যেতে চাই অমৃত শৈশবে!
মিথ্যা বলা মহাপাপ
ক্লান্ত পথিকের মতো কখনোবা আমি হেঁটে যাব,
বিদগ্ধা নগরীর বুকে।
অথচ শীতলতার স্পর্শ ছুঁয়ে ক্রমেই
আমি আক্রান্ত হব অবিচ্ছেদ্য এক অন্ধকারে।
আমি হেঁটে বেড়াব অভাবের প্রাচীর জুড়ে
ক্ষুধার্ত শহরের রাস্তায়।
হাতের মুঠোয় পাঁচ টাকার চাকরির খবর নিয়ে
আমি তৃষ্ণার্ত হব একটি সুপেয় চাকরির জন্যে।
দেয়ালে ঝুলানো ভাঙা আয়নার মতো,
দোলতে থাকে আমার বাস্তবতা।
মিথ্যা স্বপ্নের নক্ষত্র ঝুলিয়ে আর কতদিন অপেক্ষা করব,
চোখ বুজে আসার মতো একটা শান্তির রাতের।
সুতরাং হেসে ভালো আছি বলে দেয়া মিথ্যেটা
এখন আর মিথ্যে মনে হয় না,
মনে হয় যেন,
প্রচণ্ড গরমে মুখের সামনে
নিরলস ঘুরে চলা ফ্যানের বাতাসের মতোই স্বাভাবিক।
অথচ কী দারণ উৎসাহেই না একদিন বিদ্যালয়ে শিখেছিলাম-
মিথ্যা বলা মহাপাপ!