
অক্ষয় কুমার বড়ালের কবিতা
প্রকাশিত : জুন ১৯, ২০২০
উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি অক্ষয়কুমার বড়ালের আজ মৃত্যুদিন। ১৯১৯ সালের ১৯ জুন তিনি মারা যান। তার জন্ম ১৮৬০ সালে, কলকাতার চোরবাগানে। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে তার রচিত তিনটি কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো:
মধ্যাহ্নে
একেলা জগৎ ভুলে পড়ে আছি নদীকূলে
পড়েছে নধর বট হেলে ভাঙা তীরে,
ঝুরু ঝুরু পাতাগুলি কাঁপিছে সমীরে।
চাতক কাতরে ডাকে, চরে বক নদী-বাঁকে
ডাকে কুবো কুব কুব লুকায়ে কোথায়!
গাভী শুয়ে তরুতলে, হংসি ডুবে ওঠে জলে,
ডিঙাখানি বেঁধে কূলে জেলে ঘরে যায়।
দূরেতে পথিক দুটি চলে যায় গুটি গুটি
মেঠো পথ দিয়া।
পাশ দিয়ে নিয়ে জল আঁখি দুটি ঢল ঢল
কুলবধূ দ্রুত গেল লাজে চমকিয়া।
নিঝুম মধ্যাহ্নকাল অলস-স্বপন-জাল
রচিতেছে অন্যমনে হৃদয় ভরিয়া।
দূর মাঠ-পানে চেয়ে চেয়ে চেয়ে শুধু চেয়ে
রয়েছি পড়িয়া।
হৃদয় এলায়ে পড়ে যেন কী স্বপন-ভরে
মুদে আসে আঁখিপাতা যেন কী আরামে।
অন্যমনে চাহি চাহি কত ভাবি, কত গাহি,
পড়িছে গভীর শ্বাস গানের বিরামে।
খসে খসে পড়ে পাতা মনে পড়ে কত গাথা
ছায়া-ছায়া কত ব্যথা ঘুরে ধরাধামে।
প্রার্থনা
দুঃখী বলে, বিধি নাই, নাইকো বিধাতা
চক্রসম অন্ধ ধরা চলে
সুখী বলে, কোথা দুঃখ, অদৃষ্ট কোথায়!
ধরনী নরের পদাতলে।
জ্ঞানী বলে, কার্য আছে, কারণ দুর্জ্ঞেয়
এ জীবন প্রতীক্ষা কাতর।
ভক্ত বলে, ধরণীর মহারাসে সদা
ক্রীড়ামত্ত রসিক শেখর।
ঋষি বলে, ধ্রুব তুমি বরেণ্য ভূমায়
কবি বলে, তুমি শোভাময়।
গৃহি বলে, জীবযুদ্ধে ডাকি হে কাতরে
দয়াময়, হও হে সদয়।
মানব বন্দনা
সেই আদি যুগে যবে অসহায় নর
নেত্র মেলি ভবে
চাহিয়া আকাশ পানে, কারে ডেকেছিল,
দেবে না মানবে?
কাতর আহ্বান সেই মেঘে মেঘে উঠি,
লুটি গ্রহে গ্রহে,
ফিরিয়া কি আসে নাই, না পেয়ে উত্তর,
ধরায় আগ্রহে?
সেই ক্ষুব্ধ অন্ধকারে, মরুৎ গর্জনে,
কার অন্বেষণে?
সে নহে বন্দনা গীতি, ভয়ার্ত ক্ষুধার্ত
খুঁজিছে স্বজন?
আরক্ত প্রভাত সূর্য উদিল যখন
ভেদিয়া তিমিরে
ধরিত্রী অরণ্যে ভরা, কর্দমে পিচ্ছিল
সলিলে মিশিলে!
শাখায় ঝাপটি পাখা গরুড় চিতকারে
কাণ্ডে সর্পকুল,
সম্মুখে শ্বাপদ-সংঘ বদন ব্যাদানি
আছাড়ে লাঙ্গুল;
শূন্যে শ্যেন ওড়ে
কে তাহারে উদ্ধারিল? দেব না মানব
প্রস্তরে লগুড়ে?