অবকাঠামোগত উন্নয়নের তুলনায় বাড়ছে না জ্ঞান
মারিয়া সালামপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯
ফেসবুকে চলছে রোহিঙ্গাদের গুষ্টি উদ্ধার। অনেকেই আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। বিষয়টা খুব স্বাভাবিক। এবার কাজের কথায় আসি।
বাংলাদেশের উন্নয়ন যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের মূর্খতাও দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কোনকিছুর ঠিক নাই, আমরা জাতি হিসেবে অতি অভদ্র। আমাদের বড় বড় বিল্ডিং আর রাস্তাঘাট হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সে তুলনায় আমাদের জ্ঞান আর সচেতনতা বাড়ছে না।
ফুটওভার ব্রিজ থাকতে আমরা এখনও দৌড়ে রাস্তা পার হই। বাসের জানালা দিয়ে থুতু ফেলি, কফ ফেলি, নিজের বিল্ডিং থেকে পাশের বাড়ির বাগানে ময়লা ছুড়ে ফেলি, ডাস্টবিনের পরিবর্তে ময়লা ফেলি রাস্তায়, ড্রেনে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে গরীব মা বা শিশুরা চিকিৎসা নিতে পারে না, মায়েরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব করে আর পথশিশুরা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু জন্য অপেক্ষা করে। হাসপাতালে ওষুধ নাই, সেই ওষুধ পাওয়া যায় দোকানে। আমরা সুযোগ পেলেই অন্যের জমি দখল করি। সুইপার থেকে বড় কর্মকর্তা সবাই অসৎ, ধান্দাবাজ আর দূর্নীতিগ্রস্থ। আমাদের কুকর্মের কথা বলে শেষ করা যাবে না। অথচ আমরা দোষ দি সরকারের। সরকারে যারা আসে তারা কি অন্য দেশ থেকে আসে? তারা আমাদের মাঝ থেকেই আসে, তাই আমরা যেমন তারাও ঠিক তেমনই হবে। আমাদের দেশের সরকারের অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়: সর্বাঙ্গ ব্যথা ওষুধ দিব কোথা। এই কারণে সরকার পাল্টালেও আমাদের অবস্থা পাল্টায় না।
আমাদের নদীগুলোতে নাব্যতা নাই, বনে গাছ নাই, রাস্তায় গর্ত, কাদা, ভবনের নিরাপত্তা নাই। আমরা রাস্তাঘাটে, অফিসে, স্কুলে, মাদ্রাসায় এমনকি হাসপাতালেও নিরাপদ না। এই দেশের ছিরি, তবুও আমরা দেশ নিয়ে কত চিন্তিত! বাংলাদেশের মতো দেশের মানুষ হয়ে আপনি দেশের সৌন্দর্য্য আর নিরাপত্তা নিয়ে এত ভাবেন, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গালি দেন রেসিস্ট বলে। তার অভিবাসী সংক্রান্ত পদক্ষেপের সমালোচনা করেন চায়ের টেবিলে বসে। আপনার চেয়ে বড় ভন্ড আর কেউ আছে?
আপনি সুযোগ পেলেই পাড়ি জমাবেন ইউরোপ আর আমেরিকায়। নিজের দেশ ভালো না বলে কেবলমাত্র উন্নতদেশের সুবিধা ভোগ করার লোভে বিদেশে চলে যাবেন। আপনি বিরাট বড় ইসলামের ঝান্ডাধারী। কিন্তু, আপনি সুযোগ পেলেও সৌদি যাবেন না, যাবেন কোথায়? ইউরোপ আর আমেরিকা। তারপর, সেখানে গিয়ে আপনি ওদের সভ্যতা আর সাংস্কৃতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাথায় হিজাব পরে ঘুরে বেড়াবেন, আপনি চলবেন আপনার তৈরি নিয়মে। তাতে আবার তাদের বিরক্ত হওয়া চলবে না, তারা নিজের দেশের ভালোমন্দ চিন্তা করে আপনাকে তাদের নিয়মে চলতে বললে, আপনি তাদের বলবেন রেসিস্ট। তখন আপনার ব্যক্তিস্বাধীনতায় আঘাত আসবে, আপনার মানবাধিকার ক্ষুন্ন হবে। কিন্তু, আপনি বসে বসে রোহিঙ্গা বিরোধী প্রচারণা চালাবেন, সেটা ঠিক আছে ১০০% ভাগ। ভন্ডামীর একটা লিমিট থাকা উচিত।
রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত জাতি। তারা কোন দেশে গেলে সেখানে পরিবেশ নষ্ট করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তারা গরীব আর সুবিধাবঞ্চিত, তাই তারা অপরাধ করবে সেটাই স্বাভাবিক। তারা নির্যাতিত, তাই তারা উগ্র হবে সেটাই স্বাভাবিক। এটা জেনেবুঝেই আমাদের সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে মানবিক কারণে। তাদের যেকোন মূল্যে তাদের নিজেদের ভূমিতে ফিরে যেতেই হবে। আমরা নিজেরাই গরীব আর অশিক্ষিত, আমাদের নিজেদেরই সম্পদ নাই, সেখানে এত বড় একটা জনগোষ্ঠীকে খাওয়ানো আমাদের জন্য অসম্ভব বিষয়, তাই রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের দেশেই পুনর্বাসন করতে হবে।
তারা যেন অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। তাদের নিয়ে যে জাতীয় আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র চলছে, সেটা প্রতিহত করতে হবে। এনজিও গুলোর আয় আর ব্যয়ের হিসাব রাখতে হবে, তাদের নজরদারির আওতায় আনতে হবে। রোহিঙ্গাদের যারা ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ বানিয়ে দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে, রোহিঙ্গারা মোবাইল কোথায় থেকে পাচ্ছে, সেটা তদন্ত করতে হবে। তাদের শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে আর বড়দের অধিক সন্তান জন্মদানে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
কিন্তু, তাই বলে আপনি একটা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘৃণা ছড়াবেন, এটা কোন সভ্যতার অংশ? এটা অজ্ঞতা, আপনি যে সাম্প্রদায়িক বা বর্ণবাদী সেটা আপনি বুঝতেই পারছেন না। আপনার, আমার কারো ট্রাম্প বা মোদীকে খারাপ বলার কোন অধিকার নাই, আমরা সবাই সমান।