
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৪৬
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ১৮, ২০১৮
আমি ও রশিদ ভাই শিউলির খালার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পল্লীর মেইন গলির দিকে হেঁটে চললাম। এরই মধ্যে পল্লীর সকল গলিপথ আমার চেনা হয়ে গেছে। এখন অনেকটাই পরিচিত মনে হয় পল্লীর আনাচে-কানাচে। কখনও কখনও এই পল্লীটিকে যাত্রার প্যান্ডেলের মতো মনে হয়, যদিও বর্তমানে যাত্রাকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। যাত্রার মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রী সমাজের নানাবিধ সমস্যার কাহিনি-জীবনচিত্র তুলে ধরে আমাদের সামনে। আড়ালে থাকে তাদের জীবনের দুঃখ-দুর্দশার করুণ কাহিনি। আমরা সমাজের বিভিন্ন স্থানের যৌনকর্মীদের উপরের সাজসজ্জা দেখে যেভাবে তাদেরকে মূল্যায়ন করি, বাস্তবে তাদের জীবনকাহিনি ভিন্ন। আমরা অনেক সময়ই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে খিটমিটে আচরণ প্রকাশ করি অন্যের সামনে, এটা এক ধরনের অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ।
একটা মানুষ জীবনে কতগুলো নারী-পরুষের সাথে প্রতিনিয়ত ভালোবাসার অভিনয় করে যেতে পারে? একজন নারী জীবনে কতজন পুরুষের দৈহিক সান্নিধ্য পেতে পারে? একজন নারী দিনে কতজন পুরুষের সান্নিধ্যে যেতে পারে? একজন নারী দিনে দশ, মাসে তিনশো জন, বছরে ১০৯,৫০০ জন পুরষদের সাথে দৈহিক সান্নিধ্যে যাবার পর সেই নারীটির মনের অবস্থা কি হবে? এই অঙ্কটি ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তিত হলেও মানবিকতার দিক দিয়ে কতটা যুক্তিযুক্ত? একটি নারী তার মাসের নিয়তির নির্দিষ্ট একটি সময় তার স্বামীর হাত থেকে দৈহিক সান্নিধ্য থেকে বিরত থাকতে পারলেও, যৌনকর্মীদের সে উপায় নেই। একজন নারী আক্ষরিক অর্থে কতজন পরুষ দ্বারা দিনে ধর্ষিতা হতে পারে? জীবন মানেই কি অর্থে পরিচালিত জীবন? জীবন মানেই কি মনুষ্যত্বহীন জীবন ব্যবস্থা? এরকম হাজারো প্রশ্নের জালে ঘুরপাক খেয়ে যাদের জীবন চলে, তাদের মাথা সব সময় সুস্থভাবে কাজ করবে কিভাবে?
আমাকে তারা কিভাবে একজন ভালো বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে পারছে? এটা কি আমার সৌভাগ্য নাকি তাদের দুর্ভাগ্য? দেহ... দেহ... দেহ... কত দেয়া যায়? কত বলা যায়? কত শুনা যায়?
এরপরও তারা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুনভাবে সাজে। জীবিকার স্বার্থে খদ্দের ধরে। পেটের ক্ষুধা নিবৃত করে বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ। মেনে চলে মনুষ্য পরিচালিত অমানবিক নীতি। এই পল্লীর অসংখ্য নারীদের সাথে চললাম, বন্ধু হলাম কিন্তু একজনকে পেলাম কঠিন মেজাজের। তাকে বরাবরই আমি এড়ায়ে চলতাম। কারণ তার সাথে যতবার কথা বলতে গিয়েছি সে ততবারই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, দেখিয়েছে তার অগ্নি চেহারা। তার নাম রাতিয়া, বয়স ১৭-১৮ বছর হবে। চেহারা মোটামুটি সুন্দর। যথেষ্ট শুকনা শরীর...ঝড়ো বাতাসে তার পড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সে যথেষ্ট হিসেবি। টাকা ছাড়া তার সাথে কথা বলাও মুশকিল। সে তার বাড়িওয়ালির যথেষ্ট বাধ্য। বাড়িওয়ালির অনুমতি না নিয়ে সে কোনও কিছুই করতে চায় না।
যাই হোক, মেইন গলিপথ পেরিয়ে যাবার সময় দূর থেকে তাকে চোখে পড়ল। আমাদেরকে দেখে সে নিজেকে কিছুটা আড়াল করার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না... আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী দেমাগি, কেমন আছ?
রাতিয়া বলল, আমার নাম দেমাগি নয়।
তা তো জানি, আমাদের দেখে কি আপনি পালাতে পারলেন না?
হা হা হা শব্দে হেসে উঠল রাতিয়া। বলল, কোথায় পালাতে চাইলাম? পালাবো কেন?
না... আমরা যদি তোমাকে খাঁমচি দেই, সেই ভয়ে...
হা হা হা... আমরা মনে হয় খাঁমচি দিতে পারি না?
হা হা হা... কই? খাঁমচি-টামচি তো দিতে চাও না।
ঘরে চলেন... খাঁমচি দিবোনি।
খামচি খাওয়ার জন্য ঘরের ভিতর যেতে হয় নাকি?
পরিচালক মানুষ, রাস্তায় ক্যামনে খাঁমচি দেই?
চলবে