ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

মহাকালে রেখাপাত

পর্ব ১৫

স্বকৃত নোমান

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০

লাতিন কথাশিল্পী কার্লোস ফুয়েন্তেস। তাঁর একটি গল্পের বই কিনেছিলাম গত বছর। কলকাতার অংকুর সাহা ও শৈবাল কুমার নন্দ সম্পাদিত, এবং মুশায়েরা থেকে প্রকাশিত। গতকাল বন্ধু অঞ্জন আচার্য বইমেলা থেকে কার্লোস ফুয়েন্তেসের ‘গল্প সমগ্র’ নামে একটি বই কিনল। পিএম রাসেল সম্পদিত এবং বাংলাবাজারের শামস্‌ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত। সম্পাদকের নামটি দেখেই আমার সন্দেহ জাগল। বইয়ের মানুষ আমি, এই নাম তো আগে কখনো শুনিনি! কে এই রাসেল, যিনি কিনা ফুয়েন্তেসের গল্পসমগ্র সম্পাদনা করে ফেললেন!

বাসায় ফিরে অংকুর সাহা ও শৈবাল কুমার নন্দ সম্পাদিত বইটির সঙ্গে পিএম রাসেল সম্পাদিত বইটি মিলিয়ে দেখলাম। হবহু মেরে দেয়া বই। শুধু গল্পক্রম উল্টেপাল্টে দেয়া। আগের গল্প পিছে, পিছের গল্প আগে করে দেয়া। যাকে বলে ‘এধার কা মাল ওধার’। কিন্তু অনুবাদ হুবহু। পিএম রাসেল নিজে ভূমিকাটাও লেখেননি। কী দরকার? অকুর সাহা তো লিখেই রেখেছেন। সেখান থেকে রাসেল তিনটি প্যারা হুবহু তুলে দিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু কে এই পিএম রাসেল? ঢুকলাম রকমারিতে। দেখলাম এলাহি কাণ্ড! পিএম রাসেল এক ডজন বইয়ের সম্পাদক। তার উল্লেখযোগ্য সম্পাদনাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে এইচ জি ওয়েলসের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’, ‘দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘দ্য টাইম মেশিন’, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘গল্প সমগ্র’, ডি এইচ লরেন্সের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’। সবকটি বইয়ের প্রকাশক শামস্ পাবলিকেশন্স। খোঁজ নিলে দেখা যাবে পিএম রাসেল নামে কেউ নেই দেশে। থাকলেও তিনি হয়তো বাংলাবাজারের প্রুফ রিডার বা বাইন্ডার বা প্রেসম্যান বা ম্যানেজার।

প্রতি বছর বইমেলায় নতুন নতুন প্রকাশকরা আসে। স্টল পায়। প্রতি বছরই বাড়ছে স্টলের সংখ্যা। অধিকাংশই শামস্‌ পাবলিকেশন্সের মতো মারিং-কাটিং-পেস্টিং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। আমি এদেরকে বলি ‘মৌসুমি প্রকাশক’। এরা বছরে নয় মাস কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমায়। ডিসেম্বর মাসে জাগে। ধরে দু-চারটা ‘মুরগি’। শুরু করে মারিং-কাটিং। জানুয়ারিতে করে পেস্টিং। হয়ে যায় বই। সেসব বই নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে হাজির হয় মেলায়। এক মাস চুটিয়ে ব্যবসা। তারপর আবার ঘুম।

সাহিত্যের সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক থাকতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবু সাহিত্যের সঙ্গে নৈতিকতার কোথাও যেন একটা সম্পর্ক আছে। এই ধরনের কুম্ভীলকবৃত্তি অনৈতিক বলে মনে করি। কলকাতার বই বাংলাদেশে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। একান্তই ছাপতে হলে অংকুর সাহা ও শৈবাল কুমার নন্দের অনুমতি নিয়ে ছাপা যায়। অনুমতি নিতে না পারলে তাদের নামে ছেপে দিলেই তো হয়। তারা তো আর এদেশে এসে মামলা করতে পারবেন না। তা না করে তাদের একটি কাজকে এভাবে হুবহু মেরে দেয়া অনৈতিক। এই কুম্ভীলকবৃত্তির জন্য দেশে কোনো আইন আছে কিনা, জানা নেই।

আমার মনে হয়, একটা আইন থাকা দরকার। এসব উটকো প্রকাশকদের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এই ধরনের প্রকাশকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত প্রকাশকরা।

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০