অপূর্ব চৌধুরীর গদ্য ‘যৌনতা শরীরের স্বর্গীয় আনন্দ’

প্রকাশিত : জুলাই ০৪, ২০২০

সচরাচর চিকিৎসা সংক্রান্ত গল্প কোথাও করি না। সেটা ব্যক্তিজীবনে হোক আর লেখায় হোক, রোগীদের নিয়ে গল্প করতে নেই। একজন রোগীর ব্যক্তিগত শারীরিক সমস্যা তার প্রাইভেসি। এটি চিকিৎসকের সাথে রোগীর একটি চুক্তি। এটি আমার এথিক্স। তবে আজ একটি গল্প বলবো। মজার গল্প। গল্পের সাথে একটু শিক্ষা, একটু মজা। আমার রোগী নয়, প্যারিসের এক রোগীর গল্প। তাই চুক্তিভঙ্গের একটু স্বাধীনতা আছে।

নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কমন কিছু সমস্যা সবারই দেখা দেয়। গত ছয় মাস এসব নিয়ে সবাই কম বেশি জানে। তবে কিছু কিছু সমস্যা অদ্ভুত এবং বিরল। সাথে যদি যুক্ত হয় হাসি, একটু মজাও পাওয়া হয়। লোকটির বয়স ৬২ । প্যারিসের এক হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে লোকটি ছুটে এলো জ্বর, হালকা কাশি এবং শরীর ব্যথা নিয়ে। সাথে আরেকটি সমস্যা। লোকটির Penis জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডের মতো খাড়া হয়ে আছে। নামছেই না অনেকক্ষণ।

এমনিতে ছেলেদের Penis নিয়ে মেয়েদের মধ্যে হাজারো রসালো গল্প চালু আছে। বিশেষ করে বিবাহিত কয়েকজন মহিলা অন্তরঙ্গ আড্ডায় বসলে। পুরুষরা কিন্তু তাদের বৌ, পার্টনার কিংবা গার্ল ফ্রেন্ডের শরীর নিয়ে অন্য আরেকটি ছেলের সাথে গল্প করে না তেমন। ছেলেদের যতই খারাপ বলুক, বিছানায় একটি ছেলের এই সম্পদের যথাযথ স্ফিত না হলে মেয়েটি পারে না শুধু ছেলেটিকে বিছানা থেকে ফেলে দিতে। দাম্পত্য জীবনে পুরুষের Erectile dysfunction বিচ্ছেদ এবং অসুখী জীবনের অন্যতম একটি কারণ। লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসা করবেন। এটির এখন ভালো ট্রিটমেন্ট আছে।

এমনিতে অনেক পুরুষকে আগে তরমুজ কিংবা চাইনিজ জিংসেং হারবাল খেয়ে Penis বড় করতে হতো। সাথে স্প্রে, ব্যান্ড, এগুলো অনেকদিন থেকেই ছিল। ভায়াগ্রা এসে সবগুলোকে বাতিল করে পুরুষদের ইজ্জত রক্ষা করলো। শক্ত সামর্থ স্বাস্থ্যবান পুরুষ, অথচ ওই জিনিস পেন্সিলের চেয়ে সরু আর পটলের চেয়ে ছোট হলে তো বেইজ্জতি! যাই হোক, লোকটির Penis শক্ত এবং লম্বা হয়ে বসেই আছে। অথচ লোকটি একবারও সেক্সের কথা চিন্তাও করেনি, বা করছিল না। কোনোমতেই নামছে না। তোয়ালে চেপে নামিয়ে দিলে উহা আবারো স্প্রিঙ্গের মতো উঠে যায়! কী মুশকিল!

আইস ভর্তি ব্যাগ চেপে ধরে রাখা হলো তার penis এর উপর। তাতেও কাজ হলো না। কিছু ডাক্তার চিন্তা করলো সুঁই ঢুকিয়ে penis থেকে রক্ত বের করে চাপ কমানো। Penis বড় হয় পেনিসের দু’পাশে দুটো টিউবের মতো বেলুন থাকে, সেই বেলুনে রক্ত যত বেশি এসে জমা হবে Penis তত ফুলবে। সাথে প্রচণ্ড ব্যথাও করছিলো । পরীক্ষা করে দেখলো, লোকটির পেনিসে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। লোকটির কোভিড পজেটিভ এসেছিল। করোনা আক্রান্তদের ফুসফুস, মস্তিষ্ক কিংবা হার্টে রক্ত জমাট বেঁধে যায়, কিন্তু পেনিসে রক্ত জমাট বাঁধার কেইস এই প্রথম চিকিৎসকদের নজরে এলো। এমার্জেন্সি সার্জারি করে লোকটির Penis Erection নরমাল করা হলো।

চার ঘণ্টার চেয়ে বেশি লোকটির জিনিস শক্ত হয়ে খাড়া ছিল! মেডিক্যালের ভাষায় এই সমস্যাটিকে বলে Priapism। সেক্সচুয়াল কোনো কারণ ছাড়াই যদি দীর্ঘক্ষণ এমন শক্ত হয়ে থাকে, এটি Penis এর জন্যে খুব ক্ষতিকর। এমন হলে এমার্জেসি হসপিটালে যাবেন। করোনা ছাড়াও আরো কিছু কারণে Priapism হয়। যেমন সিকেল সেল এনিমিয়া বলে একটি রোগে। মনে করবার কারণ নেই, এটি বিরল। এমেরিকায় বছরে আট হাজারের বেশি পুরুষ এমন দীর্ঘক্ষণ খাড়া Penis নিয়ে ইমার্জেন্সিতে ছুটে আসে।

ছেলেদের ব্যাপারে একটা মিথ আছে, প্রতি ছয় সেকেন্ডে ছেলেরা নাকি একবার সেক্সের চিন্তা না করে থাকতে পারে না। সে হিসাবে দিনে আশি হাজার বার! এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি ভুল। তবে হ্যাঁ, উঠতে বসতে মেয়ে পটাতে সেক্স ছেলেদের একটি প্রাইম মোটিভ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছেলেরা দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ বার সেক্স নিয়ে চিন্তা করে! মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। মেয়েদের এই গড় ১৫ থেকে ২০। তবে সব দিন সমান নয়। নির্ভর করে আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর। এক্ষেত্রে দুই পক্ষই কোনো কোনো দিন শূন্য বারও কাটায়।

যাই হোক, বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা গেছে পুরুষ চব্বিশ ঘণ্টায় আট থেকে দশ বারের বেশি উত্থিত হতে পারে না। কারো কারো ক্ষেত্রে একবারও উঠবার আগেই নামিয়ে যায়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে একবার নামিলে ক্রেন দিয়ে সারাদিনেও একবার উঠানো যায় না। দুটোই শারীরিক সমস্যা। চিকিৎসা করিয়ে নিলে ভালো। লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। যৌনতা শরীরের স্বর্গীয় আনন্দ।