শাফিন আহমেদ

শাফিন আহমেদ

বাঙালি যেভাবে লেখক-শিল্পীদের রয়্যালটি ফাঁকি দেয়

চয়ন খায়রুল হাবিব

প্রকাশিত : মে ২৯, ২০২৫

মাইলসের শাফিনের বেশির ভাগ ইন্টারভিউর শেষে কোনো আক্ষেপ, রিগ্রেট আছে কিনা জানতে চাইলে বলতো, বাঙালির ভেতর রয়্যালটি ব্যাপারটা দাঁড়ালো না। শিল্পীকে ফাঁকি দেবার একটা প্রবণতা বাঙালির আছে।

রয়্যালটি হচ্ছে, একজন একটা গান গাইলো, একজন একটা লেখা লিখলো, যে যতখানে যতবার বাজাবে, পড়বে তাতে শিল্পীকে একটা সম্মানি পাঠিয়ে দিতে হবে। স্কুলে বাচ্চারা গাইলে বা কবিতা পড়লেও শিল্পী, কবি যদি জীবিত থাকে তাকে সম্মানি পাঠিয়ে দিতে হবে। শিল্পী, লেখক যদি মরে যায় তার এস্টেটকে পাঠাতে হবে। রেডিও, টিভি, এমন কী রেস্তোরাঁতে, প্লেনে, ট্রেনে যেখানে বাজানো হোক পাঠাতে হবে।

রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে বর্তে দিচ্ছে। নজরুলের পরিবার সবার পরিচিত, শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের এস্টেট আছে। জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে, নজরুল কতটুকু মুসলিম তা নিয়ে কুতর্ক তুলবে, কিন্তু রয়্যালটি পাঠাবে না।

ধরুন, শামসুর রাহমানের `স্বাধীনতা তুমি` কবিতাটা কতজন কতভাবে পাঠ করছে। কেউ ওনাকে জীবিত কালে কোনো রয়্যালটি পাঠায় নাই। কবির কবিতা পড়ে দিচ্ছি, সেটাই তো অনেক। কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজন আবৃত্তির দল করেছে, আমার কাছে কবিতা চাইলো, আমি দিলাম, মানে আমার লেখালেখি তো আকসার অনলাইনে, ব্লগে আমার প্রোফাইলে আছে, সেখান থেকে কপি করলে, তাতেও রয়্যালটি দেয়া উচিত।

অনেক আবৃত্তিকার এখন এখানে ওখানে টাকা নেয়। কিন্তু ঐ যে কবির কবিতা পড়ে কবিকে বর্তে দিলো। এমনই বর্তে দিলো যে কবির নাম আর নাই, পাঠকারীর স্বরচিত কবিতা হয়ে গেল। আমার কিছু পরিচিত কবিতা পাঠকারী কোভিডের সময় মারা গেল। আমার ঠোঁটের কোনায় কিন্তু শাফিনের মতো সেই বক্র হাসি চলে এসেছিল, পোয়েটিক জাস্টিস, কবিকে ফাঁকি দিয়েছ, কোভিডে মরেছ। প্রকৃত কবি, লেখকদের ফাঁকি মেরে, একাডেমি পদক আবেতাবেদের ধরিয়ে দিয়ে, বাংলা সাহিত্যের স্ফিতি ঘটানো জাতীয় অধ্যাপকও কোভিডে মরেছে।

শাফিনের ইন্টারভিউগুলো কিন্তু কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগম মেলানো দুই প্রজন্মের শিল্পীদের অভিশাপ। মাইলস কনসার্ট করে অনেক কামিয়েছে। কিন্তু রয়্যালটি নিয়ে শাফিন বারবার বলে একটা পয়েন্ট এস্টাবলিশ করতে চেয়েছে যে, বাঙালি ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টিকে সম্মান করে না। ঠিকমতো সম্মানি দিতে চায় না।

নাটক করা হবে, লাইট, মঞ্চ, হল ভাড়া সব মিটানো হবে, কিন্তু নাট্যকারকে দেয়া হবে না। নাট্যশিল্পও এ কারণে মাগনা আলকাতরা। রয়্যালটি পাবে না বুঝে নাট্যকাররা আর নাটকের বই প্রকাশ করে না। মানে নাটকের দলগুলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিরাও রয়্যালটি দেবার চল করে নাই। ফলে যে কেউ যে কোনো শিল্পের ধারায় হুট হাট ঢুকে যেতে পারে।

পশ্চিমে যে শুধু সেলেব গায়ক, লেখক রয়্যালটি পাচ্ছে তা নয়। অখ্যাতরাও পায়, অখ্যাতরা পায় বলেই বিখ্যাতদের রয়্যালটি পাওয়াটা ঠিক থাকে। বাংলাদেশের বই বিক্রেতারা পশ্চিমবঙ্গের অনেকের বই বিক্রি করে লাল হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের লেখকরাও যে এসবের রয়্যালটি পাচ্ছে তাও নয়। সুনীল গাঙ্গুলি আমাকে এয়ারপোর্টে বলেছিলেন, বাংলাদেশেজ ওনার এত বিক্রি হয়, কিন্তু কই ওনার কাছে তো রয়্যালটি পৌঁছায় না।

ঐ পারের সুনীল, এপারের শাফিন নিজেদের ক্ষেত্রে কিন্তু সুপারস্টার। যেহেতু সমাজটা শিল্পীকে, লেখককে ফাঁকি মারছে, রয়্যালটি নিয়ে জোচ্চুরি করছে, নান্দনিকতার সাথে জোচ্চুরি করে সমাজের অবস্থাও তাই।

ফ্রান্সে যখন মাতিসকে স্কুলে পাঠানো শুরু করলাম, আমাদেরকে কয়েক বান্ডিল রয়্যালটি স্ট্যাম্প বাসায় রাখতে হতো। সেগুলো কিনতে হতো। মাতিস কার কবিতা, কার ছড়া, কার গল্প হোম-ওয়ার্কের পাতায় লিখছে, তার জন্য নির্ধারিত রয়্যালটি স্ট্যাম্প নিয়মিত ওর খাতায় সেটে দিতে হতো। সেটার হিসাব কষে কিভাবে কিভাবে সরকার এ লেখক, সে কবির এস্টেটকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক পাঠিয়ে দিচ্ছে।

মাতিসের স্কুলের খাতায় প্যাটিকে ধার্মিক-ভাবে স্ট্যাম্প লাগাতে দেখে, একবার বলেই ফেললাম, আরে রেখে দাও। প্রতি মাসে অনেক স্ট্যাম্প লাগছে। যেহেতু আমি সুনীল, শাফিনের জোচ্চোর সমাজে বেড়ে উঠেছি, তাই সেটা বলেছিলাম। প্যাটি আমাকে বলেছিল, তোমার কবিতা, নাটক, লেখা গানগুলোর জন্য রয়্যালটি পেলে তোমার ও তোমার ছেলেমেয়ের চলে যেত। প্যাটি আরো জানালো, এই স্ট্যাম্পগুলো আমরা কিনে সেটে দিচ্ছি, যাতে বাচ্চারা ওদের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি নিয়ে সচেতন থাকে।

ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির একটা ব্যাপার হচ্ছে জানান দেয়া। ধরুন বেঙ্গল প্রতিষ্ঠানের শিল্প বিষয়ক ম্যাগাজিনের নাম `কালি ও কলম`, তার সম্পাদক হচ্ছেন সুব্রত বড়ুয়া। এখন ধরুন বড়ুয়া সাহেব আমাকে জানেন না, শিল্প বিষয়ক আমার লেখাগুলো জানেন না, আমার কিউরেটিং প্রকল্পের খোঁজ পান নাই। যে বা যারা পেয়েছে, তাদের একটা দায়িত্ব হচ্ছে বড়ুয়া সাহেবকে জানানো। মানে, এটাকে আবার প্রচারে প্রসার ভাববেন না। এটা হচ্ছে জমির ওপর আপনি যেমন খুঁটি গেড়ে, বোর্ডে লিখে রাখেন এই জমি আমার। সেরকম আরেকজনকে ইন্টেলেকচুয়াল জমি বিষয়ে জানানো।

জানান দেবার একটা বড় দায়িত্ব আনুষ্ঠানিক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের, যারা অনানুষ্ঠানিক বুদ্ধিবৃত্তিক জমিনের কথা ছাত্রছাত্রীকে জানাতে থাকবে। কিন্তু ঐ যে কিছু বিখ্যাতের পাশে, কিছু পদবীধারীর পাশে ধামা ধরে আছে, নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক জমি ছোট হতে হতে, বাচ্চাদের কি হয়েছে, তার ফিরিস্তি আমি দেয়ার আগে আপনি জানেন।

বই নির্মানের ধাপগুলোতে জড়িত প্রকাশক, মুদ্রক, বাঁধাইকারী, কাগজ বিক্রেতা, কম্পোজার, সবাই কম, বেশি মজুরি নিচ্ছে, কিন্তু লেখকের মজুরি নাই। লেখককে নিজের টাকা দিয়ে, সবাইকে দিয়ে বই ছাপাতে হবে, তার পর তা `উপহার` দিতে হবে। আমাদের দেশে ধ্রুব এষসহ অনেক প্রচ্ছদশিল্পীর নাম হয়েছে এন্তার প্রচ্ছদ করবার কারণে। বইয়ের বিজ্ঞাপনে প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম দেয়া রেওয়াজ হয়েছে, যা বিদেশে কখনো দেখি নাই। ধ্রুব এর থেকে ভালোই কামায়, তাই হওয়া উচিত। কিন্তু একজন প্রচ্ছদ শিল্পী যখন বইটার প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচিতি তুলে ধরবে, তখন ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির সম্মান দিতে বিষয়ও তুলে ধরার কথা, তা আর দেখি না।

লেখক, শিল্পীদের সম্মানি দেবার এবং নিয়মিত রয়্যালটি ফি দেবার টাকা যে সমাজে নাই, তা নয়। পাকিস্তান, ইন্ডিয়া থেকে কোটি টাকা দিয়ে শিল্পীদের নিয়ে আসে, চীন থেকে ড্রোন শো নিয়ে আসে। ওরাও ফাঁকিবাজি করে চলে যায়। শাড়ির দাম, কোরবানির গরুর দাম দেখেন, হজের প্রতি ধাপে কর দেবার পরিমাণ দেখেন।

আমি রয়্যালটি ফির দিক থেকে বাংলাদেশে অনেক ধাপে বঞ্চিত হয়েছি। আপনার বই আউট অফ প্রিন্ট বলার সাথে সাথে কিন্তু আপনি রয়্যালটির দাবিদার। আমার এক প্রকাশক ছিলেন আমার প্রিয় এক অগ্রজ কবি। প্রকাশনী, ছাপাখানা দিয়ে অনেক কামিয়েছিলেন। ওনার ছেলে আর প্রকাশনী ধরে রাখতে পারে নাই। বাবার বই ছাপায় অন্য প্রকাশনীতে। আমি নিশ্চিত কিছুই পায় না। তার বাবার প্রকাশনীতে আমার পুরানো এক নাটকের বই আউট অফ প্রিন্ট। এটা অটোমেটিকালি আমাকে একটা এডিশনের টাকা দিয়ে দেয়া উচিত এবং আইনগত-ভাবে আমার প্রাপ্য।

শান্তিনিকেতনের প্রয়াত শিবনারায়ণ রায়ের সম্পাদনায় আফ্রিকার সাহিত্য সংগ্রহে আমার একটি নাটক আছে, প্রকাশক ছিলেন জেমকনের কাজী শাহেদ আহমেদ। শাহেদ সাহেবের মৃত্যুর পর ট্রিবিউনে আমি বড় করে অবিচুয়ারি দিয়েছি। সেখানে আর ভদ্রতা করে লিখি নাই যে ঐ ছাপানো নাটকটির জন্য আমাকে একটি পাই, পয়সাও দেয়া হয় নাই। একই সঙ্কলনে শক্তি চট্টসহ আরো অনেকের কাজ আছে। কে জানে, হয়তো কাউকে দিয়েছে, কাউকে দেয় নাই। যাই হোক, হাজার কোটি টাকার মালিক কাজী শাহেদ আহমেদ মারা গেলেন, আমার মতো ভাতে মরা লেখকের কাছে আক্ষরিক ভাবে ঋণী থেকে। বাবার ঋণ নাকি ছেলেমেয়েদের শোধ দিতে হয়।

আমার রয়্যালটি তসরুপ করেছে, খোদ বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতির ছেলের বৌ অর্থাৎ ফয়সাল দীপন প্রতিষ্ঠিত জাগৃতি প্রকাশনীর বর্তমান কর্ণধর, পেশায় যিনি চিকিৎসক। ঐ প্রকাশনীর ম্যানেজার আমাকে জানিয়েছে, `জুলেখা ট্রিলজি` নাকি যত কপি ছাপানোর কথা তত কপি ছাপায় নাই। তারা আমাকে কোনো হিসাব দিতে পারে নাই। হিসাব দেয়ার সদিচ্ছাও দেখা যায় নাই। ম্যানেজার মুখ ফসকে জানিয়ে দিয়েছে।

বই বিক্রেতাদের অনেক তরিকা আছে। ধরেন একজনের বই তেমন চলে না। কারো বই তেমন চলে না। আপনিই বা কটা বই কেনেন। কিন্তু সরকার প্রতি বছর কয়েকশো কোটি টাকার বই কেনে। সেগুলো কমিটিতে থাকে আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদের মতো বিদ্দতজনদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আমলা, বাংলা একাডেমির লোকজন। প্রকাশকেরা আকসার প্রকাশ করতে থাকে, আর ওনাদের সাথে খাতির করে সরকারকে বিক্রি করতে থাকে। আপনি যত অখ্যাত হবেন, প্রকাশকদের তত সুবিধা।

একাডেমি সভাপতির ছেলের বৌ আমার বই ঠিকমতো ছাপায় নাই বলে উনি আমাকে একাডেমি পদক দিয়ে কাফফারা দেবেন তা বলছি না, দিলে ভালো। উনি যাদেরকে পদক দিয়েছেন, সুপারিশ করেছেন, তাদের তুলনা করেই বলছি। আবার একাডেমি গতবার পদক দিয়ে যেভাবে ফেরত নিয়েছে, তাতে আমার মনে হয়েছে, যে দেশের একাডেমি লেখকদের সাথে এহেন আচর করতে পারে, সে দেশে আবার রয়্যালটি চালু হবে।

আমার ব্যাংকার বন্ধু লিটু খুব ভালো অনুবাদ করে। একই প্রকাশনী থেকে একটা অনুবাদ গ্রন্থ বের করলো। আমি বললাম যে, কটা কপি ছাপানো হলো, কটা বিক্রি হলো, এসব নিয়ে লেখক চুক্তি করতে। লিটু ধার ধারলো না। লিটুর মেয়ে বাংলাদেশের তরুণতম ফরাসি শিক্ষক, কলেজে থাকতে বাংলা সাহিত্য চর্চা খুব ভালোভাবে শুরু করেছিল। কিন্তু বাবাই যেখানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির সম্মান , সচেতনতা ধরে রাখতে পারলো না, কিম্বা প্র্যক্টিসটা শুরু করলো না, মেয়েও সেখানে এটা নিয়ে তাগিদ বোধ করবে না। লিটুর মেয়ের সাথে কথাবার্তা হলে, আমিও আরেক আঙ্কেল, ফাঙ্কেল কিছু। ৪০ বছর ধরে আমার যে অনেক ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি হয়েছে, কে তার গুলি মারে।

২০২৪, ৫ আগস্ট এবং তারপর কিছু দিন যে বিখ্যাত সব শিল্পকর্ম ভাঙচুর হলো, তার মূলেও এই সৃজনশীলদের ফাঁকি মারার বজ্জাতি অভ্যাস। স্পর্শকাতরতাকে সম্মান না জানাতে পারলে, সেখানে স্পর্শের বদলে খামচাখামচি হবে, তা লেখা বাহুল্য। ক্রিকেট খেলা দেখিয়ে না কি গাড়ল শিরোমণিরা হাজার কোটি টাকার সঞ্চয় গড়ে তুলেছে, বাহ।

মৃত্যুর কিছুকাল আগে শাফিন রেগেমেগে `মাইলস` থেকে সরে `মাইলস প্রাইভেট লিমিটেড` রেজিস্ট্রি করে নিয়েছিল, সম্ভবত নিজের গানগুলো যাতে ছেলেমেয়েরা এস্টেট করে রয়্যালটি দাবি করতে পারে। এতে ভাই হামিন এবং অন্যান্য ব্যান্ড মেম্বাররা রেগে গিয়েছিল। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে সুনীল গাঙ্গুলিও তার তারুণ্যে সম্পাদিত `কৃত্তিবাস` নিজের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নিয়েছিল। আমাদের দিককার প্রয়াত বেলাল চৌধুরী কিন্তু একদা `কৃত্তিবাসের` সম্পাদক ছিলেন।

আশির দশকে `জলপ্রপাত` নামে আমি একটা সাহিত্যপত্র সম্পাদনা করেছিলাম, সাকুল্যে একটাই সংখ্যা। সেখানে আমার একটি নাটক এবং কাজল শাহনেওয়াজের প্রথম গল্পটা ছাপিয়েছিলাম। `জলপ্রপাত প্রাইভেট লিমিটেড` রেজিস্ট্রি করিয়ে নেবো নাকি? রয়্যালটি নিয়ে এ বেলাতে বলতে হচ্ছে, শাফিন, সুনীল গেল তল, চয়ন বলে কত জল!