নিতির গল্প

উপন্যাস ২৩

অমিত কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত : মে ১৯, ২০২০

এই, কী হলো ওঠো; শুনছো, তাড়াতাড়ি ওঠো না?
কি হলো আবার? এই সাততাড়াতাড়ি ডাকছ কেন? সবে তো ছয়টা বাজে। আরেকটু ঘুমাই না?
শোনও, রাখি ঘরে নেই।
ঘরে নেই তো কি হয়েছে? বাথরুমে গেছে হয়তো?
না না, আমি দেখেছি, বাথরুমেও নেই।
তাহলে বোধহয় ছাদে আছে। ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে...

দীপেন বাবুর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে পার্বতী দেবী বললেন, আরে না। আমি ছাদেও দেখেছি। ছাদে নেই। বাড়ির কোত্থাও নেই।
দীপেন বাবু ধড়ফড় করে উঠে বসল। চোখ কপালে তুলে বলল, কি বলো, ও তাহলে কোথায় গেল?
পার্বতী দেবী কাঁদো কাঁদো হয়ে, রাখি বোধহয় পালিয়েছে? ওর মোবাইল বন্ধ। এখন কি হবে?

দীপেন বাবু এক লাফে খাট থেকে নিচে নেমে এলো, কি বলো পালিয়েছে! আজ নন্দ বাবুরা আসবেন। কী সর্বনাশ! দীপেন বাবু ছটফট করতে থাকলেন।
পার্বতী দেবী দীপের ঘরের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা মারতে মারতে, দীপ এই দীপ, শীঘ্রি দরজা খোল। দীপ, এই দীপ— দীপ—
দীপ দরজা খুলে বলল, কি হলো মা, এমন করে ডাকছো কেন? মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে, কারো কি কিছু হয়েছে? দীপের চোখেমুখে আতঙ্ক।
পার্বতী মজুমদার দীপের সামনেই কেঁদে উঠল, দীপ, রাখি বোধহয় পালিয়েছে।
কী বলো দিদি পালিয়েছে? কখন? কার সাথে? কীভাবে পালাল?
আমি তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। মা কাঁদতে কাঁদতে, এখন কি হবে দীপ, তুই যেখান থেকে পারিস রাখিকে খুঁজে নিয়ে আয়।
দীপের মাথায় চক্কর দিয়ে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু অন্ধকার দেখতে থাকল। কিছুক্ষণ পর, মা, দিদি কি মোবাইল নিয়ে গেছে?
না, ওর ফোন তো আমার কাছে।
শীঘ্রি ফোনটা দাও তো।

মা ফোন দিল। ফোনটাতে দীপের ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া ছিল। ও নিজেই পছন্দ করে কিনেছিল ফোনটা, দিদির জন্য। ডায়াল লিস্টটা দেখল দীপ। ফোনে মিলি, আয়ানের নাম্বারে বারবার কল করা হয়েছে। মাকে এদের সম্বন্ধে জানতে চাইল। মা দুজনকেই চেনে। আয়ান একসময় পার্বতী মজুমদারের সঙ্গীত স্কুলে গান শিখত। পার্বতী মজুমদার ব্যপারটা বুঝতে পারলেন। চোখ মুছে শাড়ি বদলে নিলেন। তার মিলির কথা মনে পড়ল। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে পার্বতী দেবী নিজে মিলিদের বাড়ি রওনা হলেন। মিলি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল, ও নিশ্চয় কিছু জানবে। পোষাক বদলে দীপেন বাবুও সঙ্গে এলেন। দীপ ওর মোটরসাইকেল নিয়ে মা-বাবার গাড়ি ফলো করে করে এগিয়ে গেল।

মিলিরা ঘুমিয়ে ছিল। ওদের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙল। মিলি প্রথমে অস্বীকার করলেও, শেষে সবার জেরার মুখে, মিলির মায়ের ধমক খেয়ে, আয়ানের কথাটা বলে দিল। মিলি, মিলির মাকে সাথে নিয়ে ওরা শেখহাটি রওনা দিল। আয়ানের বাড়িতে এসে আয়ানকে পাওয়া গেল না। আয়ানের বাড়ি থেকে বিশেষ কোন সহযোগিতার আশ্বাসও পাওয়া গেল না। এক প্রকার অপমানিত হয়েই দীপেন বাবুকে বাড়ি থেকে বের হতে হলো। আর কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকল না। আয়ানের সাথেই রাখি পালিয়েছে। দুজনেরই ফোন বন্ধ। দীপেন বাবু বাসায় চলে এলেন। চেয়েছিলেন বিষয়টা সবার কাছ থেকে গোপন রাখবে। মেয়েকে খুঁজে ধরে নিয়ে আসবে। তারপর যা ব্যবস্থা হবে সেটা পরের ভাবনা। কিন্তু বিষয়টা গোপন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অন্তত ওর ভাইদের অবিলম্বে জানান দরকার।

দীপেন বাবুরা বাড়ি আসার পর ভাইদের ফোনে ডাকল। দেখতে দেখতে দীপের কাকা-কাকিমারা ওদের বাড়িতে চলে এলো। তাদের দেখাদেখি কাকাতো ভাইয়েরাও বাড়িতে এলো। সবাই মিলে একই কথা, কোথায় গেল? কার সাথে গেল? কখন গেল? কীভাবে গেল? কিছু নিয়ে গেছে? কত টাকা? গয়না? বিস্তর প্রশ্ন। পার্বতী দেবী আয়ানের কথা বললে, সবাই আঁতকে উঠল। তড়িতাহতের মতো শক পেয়ে চোখ মোটামোটা করে কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে বসে থাকল।

ভাইয়েরা বলল ব্যপারটা সহজে মিটবে না। আমাদের এখনি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা দরকার। পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া রাখিকে উদ্ধার করা মুশকিল হবে। বউয়েরাও কথাটায় সমার্থন করল। জুয়েলার্সের ব্যবসা থাকাতে এসপি সাহেবের সাথে দীপেন বাবুদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। থানার সাথেও নিয়মিত সখ্য বজায় রেখেছে দীপেন বাবু। ওরা যশোরে এসপি সাহেবের সাথে দেখা করল। এসপি সাহেব বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন। থানায় ফোন করলেন। ইমিডিয়েট অ্যাকশনে যেতে বললেন। দীপেন বাবু এসপি সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে থানায় এসে মিসিং ডাইরি করল। পুলিশ আয়ানের বিরুদ্ধে নারী অপহরণের চার্জ আনল। সাথে আয়ানের বাবা-মাকেও অভিযুক্ত করা হলো।

পুলিশ মোবাইল কল ট্রাকিং করল। ফোনের লোকেশন রাখি ও আয়ানের বাড়ি দেখাচ্ছে। অর্থাৎ নিজেদের ফোন ওরা সাথে নেয়নি। পুলিশ বাধ্য হয়ে আয়ানের বাবাকে লকাপে নিয়ে আসল। মিলিকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করল। মিলির কথামতো আয়ানের বন্ধুদেরকেও খোঁজ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। এত কিছুর পরও রাখির কোনও খোঁজ পাওয়া গেল না। পুলিশ পাশের জেলাগুলোতেও রাখির নিরুদ্দেশ হবার বিষয়টি জানিয়ে দিল। স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতার আন্তরিকতায় ব্যপারটিকে সত্যিকার অর্থেই পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াল।

দীপের বাবুর অসহায়তার সীমা ছাড়াল। তিনি তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের ফোন করলেন। পার্বতী দেবীও তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের ফোন করলেন। দীপ ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ফোন করে বিষয়টা জানাল। আধা ঘণ্টার মধ্যে বাড়িতে কাছাকাছি থাকা নিকট আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবে বাড়ি ভরে গেল। বাড়ির কাজের লোকের কানেও কথাটা চলে গেল। বিষয়টা আর গোপন থাকল না। সবাই পুলিশের সহযোগিতা নিতে বলল। নিজের নিজের মতো করে খোঁজখবর করতে থাকল। কান্না, হা-হুতাশ, সমবেদনা, সান্ত্বনা, আশ্বাস, ভরসায় বাড়িতে এক অদ্ভুত অসহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হলো।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল। পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, বন্ধু-বান্ধব, কারো সাহায্যেই রাখিকে পাওয়া গেল না। একটা গোলক ধাঁধার ফাঁদে পড়লে যেমন হয়, সবার অবস্থা তেমন হয়ে দাঁড়াল। এই কয়েক ঘন্টার মধ্যে দীপের বাবার কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেল। প্রেসার বেড়ে গেল। পার্বতী মজুমদারের বাবা ফরিদপুর বসে রাখির কথা শুনে হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। শহরে চাঞ্চল্য দেখা গেল। শহরজুড়ে মুখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াল এই ঘটনাটা।

মাগুরার মোহাম্মদপুরে বসে নন্দ বাবুরাও এ ঘটনা জানতে পারলেন। তাদের যশোর আসার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেল। নন্দ গিন্নি বারবার ঠাকুরের চরণে মস্তক নত করলেন, এই অলক্ষ্মী মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে হয়নি বলে ঠাকুরকে কৃপানিধি, অনাথের নাথ, ভালো মানুষের সহায়, বলে ধন্যবাদ দিতে থাকলেন। একদিকে পুলিশ আয়ানের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে যখন অবিশ্রাম জেরা করছে, তখন অন্যদিকে দীপ তার বন্ধু-বান্ধবদেরকে পাশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দিল দিদিকে খুঁজে বের করতে। গোটা বিশেক মোটরসাইকেল তীব্র শব্দ করে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। দীপ নিজেও কয়েকজন বন্ধু নিয়ে কুষ্টিয়া অভিমুখে রওনা হলো।

দীপেন বাবু প্রেসার বেড়ে শয্যাশায়ী হলেন। প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পার্বতী মজুমদার মেয়ের শোকে ঘন ঘন মূর্ছা যেতে থাকলেন। কয়েক দিন পর আজ নিতিশ বাবু উঠে বসলেন। তার ডান পা টা যে আর নেই, তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। অনেকদিন পর আজ একটু তরল খাবার খেলেন। ছোট্ট শিশুকে যেভাবে যত্ন করা হয়, নিতি ঠিক সেভাবেই বাবাকে যত্ন করছে। বাবার গা মুছিয়ে দেওয়া, খাওয়ানো, সময় মতো ওষুধ দেওয়া, সব নিতির ভালোবাসার তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয়ে মা স্ত্রীর মতোই সেবাযত্ন করছেন, সেসময় নিতি বাইরের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আকাশ দেখে, হাসপাতালের পেছনের মরা নদী দেখে, দেখে মানুষের জীবন যুদ্ধ। মামা আছেন, নিতিশ বাবু বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত থাকবেন।

নিতির মাঝে মাঝে নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে, ঢাকায় দীপের ফ্ল্যাটে যাবার পাপেই বাবা এমন শাস্তি পাচ্ছেন। বাবার কষ্ট নিতির কাছে দ্বিগুণ দুঃখ হয়ে ফিরে আসছে। তখন নিজেকে সামলাতে পারছে না। নিরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে কপোল ভিজে যাচ্ছে। আজ শুক্রবার। সান্ধ্য আরত্রিকে ভক্ত সমাগম বেশি হয়। স্নান সেরে বিকালের দিকে মাকে নিয়ে যশোর রামকৃষ্ণ মিশনে গেল নিতি। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের উদার মতবাদ নিতিকে বড় বেশি আকৃষ্ট করে। বিবেকানন্দ পড়লে বুকে বল পায়, সাহস সঞ্চার হয় হৃদয়ে। রামকৃষ্ণ পড়লে শিক্ষা পায় উদারতার, সর্বধর্ম সমন্বয়ের। অন্যদিকে মা সারদার কথায় শান্ত হয় মন, অন্তর পবিত্র হয়ে যায়।

নিতি এক জায়গায় পড়েছিল "যত লোক দেখি, ধর্ম ধর্ম করে— এ ওর সঙ্গে ঝগড়া করছে, ও ওর সঙ্গে ঝগড়া করছে। হিন্দু, মুসলমান, ব্রহ্মজ্ঞানী, শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব— সব পরস্পর ঝগড়া। এ বুদ্ধি নাই যে, যাঁকে কৃষ্ণ বলছ, তাঁকেই শিব, তাঁকেই আদ্যাশক্তি বলা হয়; তাঁকেই যীশু, তাঁকেই আল্লা বলা হয়। এক রাম তাঁর হাজার নাম। এরকম মনে করা ভাল নয় যে, আমার ধর্মই ঠিক, আর অন্য সকলের ধর্ম ভুল। সব পথ দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায়। আন্তরিক ব্যাকুলতা থাকলেই হলো। অনন্ত পথ, অনন্ত মত।"

ঠাকুর রামকৃষ্ণের এই কথা ক`টা নিতির জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। জীবন বোধ বদলে দিয়েছে। এখন কোন ধর্ম, কোন মত, কোন পথকেই তার মন্দ লাগে না। মানুষের স্বাধীনতা আছে, নিজের মতো পথ চলার। ধর্ম পালন কার বা না পালন করা সবটাতেই মানুষের স্বাধীনতা দরকার। মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে চলতে দেওয়া দরকার। চাপিয়ে দেওয়া মত, পৈত্রিক সম্পত্তির মতো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ধর্ম, কিংবা পারিবারিক-সামাজিক সংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে নিজের স্বাধীন রুচি অনুযায়ী চলতে পারার নামই স্বাধীনতা।

নিতি এমন উদার মতবাদ, এমন পরমতসহিষ্ণুতা অন্য কোথাও দেখেনি। ঢাকায় কোচিং করার সময় একবার কয়েক জনের পাল্লায় পড়ে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে এসেছিল সে। এক রকম তাচ্ছিল্যের সাথেই কোচিং এর সোমা দিদির উপহার দেওয়া চার টাকা দামের অমৃতবাণী বইটা হাতব্যাগে রেখেছিল। হঠাৎ একদিন ব্যাগ পরিষ্কার করতে যেয়ে অনেকটা কৌতুহলবশতই শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের কয়েকটা বাণী পড়েছিল। তারপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ক্রমেই উদারতা, সাম্য, অহিংসা, পরোপকার নিতির মনে স্থায়ী আসন গেঁড়েছে। এখন যে কোন সঙ্কটে এই ভাবধারা তার পাশে এসে দাঁড়ায়। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে শেখায়। স্বামীজির "খালি পেটে ধর্ম হয় না" কথাটার অর্থ হৃদয়াঙ্গম করতে শেখায়।

এখন নিতির বড় বিপদের সময়। এ সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ধৈর্য ধরে না থাকতে পারলে সব ছারখার হয়ে যাবে। ওরা রামকৃষ্ণ মিশনের গেটের কাছে চলে এসেছে। মা রিক্সা ভাড়া দিচ্ছে। নিতির চোখ আটকে আছে মন্দির প্রাচীরে। "দেখ, সব বনিয়ে বানিয়ে চলতে হয়। ঠাকুর বলতেন, `শ,ষ,স`। সব সয়ে যাও, তিনি আছেন" মা সারদার এই বাণী নিতিকে যেন নতুন জীবন দিল। নিতি এতদিন ধরে যত দুঃখ কষ্ট পাচ্ছে, তা যেন এক লহমায় উড়ে গেল। মাথার ভিতর ঘুরপাক খেতে থাকল, ``শ,ষ,স`। সব সয়ে যাও, তিনি আছেন"। নিতির কেবলই মনে হতে থাকল তিনি আছেন। এই `তিনি`র প্রতি প্রবল ভক্তি বিশ্বাসে মন্দিরের চাতালে এসে নিতি সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করল। মেয়েরা সাধারণত এভাবে প্রণাম করে না। নিতি করল। মনের আবেগ অশ্রু হয়ে মন্দিরের শ্বেতপাথরের মেঝে ভিজিয়ে দিল। নিতি বারবার বলতে থাকল, আমার জ্ঞান, ভক্তি, বৈরাগ্য দাও। আমার সবকিছু সহ্য করার শক্তি দাও। বাবাকে সুস্থ করে তোল। জগতের কল্যাণ হোক। পৃথিবীর সর্বপ্রাণ সুখী হোক।

মন্দিরের মর্মর পাথরের মূর্তি এ প্রার্থনা শুনল কিনা নিতি সেটা বুঝল না, উপরের সেই অদৃশ্য পরমপুরুষ একথা জানল কিনা নিতি সেটাও বুঝতে পারল না। অনেক কিছু না বুঝেও নিতির মন হালকা হলো। একরাশ দুঃখ বরফের মতো বুকে জমাট বেঁধে ছিল, কান্না হয়ে সেগুলো গলে গেল। নিতি নিজেকে নির্ভার অনুভব করল। চলবে

১৮ মে ২০২০