কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রর আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৫

কবি, কথাসাহিত্যিক ও চিত্রপরিচালক প্রেমেন্দ্র মিত্রর আজ জন্মদিন। ১৯০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে পিতার কর্মস্থল বারাণসীতে তার জন্ম। পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার রাজপুরে।

তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের সম্ভ্রান্ত মিত্র বংশের সন্তান। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ও মাতা সুহাসিনী দেবী। খুব অল্প বয়সেই প্রেমেন্দ্র মাতৃহারা হন।

প্রেমেন্দ্র মিত্র এক সময় কলকাতার ২৮ নম্বর গোবিন্দ ঘোষাল লেনের মেসবাড়িতে বাস করতেন। পরবর্তীকালে পড়াশোনার জন্য তিনি ঢাকাতে থাকতে শুরু করেন। ১৯২৩ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে এসে ওই মেসবাড়ির ঘরের জানলার ফাঁকে একটি পোস্টকার্ড আবিষ্কার করেন।

চিঠিটা পড়তে পড়তে তার মনে দুটো গল্প আসে। সেই রাতেই গল্পদুটো লিখে পরদিন পাঠিয়ে দেন জনপ্রিয় পত্রিকা প্রবাসীতে। ১৯২৪ সালের মার্চে প্রবাসীতে `শুধু কেরানিন` আর এপ্রিল মাসে `গোপনচারিণী` প্রকাশিত হয়, যদিও সেখানে তার নাম উল্লেখ করা ছিল না। সেই বছরেই কল্লোল পত্রিকায় `সংক্রান্তি` নামের একটি গল্প বেরোয়।

এরপর তার মিছিল ও পাঁক নামের দুটি উপন্যাস বেরোয়। পরের বছর বিজলী পত্রিকায় গদ্যছন্দে লেখেন `আজ এই রাস্তার গান গাইব` কবিতাটি। প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম কবিতার বই ‌`প্রথমা` প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে। বৈপ্লবিক চেতনাসিক্ত মানবিকতা তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।

প্রথম জীবনে তার ছোটোগল্পের তিনটি বই বেরোয়: পঞ্চশর, বেনামী বন্দর আর পুতুল ও প্রতিমা। মানুষের সম্পর্কের ভাঙাগড়া, মনের জটিলতা, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যথা বেদনার কথা প্রকাশে প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন স্বকীয়তায় অনন্য।

প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট জনপ্রিয়তম চরিত্র ঘনাদা, গল্পবাগীশ সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস আজো সব বয়েসের পাঠকদের কাছে প্রিয়। তার এই অমর চরিত্র ৭২ নং বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ির বাসিন্দা ঘনাদা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। এছাড়া তিনি অনেকগুলি ছোট গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যার মুখ্য চরিত্র পরাশর বর্মা, যে পেশায় গোয়েন্দা হলেও নেশায় কবি।

তার সৃষ্ট চরিত্র মামাবাবুকে তিনি বহু এডভেঞ্চার উপন্যাস ও ছোটগল্পে এনেছেন যেগুলি কিশোরদের ভেতর জনপ্রিয় ছিল। প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি নিয়মিত কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার বিজ্ঞান সাহিত্য রচনার শুরু ১৯৩০ সালে।

রামধনু পত্রিকায় ক্ষিতীন্দ্রনারায়ন ভট্টাচার্য তাকে ছোটদের জন্যে লিখতে অনুরোধ করলে `পিঁপড়ে পুরান` কাহিনিটি লেখেন। এটিই তার প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচনা। `কুহকের দেশে` গল্পে তার কল্পবিজ্ঞান ও এডভেঞ্চার কাহিনীর নায়ক মামাবাবুর আত্মপ্রকাশ। ১৯৪৮ সালে `ড্র্যাগনের নিঃশ্বাস` বের হলে মামাবাবু পাঠক মহলে জনপ্রিয় হন।

তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প ও উপন্যাস হচ্ছে: কালাপানির অতলে, দুঃস্বপ্নের দ্বীপ, যুদ্ধ কেন থামল, মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী, হিমালয়ের চূড়ায়, আকাশের আতঙ্ক, অবিশ্বাস্য, লাইট হাউসে, পৃথিবীর শত্রু, মহাকাশের অতিথি, শমনের রং সাদা, পিঁপড়ে পুরাণ, পাতালে পাঁচ বছর, ময়দানবের দ্বীপ, শুক্রে যারা গিয়েছিল, মনুদ্বাদশ ও সূর্য যেখানে নীল।

পথ বেঁধে দিল, রাজলক্ষ্মী (হিন্দি), নতুন খবর, চুপি চুপি আসে, কালোছায়া, কুয়াশা, হানাবাড়ি প্রেমেন্দ্র মিত্র পরিচালিত চলচ্চিত্র। এছাড়া তিনি বহু সিনেমার কাহিনিনকার, চিত্রনাট্যকার ও উপদেষ্টা ছিলেন।

তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার ও সাহিত্য আকাদেম পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালের ৩ মে প্রেমেন্দ্র মিত্র মারা যান।