
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ১৯
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : মার্চ ১৫, ২০১৮
আমরা গলিপথ পেরিয়ে সামনের দিকে যেতেই চোখে পড়ল, অজস্র নারী সৌন্দর্যের ঝলকানি। গলির দু’ধারে বিভিন্ন প্রকারের দোকান। প্রতিটি দোকানের সামনেই নারী-পুরুষের প্রচণ্ড হট্টগোল। কিছু খাবার খেতে আমরা পাশের একটা দোকানে বসলাম। টিনশেডের দোকানে কাঠের তৈরি সেলফে থরে-থরে করে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ড্রিংকস। এটা দেখতে কিছুটা মদের বারের মতো। আমরা দুটো সেভেনআপের ক্যান নিয়ে পান করতে শুরু করলাম। দোকানের সামনে নারী পুরুষের জটলা আরও বাড়ল।
নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ, এ তো চিরাচরিত নিয়মের ধারাবাহিকতা। নারী শরীরের স্পর্শ পুরুষের কামুকতা বাড়িয়ে দেয়। সামাজিক নিয়মের বাত্যয় ঘটলেই যেন তর সয় না কামুক মনে। জীবনের প্রথম নারী শরীরের স্পর্শ পেতে চলে এসেছে কিছু অতি আগ্রহী উঠতি বয়সী ছেলে। গলিপথের অসংখ্য খোলামেলা নারী দেখে গলা শুকিয়ে যাবার পালা, কাকে ছেড়ে কার ঘরে যাবে, তা চিন্তা করতেই তো মাথা খারাপ। এখানকার সকল নারীকেই ভোগ করার লালসা, কিন্তু টাকা কোথায়? ওরে বাবা! সবই কেমন জানি চোখ ধাঁধানো। কামার্ত শরীরের চাহিদা নিয়ে ছেলেগুলো দাঁড়ালো সেই দোকানের সামনে।
ভাই জুস দ্যান তো।
কি জুস খাবেন?
কি কি আছে?
সব ধরনেরই আছে, কোনডা দিমু কন।
দ্যান, হর্স দ্যান...
দোকানদার ছেলেটি তার সেলফ থেকে তিনটে হর্সের ক্যান নিয়ে ফোস্ করে শব্দ তুলে ছেলেগুলোকে দিয়ে দিল। ছেলেগুলো কামার্ত মনের তৃষ্ণাতুর ভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য নিমেষেই ক্যানে চুমক দিয়ে শেষ করে ফেলল জুস। এখন খানিকটা প্রশান্ত খেলা করছে মনে।
ভাই দাম কত?
তিনশো টাকা হয়, আড়াইশো টাকা দ্যান।
বলেন কি ভাই? তিনটা ক্যানের দাম আড়াইশো টাকা হয় কীভাবে?
ভাই বেশি কথা বইলেন না। প্রতি ক্যান একশো টাকা। আপনের কাছে মোটের ওপর ৫০টাকা কম রাখছি।
এইডা ক্যামন কথা ভাই? বাইরে তো এইটা ৩০-৪০টা রাখে।
তাইলে বাহিরে গিয়া খান। মাগিপাড়া আইছেন ক্যাঁ?
তাই বলে এত বেশি নিবেন?
ওই মিয়া? মসকরা চু..., দ্যান তিনশো টাকা দ্যান।
আরে ভাই, এইমাত্র কইলেন আড়াইশো টাকা। এখন কইতেছেন তিনশো টাকা।
বেশি কথা কইলে পাঁচশো টাকা দ্যান।
এই লন আড়াইশো টাকা।
আচ্ছা ঠিক আছে, আবার আইসেন ভাই।
ছেলেগুলো আর কোনও কথা না বাড়িয়ে অন্যদিকে চলে গেল। আমাদের খাওয়াও শেষ। টাকা দিলাম। প্যাকেটের গায়ের নির্ধারিত মূল্যই রাখল।
কি ব্যাপার? তুমি দাম বেশি রাখলে না কেন?
আপনে রশিদ ভাইয়ের সাথে আইছেন, আপনেরেও চিনি।
চেনো বলেই কি দাম ঠিক নিলে?
হ্যাঁ
ওদের কাছে বেশি নিলে কেন?
ওরা নতুন আইছে পল্লীতে।
কিভাবে বুঝলে?
জন্মের পর থেইকা এখানকার লোকজনরে দেখতেছি। কে নতুন, কে পুরনো, তা বুঝব না?
এই নিষিদ্ধ পল্লীর একটি চিরাচরিত ঐতিহ্য হচ্ছে খইল করা। খইল শব্দটি কিভাবে আসল তা জানতে না পারলেও, এতটুকু বুঝলাম, এই নিষিদ্ধ পল্লীতে যারাই নতুন আসুক না কেন, তাদের কাছ থেকে প্রথমবার পণ্যের দাম অতিরিক্ত নেয়াটা এক ধরনের রীতি। পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে কখনও বেশি টাকা নেয়া হয় না। এরপরও সবাই যে এমন করে, তাও নয়। তবে করার পরিমাণটাই বেশি। যাই হোক, নতুন কিছু জ্ঞান নিয়ে উঠে পরলাম দোকানের বেঞ্চ থেকে। রওনা দিলাম সুমীর ঘরে। সুমী ঘরে নেই। আমরা একটু অপেক্ষা করে চলে গেলাম শিউলীর বাড়িতে। শিউলী ২৫/৩০ বছরের ভরাযৌবনা নারী। এই বয়সের মেয়েরা সাধারণত বাড়িঅলী হয় না। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী। পান খাওয়ার যথেষ্ট নেশা। পানের লালরঙে তার দু’ঠোঁট সব সময়ই লাল হয়ে থাকে। মাল (বোতল) খাওয়ার প্রতি তার বেশ দুর্বলতা। কাপড় পরিধানে ততটা পরিপাটি নয়। সে দুটো ঘর নিয়ে একাই থাকে। বাড়ির মাঝে বেশ বড় একটি আঙিনা। এর দু’ধারে প্রায় আটটি ঘর। বাড়ির মেইন দরজার ডান পাশে একটি মনোহারি দোকান। বাড়ির সবগুলি ঘরই টিনের তৈরি। শিউলির কোনও বাচ্চাকাচ্চা নেই। সে একাই থাকে। খদ্দের নেয় খুব কম। তার এই বাড়িটি তার বাবুর। তার বাবু এই ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালী ইউপি মেম্বার। প্রায়ই সে এখানে আসে। শিউলীর ঘরের খাটে বসলে জানালা দিয়ে প্রসস্ত একটি খাল চোখে পড়ে। খালটির পানি ময়লা হলেও কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ফেলার কিংবা নেবার ইচ্ছা জাগে। কারণ সমস্ত পল্লীটিই গাদাগাদি... হট্টগোল পূর্ণ... ঘিঞ্জি এলাকা।
শিউলী তোমার ঘরটি বেশ সুন্দর। শুয়ে পরবো নাকি?
শিউলী বলল, তুমি কি শুইতে পারবা?
কেন নয়?
চলবে...