অপূর্ব চৌধুরীর গদ্য ‘মানুষ কেন গালি দ্যায়’

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৫, ২০২১

সামাজিক লোকের অনেক ধরনের ভনিতা থাকে। কারণ ভনিতায় বাঁচতে হয় তাকে ৷ সে লেখক হোক, পাঠক হোক, সাধারণ কেউ হোক, সামাজিক একটি অলিখিত নিয়ম বানিয়ে নেয়, মেনে নেয় এবং অন্যদের ওপর সেসব চাপিয়েও দ্যায় ৷

ইংরেজরা ঘরে ফাকিং শব্দ অহরহ ব্যবহার করে ৷ হোক তিনি অক্সফোর্ডে পড়েছেন নাকি স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি । গডফাদার সিনেমার মতো পাবগুলোতে একটু কান পাতলেই শোনা যায়, এফ শব্দ কথার ফাঁকে কয়বার ব্যবহৃত হয় ৷ কিন্তু ইংল্যান্ডের কোনো মুদ্রিত পত্রিকায় ভাসুরের নাম মুখে নিতে লজ্জা করার মতো f****k লিখবে। এটাকে বলে Printing Etiquette।

এগুলো ভদ্র সমাজের ভদ্রলোকি আইন। ঘরে বউও রাখবে, ভাড়ার ঘরে মিস রক্ষিতাও পালবে। মাঝে সবাই ধোপদুরস্ত। একই ফাকিংয়ের বাংলা `চুদি` লিখলে বাঙালি জিব কেটে একাকার। মহান থেকে মুহূর্তে আপনি গালিবাজ, পণ্ডিত থেকে মুহূর্তে আপনি মূর্খবাজ! কিন্তু মানুষ এমন প্রতিক্রিয়া করে কেন?
 
একই মানুষগুলো ঠকলে, রাগলে, অত্যাচারিত হলে, কষ্ট পেলে, বঞ্চিত হলে প্রকৃতির উদ্দেশ্যে মনে মনে ঠিকই বলে, শালা একটা খানকির পুত, চুদির ভাই। মেয়েদের ছুঁড়ে দেয় মাগি, চুদমারানি ইত্যাদি উপসর্গ জুড়ে দিয়ে। এবং মনে মনে তার এই বলাটুকু তার ক্রোধ কমায়, তার কষ্টে মলম লাগায়, তার ক্ষত শুকিয়ে দ্যায়, বঞ্চিতের বিচারে পায় প্রকৃতির রায়।

তার মানে, যাকে গালি বলছে, খারাপ শব্দ বলছে, একইসাথে নিজেরাই তার নিত্য ব্যবহারের সুবিধা নিচ্ছে। কিছু শব্দ না শুনতে শুনতে সেটার অব্যাহত প্রক্রিয়াটি নিজেদের ভিতর না শোনারই আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। আর এটাতেই লোকে অস্বস্তির চেয়ে নিজেকে প্রাণপণ চেষ্টা করে প্রকাশ এবং পরিচয় দিতে যে, এমন শব্দাবলির সাথে নিজে যুক্ত নয়, এমন শব্দাবলি সে অপছন্দ করে, এবং যারা বলে তাদেরকে অপছন্দের আঙুল তুলে নিজেকে পরিচ্ছন্ন মনের পরিচয়ের ভনিতা করে।

গোটা ব্যাপারটাই একটা মিমিক অ্যান্ড রিমিক। অনুকরণ থেকে আসে। যদি অমন না করে, ভাবে যে, লোকে কী যে ভাববে তাদের! ভাবনা থেকে ভনিতা, ভনিতা থেকে ভাবনা! মাঝখানে শব্দ শুধু শব্দই থাকে।

আসল ভদ্রতা হলে কিভাবে চারপাশকে দেখছে, নিজের সে দেখাটুকুর সত্যতা প্রকাশ করছে। ভনিতার ভদ্রলোকিতে ভদ্র পরিচয় দেয়া যায়, চিন্তায় যদিও অভদ্রের শিরোমনি থেকে যায় ৷