বেশ্যাকন্যা

পর্ব ১২

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ০৮, ২০১৮

রাত ১২টা। হোম থেকে ফিরতে হবে এসএসএস এর টাঙ্গাইলের একটি নিজস্ব রেস্ট হাউজে। আমরা ফিরলাম প্রায় রাত ১টায়। রাতের খাবার খেয়ে এসেছি হোমের নিজেন্ব কমন ডাইনিং থেকে। আগামীকাল খুব সকালে উঠেই কান্ধাপট্টিতে শুটিং শুরু করতে হবে। কারণ এর আগে এখান থেকে গিয়ে হোমে কিছুটা সময় শুটিং করতে হবে।
মা-বাবার চেয়ে অন্য কেউ কি আপন হতে পারে?
কোনো মা-বাবাই কি পারে সন্তানকে দূরে ছুড়ে ফেলতে?
পুরুষের ঔরশজাত সন্তানকে, একজন পুরুষ যেভাবে সহজেই অস্বীকার করতে পারে, সেক্ষেত্রে একজন নারী কি তার ঔরশজাত সন্তানকে অতি সহজেই অস্বীকার করতে পারে। পারে। যদি বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকে। পল্লীতে যেসব নারীরা বাবুদের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়ে সময় অতিবাহিত করছে, সন্তান জন্ম দিচ্ছে তাতে তো আইনের যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর থেকেই যায়। কারণ তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো লিখিত দলিল-কাগজ থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে পল্লীতে জন্মগ্রহণকারী বাচ্চাদের বাবা হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী বাবু/মানুষ/বাবা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
তবে আজকে শুটিংয়ের একজনকে পাবো, যে ক্যামেরার সামনে নিজেকে বাবা হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত। এখন দেখি, সে সত্যি সত্যি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই কীনা।
আমরা খুব সকালে উঠেই নাস্তা না করেই বেরিয়ে পরলাম শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে। সকাল ৭টা। সবার ব্যস্ততা এখনও বাড়েনি। কিছুটা নিরিবিলি আবহাওয়া। ক্যামেরা নিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে আছি। পাশের একটা ঝুপড়ি দোকান থেকে চট-জলদি সকালের নাস্তা আমরা সেরে নিলাম। আমি হাতে এক কাপ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মামুন ক্যামেরা হাতে নিয়ে শুটিং করতে আরম্ভ করল। শুটিং চলছে...

আমি চা খুব বেশি পছন্দ করি। কারণ আমার পান-সিগারেটের অভ্যাস নেই। কিছুটা রয়ে-সয়ে চা পান করছি। কেন যেন হঠাৎ মনে হলো, ধনীর দুলালি ও পল্লীর দুলালি দুটি চরিত্রই নারী। একটি অর্থশালী বাপের আদরের কন্যা, অন্যটি বেশ্যাপল্লীর যৌনকন্যা। সভ্য সমাজের দোহাই দিয়ে সামাজিক মানুষরা তাদেরকে ঘৃণা করি। ছি ছি করি তাদের বেঁচে থাকাকে। আবার তাদেরই কাছে ছুটে যায় জৈবিক আকর্ষণে। আমাদেরই মাঝে বসবাসকারী কিছু মানুষ জন্ম দেয় অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু।

আমরা শুটিং করতে করতে মেরির নানির ঘরে গেলাম। সেখানে গিয়ে মেরির নানির ইন্টারভিউ নিলাম। আমি নানির সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। মামুন ক্যামেরা নিয়ে শুটিং করতে করতে সামনের গলির দিকে এগোতে থাকল। হঠাৎ
এক মেয়ের উচ্চস্বরে চিৎকার... গালাগালি দিতে লাগল। আমি নানির সাথে কথা বলা শেষ করেই সেদিকে এগিয়ে গেলাম। আমি তো অবাক! মামুনের ক্যামেরার সামনে একটা মেয়ে রাগে উত্তেজিত হয়ে পরনের শাড়ি ফেলে দিয়ে ব্লাউজ খুলে ফেলতে ব্যতিব্যস্ত। আমি এবার অনেকটা দৌড়ে গিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। মেয়েটি ততক্ষণে ব্লাউজ খুলে ফেলেছে এবং প্রচণ্ড আক্রোশে আমার চৌদ্দগুষ্টির নাম উদ্ধার করে চলেছে।
আহারে! আমার বাবা মারা গেছেন ১৯৮৬ সালে। উনি যদি বেঁচে থেকে এ কথাগুলো শুনতেন, তাহলে নির্ঘাত তিনি তার একনলা বন্দুক দিয়ে আমাকে গুলি করতেন। তার ভয়ে তো আমরা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হবার সাহস পাইনি। আর কীনা পতিতাপল্লীতে! বাবার হাত থেকে বেঁচে গেছি কিন্তু এখন এ মেয়ের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া বড় ব্যপার। আমি মেয়েটির সামনে করজোরে বলি, সরি, কি হয়েছে আমাকে বলুন।

চলবে...