
‘জুলাই শহিদ স্মৃতি বৃত্তি’ চালু করল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : জুলাই ০১, ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি বৃত্তি’ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর হাতে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি বৃত্তি’র চেক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চেক হস্তান্তর করেন তিনি। এই বৃত্তির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজ ও ইনস্টিটিউটের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এককালীন সহায়তা প্রদান করা হবে। এ বছর ৭২৫টি প্রতিষ্ঠানের ২,০৪০ শিক্ষার্থী এই বৃত্তিলাভ করবে।
দেশের প্রায় সোয়া ২ হাজার কলেজ ও ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবক-প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জুলাই অভ্যুত্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষার্থী শহিদ হয়।
প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে বৃত্তি গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা হলেন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী হাবীবা আক্তার, তেজগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এস এম আবু তালেব এবং ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী খন্দকার মাহমুদুল হাসান।
বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার বলেন, “এক বছর আগে, বাংলাদেশের তরুণেরা দেশের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। সেই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের ফলশ্রুতিতে আমরা, সমগ্র জাতি, অধিকারবঞ্চিত প্রজা থেকে নতুন করে অধিকারভোগী নাগরিকে পরিণত হতে পেরেছি।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক, জনবিচ্ছিন্ন ও দমনমূলক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবর্তন করে জনগণের মঙ্গলের জন্য তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত এক সংবেদনশীল ও জবাবদিহি মূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের গুরু দায়িত্ব বর্তমান সরকারের কাঁধে এসে পড়েছে।”
আবরার বলেন, “আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে স্বৈরাচার আর কখনও এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। তাই জুলাই গণঅভ্যুত্থান পালনের এইদিনে আমরা সেই জাতীয় প্রত্যাশাকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে, বিশেষ করে শেষ ১ দশকে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তারা অবৈধভাবে জনগণের উপর শাসন চালিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ সকল নাগরিক অধিকার হরণ করে। তারা গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের সংস্কৃতি চালু করে, এবং বছরের পর বছর বিনা বিচারে নাগরিকদের বন্দি করে রাখে। তারা সংসদ, বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে।”
আবরার বলেন, “একের পর এক নির্বাচনের নামে প্রহসন অনুষ্ঠান করে। এমনকি শেষ পর্যায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় বাহিনী ব্যবহার করে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। পতিত সরকারের সেই সদস্যদের এবং তাদের সহযোগীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজ আমরা শুরু করতে পেরেছি।”
চেক প্রদান অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্লাহ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ ড. লুৎফর রহমান এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ টি এম জাফরুল আযম।