ইসলামি অর্থনীতির যুগান্তকারী পদক্ষেপ মালয়েশিয়ায়

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ৩০, ২০২৫

ইসলামি অর্থনীতির যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বের প্রথম ‘ক্লাইমেট সুকুক’ চালু করেছে মালয়েশিয়া। এর মূল্য ২০০ মিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১১৮ মিলিয়ন রিঙ্গিত)। এই সুকুকের মাধ্যমে শরিয়াহভিত্তিক অর্থনীতি, সবুজ অর্থায়ন, ডিজিটাল টোকেনাইজেশন এবং কার্বন ক্রেডিট মনিটাইজেশন— এই ৪টি আধুনিক অর্থনৈতিক উপাদানকে একত্রিত করা হয়েছে, যা ইসলামি অর্থনীতিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরাসরি যুক্ত করেছে।

 

এই সুকুকটি ঘোষিত হয় গ্লোবাল ইসলামিক ফিন্যান্স ফোরাম (জিআইএফএফ) ২০২৫-এ, যা অনুষ্ঠিত হয় কুয়ালালামপুরে। যৌথভাবে এটি ইস্যু করেছে হংকংভিত্তিক Unity Group Holdings International Ltd এবং Tek Securities Ltd, মালয়েশিয়ার লাবুয়ান আইবিএফসি Labuan IBFC কাঠামোর আওতায়। প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য, লাবুয়ানকে বৈশ্বিক ডিজিটাল ইসলামি অর্থনীতির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং জলবায়ুবান্ধব বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা।

 

ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ম্যানসফিল্ড ওয়ং বলেন, “এই ক্লাইমেট সুকুক টেকসই ইসলামি বিনিয়োগের জন্য নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এটি ইসলামি অর্থনীতিকে জলবায়ু পদক্ষেপে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।”

 

ফোরামে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো’ সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম আনুষ্ঠানিকভাবে এই উদ্যোগের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “সরকার ২০২৬ সালের বাজেটে জলবায়ুবান্ধব ও স্বচ্ছ অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলোর জন্য আরও অধিক সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান করবে।”

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মালয়েশিয়া শুধু ইসলামি অর্থনীতির নেতৃস্থানীয় দেশই নয়, বরং জলবায়ু-সংবেদনশীল অর্থনৈতিক সংস্কারে পথিকৃৎ হতে চায়। ক্লাইমেট সুকুক সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

 

ইউনাইটেড গ্রুপ জানিয়েছে, তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্মার্ট কৃষি ও কার্বন-নিরপেক্ষ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে, যা মালয়েশিয়ার ‘নেট-জিরো রূপান্তর কৌশল’ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

 

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ ইসলামী ফাইন্যান্স খাতকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে। কারণ এটি শুধু শরিয়াহ-সম্মত বিনিয়োগ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ের অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

 

মালয়েশিয়ার এই ‘ক্লাইমেট সুকুক’ উদ্যোগ একদিকে ইসলামি অর্থনীতির আধুনিকায়নের প্রতীক, অন্যদিকে টেকসই ও সবুজ ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর অর্থনৈতিক হাতিয়ার— যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোয় নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।