আতঙ্কে নির্বাচনের প্রার্থীরা, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করায় নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে।
উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে, এ অবস্থায় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় নামতে গেলে জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?
হাদিকে গুলির ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠকে ৩টি দলের নেতারাই নির্বাচনের আগে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি দ্রুত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত দলগুলোর নেতাদের সতর্ক করে বলেন, “এই আক্রমণটি খুবই সিম্বলিক। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়।”
যমুনায় বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের কাছে সাংবাদিকরা আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের ওপর হামলার আশঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এ ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব আছে। পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।”
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। এর পলে বিরোধীরা সুযোগ নিচ্ছে।”
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “শুধু আমাদের নেতা-নেত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই হবে না, নেতাদের নিরাপত্তা দিয়ে জুলাই টিকে থাকবে না। সামগ্রিকভাবে সমাজ থেকে, রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের প্রশ্নের সুরাহা করতে না পারলে, আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হাদির ওপর হামলায় সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ৩ দলের নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, ওসমান হাদির ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে এই সভা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শনিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে এতদিন শুধু সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যু করা হতো। এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে যারা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চাইবেন, তাদেরকেও লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।”
শনিবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ অডিটোরিয়ামে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এই ষড়যন্ত্রগুলো এখনই থামবে না। আরও খারাপও হতে পারে। আমাদের ভয় পেলে চলবে না, আমাদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত হলে চলবে না। মানুষকে সাহস দিতে হবে, আমাদের নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন হবে, এই পরিস্থিতি যত আমরা তৈরি করবো ষড়যন্ত্রকারীরা তত পিছু হটতে বাধ্য হবে।”
























