তানজিনা ফেরদৌস

তানজিনা ফেরদৌস

তানজিনা ফেরদৌসের গল্প ‘খুনসুটির একদিন’

প্রকাশিত : জুন ০২, ২০২৪

বিয়ের এক বছর সাত মাস চলছে। নীলা আর নীলের সংসার। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর সীমাহীন ভালো লাগা নিয়ে তাদের এই বন্ধন। নীলা মনের যত কথা নীলকে উগরে দেয়। নীল ভীষণ মনোযোগী শ্রোতা। খুব মনোযোগ দিয়ে নীলার সব কথা ও গল্প শোনে। দুজনে হাসি,দুষ্টুমি, অভিমান আর হাজারও খুনসুটির মধ্যে ডুবে থাকে।

নীলা যদি কখনও তার কথা শুনতে নীলকে আনমনা দ্যাখে, তবে তার আর রক্ষা নেই। নীলাকে মোটামুটি নীল ভয় পায়। কারণ, একবার যদি তার নীলা রাগ করে, তাহলে সেটা কান্নাকাটিতে রূপ নেয়। নীলার কান্না নীল ভীষণ অপছন্দ করে। নীলের ভাষ্যমতে, তার বউয়ের জন্মই হয়েছে হাসিখুশি থাকার জন্য।

নীল সবসময় বলে, তুমি কিছুতেই মন খারাপ করে থাকবা না। গোমড়া মুখ একদমই তোমাকে মানায় না। তুমি কাঁদতেও পারবা না। এগুলো তোমার সাথে কখনও যায় না। তোমার চেহারা এত মিষ্টি আর মায়াময়ী কেন লাগে জানো? তোমার এই প্রাণচঞ্চলতা। এই জিনিসটাই তোমাকে সবসময় আরও বেশি স্নিগ্ধ আর সুন্দর করে তোলে।

নীলারও ভীষণ নেশা নীলকে সবসবয় খুশিতে রাখতে। নীলের কি পছন্দ, সেগুলো খুঁজে বের করে প্রতিদিন। এরপর নতুন নীলা হয়ে সে নীলের সামনে যায়। নীলার এই খুশি করার আগ্রহটা নীলকে বিমোহিত করে প্রতিনিয়ত। নীল ভীষণ চাপা স্বভাবের মানুষ। ঠিক একেবারে নীলার উল্টো। বিয়ের এতটা দিন যাওয়ার পরেও নীলা স্বামীর মাঝে প্রেমিক নীলকে খোঁজে সবসময়। নীলের ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গিটা অন্যরকম, নিশ্চুপ হয়ে ভালোবাসতে জানে নীল।

নীলার সবকিছুই ভালো লাগে তার। নীলার আহ্লাদ করে ডাক, সুন্দর করে হাত-মুখ নাড়িয়ে, মাথা দুলিয়ে কথা বলা— সব, সবটা ভালো লাগে নীলের। কিন্তু নিজের এত ভালোলাগা কখনও সে প্রকাশ করে না। নীলা সবটা বোঝে। এরপরও তার প্রিয় মানুষ, প্রেমিকের মুখে শুনতে চায় ভালোবাসার কথা। কিন্তু নীল মনে হয় তার ঘোর বিরোধী। ভালোবাসি কথাটা বলতে হবে কেন? ভালোবাসি না বললে কি ভালোবাসা যায়  না! এমনটাই তার চিন্তা।

ছুটির দিন। খুব সকালে নীলা ঘুম থেকে উঠলো। মনে মনে ভাবলো, আজ সারাদিনের কাজগুলো খুব জলদি গুছিয়ে নিই। নীল ঘুমিয়ে থাকুক। শান্তি করে ঘুমাক একটু। রোজ বেচারা কত্ত সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে, কোনোরকম একটু নাস্তা মুখে দিয়েই অফিসে বের হয়। এসব ভাবতে ভাবতেই সারাদিনের সব কাজ খুব তাড়াহুড়ো গুছিয়ে নেয় সে। সকাল দশটা। নীল এখনও ঘুমাচ্ছে। নীল ছোট বাচ্চাদের মতো করে ঘুমায়। নীলের মা-ই ছেলেকে পাশবালিশ নিয়ে ঘুমানোর অভ্যেসটা ছোট থেকেই করিয়ে দিয়েছেন।

নীলা পাশে থাকলেও তার পাশবালিশ চাই। একটু বিরক্ত হয় মাঝেমাঝে। কিন্তু বলে কোনো লাভ নেই। নীল ওঠো, দ্যাখো নাস্তা রেডি করেছি। ওঠো পাখি। জলদি ফ্রেস হয়ে খেয়ে নাও। চলো না আজ আমরা দূরে কোথাও বেড়াতে যাই।

নীল একটু অলসতা ঝেড়ে বালিশ ছেড়ে নীলার কোলে মাথা রাখে— একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, আরেকটু ঘুমাই। বলে ঝাপটে ধরে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে। নীলা পরম যত্নে নীলের চুলে হাত বুলিয়ে সিঁথি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আবার ডাকতে থাকে, পাখি এবার ওঠো, খাবারগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। ফ্রেশ হও। চলো,বহুদিন হলো আমরা দূরে কোথাও খোলা আকাশের নিচে হাত ধরে হাঁটি না। কতদিন হলো বলো তো, তুমি নৌকা বাও না আর আমি নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে খেলি না।

নীল আরও জোরে জাপটে ধরে। আচ্ছা বলে মুখটা কোলে গুজে চোখ বন্ধ করে থাকে। লক্ষ্মীটি ওঠো, তুমি নাস্তা করার পর অনেক কাজ পড়ে আছে আমার। বলো তো কোন শাড়িটা আজ পরবো? নীল একটু নড়ে, ঐ শাড়িটা পরো। কোন শাড়িটা? আরে ঐ শাড়িটা। আরে কোনটা বলবে তো?

আমার পছন্দের শাড়িটা, যে শাড়িতে তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম। শাড়ির আঁচলে ময়ুর আঁকা ছিল। আমি ঐ দিনই প্রথম দেখি, শাড়িতে কোনো মেয়েকে এত সুন্দর লাগে। ঐ শাড়িটা পরলে তোমাকে ময়ুর রানির মতো লাগে। হরিণী চোখের কাউকে ময়ূরের মতো দেখতে দেখেছো? আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিনই দেখেছিলাম একটা মেয়ের হরিণী চোখ আর ময়ূরের মতো দেখতে। জানো, আমার মনে হয় ময়ূর আর হরিণ এই দুইই খুব চঞ্চল। আর মোটেও তুমি ওদের মতো নও, ওরা তোমার মতো চঞ্চল। ঠিক কাল্পনিক একটা ছবি যেন বাস্তবে আমার সামনে এসে ধরা দিয়েছিল।

নীলের এমন অভিব্যক্তিতে নীলা অনেক খুশি হলো। তবে অবাকও হলো। ভাবলো, কী ব্যপার, এই চাপা স্বভাবের মানুষটা হঠাৎ এত ভালোবাসার কথা বলছে! নীলা কিছু না বলে নীলের আহ্লাদগুলো উপভোগ করতে লাগলো।

নীল গতরাতে স্বপ্ন দেখছে, নীলা স্কলারশিপ পেয়ে কানাডা যাচ্ছে। নীলও চায়, নীলা নিজে ভালো কিছু করুক। নীলের জবসহ সবকিছু মিলিয়ে নীলাকে একাই যেতে হচ্ছে দেশের বাইরে। নীলা যেদিন দেশ ছেড়ে চলে যাবে, নীলাকে এয়ারপোর্টে নিয়ে এসেছে নীল। ঠিক এমন সময়েই আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যায় নীলের। সারারাত আর ঘুমাতে পারেনি।

গতরাতে ঘুমন্ত নীলার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, আমি এত কাজ পাগল একটা মানুষ, আমি তো কাজ ছাড়া আর কোনো খবরই রাখি না সংসারের। নিজে কি খাবো, কোন ড্রেসাপে অফিসে যাব, সবকিছুই তো নীলার জানা। আমার এই ছোট্ট সংসারের সবকিছু নীলার নিজ হাতে গোছানো। এই শূন্য ঘরকে অসীম মায়ায় পরম যত্নে পরিপূর্ণ করে তুলেছে সে। পরম যত্নে সবকিছুই সামলে রাখে।

আমি এই অল্প কয়েকদিনে অগোছালো আমিটা এত বেশি নির্ভরশীল হয়ে গেছি নীলার ওপর। নিজের অজান্তেই যেন সবকিছুতে মিশে গেছে সে। নীলা মনে করে, আমি একটা বাচ্চা ছেলে। ঠিকঠাক আমি নিজের যত্ন নিতে পারি না। ঠিক কবে ও থাকতে নিজ হাতে খাবার খেয়েছি আমার মনে পড়ে না।

নীলার কোলে মাথা রেখে ভাবতে থাকে নীল… কী আশ্চর্য, আমাদের দুজনের বয়সের ব্যবধানও বেশ। বিয়ের আগে নীলার এক দুঃসম্পর্কের মামার মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয়েছিল। সেই সুবাদে নীলা বিয়ের আগে আমাকে মামা বলে ডাকতো। যদিও প্রথম প্রথম আমার মেজাজ খারাপ হলেও আমি ওকে নিষেধ করতে পারতাম না। বিয়ের কথা হওয়ার পর থেকে দুজন এই বিষয়টা নিয়ে মাঝে মাঝে হাসাহাসি করতাম।

এই মেয়েটাই অতি যত্নে পরম মমতায় আমাকে আর আমার সংসারটাকে আগলে রাখে। এই অল্প সময়েই আমার সব পছন্দ ওর পছন্দ, আমার সব অপছন্দ ওর অপছন্দ করে নিয়েছে। আমার সব আপনজন বাবা-মা,ভাই-বোনকেও সে আপন করে নিয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পরম করুণাময় কি অশেষ স্বর্গীয় শক্তি দিয়েছেন নারীদের মধ্যে। আল্লাহর কী রহমত আমার মতো অধমকেও এমন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেননি।

এবার ওঠো,তুমি ফ্রেস হও! নীলার কণ্ঠ শুনে বাস্তবে ফেরে নীল। নীলা বলে, তোমার ঐ রঙের পাঞ্জাবিটাও বের করে রেখেছি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নীলা রেডি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীল সাওয়ার শেষ করে যথারীতি আবার বিছানায় ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীলা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নীলকে দেখছে আর রাগে ফুলছে। নীলের এখন কেন ঘুমাতে হবে? বিয়ের এ ক`টা দিন যেতেই আমি এত পুরাতন হয়ে গেলাম! কোথায় আমি সাজবো, নীল বসে বসে দেখবে, তা না আজ বাসায় থেকেও ওর ঘুম। একটুও সময় নেই আমার জন্য!

নীলও ঠিক বুঝতে পারে, তার শোয়া দেখে নীলা রাগে জ্বলছে। কিছুক্ষণ পর নীলা বলে, কই, ঘুমালে নাকি? উঠে রেডি হও। নীল একটু পাশ ঘুরে শুয়ে বলে, তোমার শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে বলো প্লিজ। এতক্ষণে আমি ঘণ্টাখানেক ঘুমাতে পারবো।

নীলা মুখ ঘুরিয়ে রেডি হতে লাগলো। শাড়ি পরছে। ইশ্ কুচিটা কিছুতেই ঠিক করা যাচ্ছে না। আর নীলও উফফ্। রাগ করে নীলা আচ্ছা আমার শাড়ির কুচিটা কে ধরবে শুনি?

নীল বলে, কেন, তোমার সেবায় নিয়োজিত এই অধম। তোমার একমাত্র স্বামী। এই একটা কাজ মোটামুটি ভালোই পারে নীল, সেই প্রথম থেকেই বউয়ের শাড়ির কুচি ঠিক করে দিতে দিতে এখন সে এ কাজে বেশ পারদর্শী। কোনোমতে বউয়ের শাড়ির কুচি ঠিক করেই নীল আবার বিছানায়। বলে, বউ তোমার শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে ডাক দিও। নীলা মুচকি হেসে সাজতে লাগলো।

শেষ হওয়ার আগে নীলকে ডাকলো, ওঠো আমার মালাটা একটু পরিয়ে দাও প্লিজ। নীল চোখ খুলে দেখলো, সামনে এক স্বর্গের অপ্সরী বসে আছে। যার ঠোঁটগুলো গোলাপের পাপড়ির মতো। নীল বিছানা ছেড়ে নীলার মালাটা পরিয়ে দেওয়ার জন্য ধরলো। ঘাড়ের চুল সরিয়ে দিল নীলা। নীল মুখ গুঁজে থাকলো কিছুক্ষণ বউয়ের ঘাড়ে, গলায়। নীলা বললো, সে কী! ছাড়ো আর পাঞ্জাবি পরো। চলো বের হই।

নীলা একথা বলে নীলের মুখের দিকে তাকাতেই নীলা দেখলো, নীলের চোখে একটা নেশা। তারপর নীল কিছুতেই নীলার ঠোঁট ছাড়লো না। যখন ছাড়লো তখন সন্ধ্যা। নীলা আহ্লাদি গলায় বলতে লাগলো, এটা কী করলে বলো তো। আমি কত কষ্ট করে রেডি হলাম ঘুরতে যাব, তুমি সব নষ্ট করে দিলে। তুমি কাজটি একটুও ঠিক করোনি। নীল আবারও জাপ্টে ধরে বলে, ও  তাই বুঝি! এসো নাহ আরেকটু বেঠিক কাজ করি।

নীলা বলল, তুমি নাহ বড্ড জ্বালাও নীল। যাও, এখন তোমাকে মাফ করলাম। কিন্তু রাতে আমাকে নদীতে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
নীল বলল, ঠিকাছে বউ। তবে রাতের বেলা আবার এত সাজুগুজু করো না। তাহলে নদীতে ঘুরতে যাওয়া রেখে আমি আবার…। বউয়ের এত সাজুগুজু দেখে তাকে কী আর বাইরে ঘুরতে নিতে মন চায়,বলো? সারাক্ষণ মনে হয়, আমি চোখ ভরে আমার বউকে দেখি।

আজকে নীলের পাগলামি দেখে নীলা বেশ অবাক হচ্ছে সাথে আপ্লুত। রাতে দুজন বের হলো নদীতে ঘুরতে। নীলা নদীতে নৌকায় ঘুরতে খুব পছন্দ করে। জমির আলীর নৌকা বাঁধা থাকে ঘাটে। জমির আলী নীলকে দেখলেই খুশি হয়ে যায়। স্যার, আসেন আজও কী আপনিই নৌকা বাইবেন?
হ্যাঁ জমির চাচা। আজও আপনি আমার হেল্পার হয়ে নৌকায় বসে থাকবেন।
আইচ্ছা স্যার আসেন। নীলাকে হাত ধরে নৌকায় উঠালো নীল। তারপর নৌকা বাইতে শুরু করলো। নীলা বসে আছে অপলক দৃষ্টিতে। নীলকে দেখছে। নদীর পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, দূরে কিছু নৌকায় হারিকেনের আলো দেখা যায়। নীলা বললো আমার পছন্দের গানটা গাও নাহ..

 নীল বললো, আস্তে আস্তে সাবধানে আমার কাছে উঠে এসো। আমার সামনে বসে তুমিও বৈঠা ধরো। চলো দুজন একসাথে গান করি। নীলা খুব সাবধানে নীলের সামনে গিয়ে বৈঠা ধরে বসলো। তারপর দুজনে গলা ছেড়ে গান ধরলো...

শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে
অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবণেই ঝরায়ে
আজ কেন মন উদাসী হয়ে
দূর অজানায় চায় হারাতে।

গানটি শেষ হতেই নীলা আবার গান ধরলো,

ময়ুরকণ্ঠি রাতের নীলে
আকাশে তারাদের ঐ মিছিলে
তুমি আমি আজ চলো চলে যাই
শুধু দুজনে মিলে

হয়তো পাব না, পথেরও ঠিকানা
তবু যাব আজ ছাড়িয়ে সীমানা
সাথি যদি হও পাশে থেকো মোর
করি না ভয় নিখিলে...

মাঝি জমির আলী মুগ্ধ হয়ে শুনছে নীলার গান। গান শেষ হলে সে বলল, আইচ্ছা স্যার, আপনে দেহি মোরচে ভালো নৌকা বান। কেমনে স্যার এত ভালা নৌকা বাইতে শেখছেন!

জমির চাচা, আমিও তো নদী অঞ্চলের মানুষ। আমার ছোটবেলা কেটেছে নদীতে গোসল করে। সাঁতার কেটে, নদীতে মাছ ধরে। আমি তো কলাগাছের ভেলাও বাইতে পারি। ছোটবেলায় বৃষ্টি হইলে কলাগাছের ভেলা ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না। আমার আম্মা মাস্টারি করতেন। আমাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে ছিল স্কুল। বৃষ্টির সময় কত কলাগাছের ভেলায় করে আম্মাকে স্কুলে দিয়ে আসতাম!

ও হের লাইগা আফনে এত ভালা নৌকা বাইতে পারেন। স্যার আফনে কিন্তু গানডাও ভালা গান।

তাই নাকি জমির চাচা? গান আগে জানতাম না। যেদিন থেকে আপনার ম্যাডামের প্রেমে পড়েছি, সেদিন থেকে কবি হয়েছি। আর এখন কবি থেকে গায়ক।

নীলা বলল, আহ্ নীল থামো তো। চাচার সামনে লজ্জা দিও না। নীলার লাজুক চেহারা চাঁদের আলোর সাথে মিশে অন্যরকম এক অনুভূতিতে নীলকে মোহিত করে তুলল। নৌকার বৈঠা হাতে চুপ করে চেয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। নৌকার এক পাশে বসে জমির আলীর যৌবনে হারানো বউয়ের কথা মনে পড়ে। অবেলায় নিজের স্ত্রী হারানোর শোক এখনো তাড়া করে জমির আলীকে। মনে মনে নীল আর নীলার জন্য সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে।

ও স্যার, লন যাই। রাইত অনেক হলো। জমির আলীর কথায় নীরবতা ভাঙে। নীল দেখে, কখন যে নীলা তার ঘাড়ে মাথা রেখে কোথায় হারিয়ে গেছে! জমির আলীর সুরে সুর মিলিয়ে নীলাও বলে, হ্যাঁ চাচা চলেন যাই। নৌকা থেকে নেমে নীলের হাত ধরে হাটতে থাকে নীলা।