শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেনের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৯, ২০২৫

পরিসংখ্যানবিদ, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেনের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৮১ সালের ৯ অক্টোবর ঢাকায় তিনি মারা যান। ১৮৯৭ সালের ৩০ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে মামাবাড়িতে তার জন্ম।

পৈত্রিক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহকুমাধীন পাংশা থানার বাগমারা গ্রামে। পিতা কাজী গওহরউদ্দীন আহমদ ছিলেন সেটেলমেন্টের আমিন। মা তাসিরুন্নেসা। শৈশব কাটে ফরিদপুরের বাগমারায়।

১৯২১ সালে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে কলকাতার তালতলা নিবাসী মোহাম্মদ ফয়েজুর রহমানের কন্যা সাজেদা খাতুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের সংসারে ৪ পুত্র ও ৭ কন্যা ছিল। এর মধ্যে রয়েছেন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন, মাহমুদা খাতুন, কাজী আনোয়ার হোসেন ও কাজী মাহবুব হোসেন।

কাজী মোতাহার হোসেনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুষ্টিয়াতে। মেধাবি ছাত্র হিসাবে বৃত্তি নিয়ে ১৯০৭ সালে নিম্ন প্রাইমারি ও ১৯০৯ সালে উচ্চ প্রাইমারি পাশ করেন। ১৯১৫ সালে কুষ্টিয়া মুসলিম হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা পাস করে ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। এখানে তিনি শিক্ষক হিসেবে পান প্রফুল্ল চন্দ্র রায়কে।

১৯১৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএ পরীক্ষায় বাংলা ও আসাম জোনে প্রথমস্থান অর্জন করে মাসিক ৩০ টাকা বৃত্তিলাভ করেন। ঢাকা কলেজে তার শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ওয়াল্টার অ্যালেন জেনকিন্স, পদ্মভূষণ ভূপতি মোহন সেন।

১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান নিয়ে এমএ পাশ করেন। সেবছর কেউ প্রথম শ্রেণি পাননি। ১৯৩৮ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে পিএইচডি করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল Design of Experiments।

তার ডক্টরাল থিসিসে তিনি Hussain`s Chain Rule নামক একটি নতুন তত্ত্বের অবতারণা করেন। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে তিনিই প্রথম স্বীকৃত পরিসংখ্যানবিদ। ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজে ছাত্র থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ডেমনেস্ট্রেটর হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং একই বিভাগে ১৯২৩ সালে একজন সহকারী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।

কাজী মোতাহার হোসেনের নিজ উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে এমএ কোর্স চালু হয় এবং তিনি এই নতুন বিভাগে যোগ দেন। তিনি গণিত বিভাগেও ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পরিসংখ্যানে রিডার ও ১৯৫৪ সালে অধ্যাপক হন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।

১৯৬৪ সালে স্থাপিত পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তিনি প্রথম পরিচালক। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে এমিরেটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

১৯২৬ সালে কাজী আব্দুল ওদুদ, সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল ফজলের সাথে তিনি মুসলিম সাহিত্য সমাজ গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি কিছুকাল `শিখা` নামক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি বাংলা একাডেমির একজন প্রতিষ্ঠাতা। কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপর অনেক বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে সঞ্চয়ন, নজরুল কাব্য পরিচিতি, সেই পথ লক্ষ্য করে, সিম্পোজিয়াম, গণিত শাস্ত্রের ইতিহাস, আলোক বিজ্ঞান, নির্বাচিত প্রবন্ধ অন্যতম।

১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনকে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৬৬ সালে প্রবন্ধসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং বিজ্ঞান চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয় তাকে। ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞান ও কলা বিষয়ে অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ডিএসসি ডিগ্রি দ্বারা সম্মানিত করে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত করে।