হাসিনার ফাঁসির রায়, যা বলল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৮, ২০২৫

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি, তারা আরও ভালো কিছুর প্রাপ্য বলে মনে করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে যে নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই তদন্তের আওতায় এনে ন্যায়সঙ্গত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কিন্তু এই বিচার ও রায় কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি পাওয়ার দাবিদার। অথচ মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এটি সবচেয়ে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর শাস্তি, যা কোনো ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে না।”

 

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে ১,৪০০-র বেশি মানুষ নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়। বেঁচে থাকা ভুক্তভোগী ও নিহতদের পরিবারের জন্য যথার্থ বিচার নিশ্চিত করতে হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী পুরোপুরি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়া প্রয়োজন। কিন্তু তার পরিবর্তে এই মামলার বিচার এমন একটি আদালতে হয়েছে, যার স্বাধীনতা নিয়ে বহুদিন ধরে প্রশ্ন রয়েছে এবং যা অতীতে অন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য সমালোচিত।”

 

তিনি আরও বলেন, “এছাড়া এত বড় ও জটিল একটি মামলার বিচার ও রায় ঘোষণা করা হয়েছে খুবই দ্রুত। যদিও শেখ হাসিনার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন, কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন প্রস্তুতের সময় ছিল একেবারেই কম। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সবক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে। অপরাধের ধরন, পরিস্থিতি, অপরাধীর দোষী বা নির্দোষ হওয়া, কিংবা রাষ্ট্র যে পদ্ধতিতেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে; কোনো কিছুর ভিত্তিতেই এর ব্যতিক্রম নেই।”

 

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০% কোটা পুনর্বহাল করা হলে সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা মনে করে, এই কোটা মূলত ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগীদের পক্ষপাত করে।

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কর্তৃপক্ষের বেআইনি সহিংসতা শুরু হলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে এবং শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের দাবিও জোরদার হয়।

 

সহিংসতায় বহু প্রাণহানির পর শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন এবং ২০২৫ সালের জুনে তার বিরুদ্ধে, অন্যান্য মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।

 

গত বছর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সারা দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেআইনি প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের প্রমাণ সংগ্রহ করে একটি ভিডিও-ভেরিফিকেশন সিরিজ প্রকাশ করে।

 

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থিত হয়ে দোষ স্বীকার করেন। তিনি সশরীরে বিচারকাজে অংশ নেন এবং তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাজনৈতিক প্রভাব, ন্যায়বিচারের ঘাটতি, মৃত্যুদণ্ডের চাপ এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে অবমাননা মামলার ব্যবহারের সমালোচনা করে আসছে। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যখন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছিল তখনও এর বিরোধীতে করেছিল অ্যামনেস্টি।