অমিত কুমার কুণ্ডুর ৫ কবিতা
প্রকাশিত : জুন ২৫, ২০২০
ভালোবাসার ফুল
ভালোবাসা ফুল বসন্তে ফুটে
`শুক্র` যোনিতে মেশে
প্রেম শিহরণ লোমকূপ থেকে
মিশে যায় এলোকেশে।
আবেগের মেঘ আঁধারের বুকে
তুলে সুবিশাল ঝড়
পাগল প্রেমের মত্ত তুফানে
খুশি করে অন্তর।
সেই মত্ততা সৃষ্টি বাঁচায়
কলরবে কোলাহলে
নতুন মুখের গান শুরু হয়
ভূমি জঙ্গল জলে।
নারী
আমরা নারীকে বন্দি করেছি
বিয়ে বিয়ে খেলা সন্ধি করেছি
ভোগের হাজার ফন্দি করেছি
নারী দেহ কাম গন্ধি করেছি।
নারীর জন্য শরম করেছি
জুজু ভয়ে মন নরম করেছি
যেকোনো শাস্তি চরম করেছি
রাত্রে শয্যা গরম করেছি।
নারীর ইচ্ছা তুচ্ছ করেছি
আবেগে গোলাপ গুচ্ছ করেছি
সোহাগী ময়ূর পুচ্ছ করেছি
রক্ত মাংস `চুচ্ছ` করেছি।
নারীর শক্তি হরণ করেছি
কী ভীষণ সহমরণ করেছি
শেকল বন্দি চরণ করেছি
দেবদাসী রূপে বরণ করেছি।
আমরা নারীকে যেমন গড়েছি
বিধান যেমন রচনা করেছি
তত্ত্বে তথ্যে তেমন পড়েছি
নারীকে মেরেছি, নিজেও মরেছি।
অভিশাপ
জন্মালে ডাক্তার মরলেও ডাক্তার
ডাক্তার ছাড়া কোনো গতি নেই
হাঁচি হলে ডাক্তার কাশি হলে ডাক্তার
তাকে নিয়ে বাজে কথা কতি নেই।
হাফাচ্ছ ডাক্তার লাফাচ্ছ ডাক্তার
ডাক্তার ছাড়া দিন চলে না
ফোঁড়া হলে ডাক্তার খোঁড়া হলে ডাক্তার
না থাকলে পড়তিস জলে না?
তোর পেটে টিউমার, তার পেটে আলসার
ডাক্তার ডাক্তার ডেকে খুন
বো`র হবে বাচ্চা, আচ্ছা আচ্ছা
ক্লিনিকের গেটে তুই থেকে খুন।
ডাক্তার না থাকলে বাপ হতি পারতি?
পেটে গু আটকালে ছাফ হতি পারতি?
রোগের কষ্ট থেকে মাফ হতি পারতি?
বাসর রাত্রে তুই রাফ হতি পারতি?
হা হা হা হা হা হা হা হা দাদা
কেন তুই হাসছিস গাধা?
দাঁতে যখন পোকা হয়
হাসতে গেলে বোকা হয়
মসুলমনি খোকা হয়
তখন কাকে লাগে?
কাকে ভাবিস আগে?
ডাক্তার তো, ডাক্তার তো, ডাক্তার তো, বল—
মিথ্যা কথা হারামজাদা, তবু করিস ছল?
কী পিল খাবে? কোন ব্র্যান্ডের বেলুন নিবি তাও
ডাক্তারকে কাছে পেলেই জেনে নিবি ফাও
ডাক্তারকে বলবি তোমার স্যাম্পলগুলো দাও
ফ্রি ফ্রি সেই স্যাম্পল বসে বসে খাও
আবার তুমি হাড় বজ্জাত, তার বদনাম গাও!
ডাক্তার তো ঠাকুর ওরে
ভগবানের রূপ
সে মরেছে এখন তোরা
এক্কেবারে চুপ!
কিছু না হোক একটু ঘৃণা
ছুড়তেও তো পারতি
এতে কত মেগাবাইট
খরচ হতো বাড়তি?
মারলি যারা ডাক্তারকে
দিই অভিশাপ এই
মরার আগে যেন তোদের
লাগে ডাক্তারকেই।
যদিও তোরা হাড় বজ্জাত
মাথায় কিছু নেই!
সর্বশ্রেষ্ঠ জীব
আমরা মানুষ এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব
পূর্বপুরুষ বুদ্ধ যিশু রবীন্দ্রনাথ শীব
আমরা রাখি বুদ্ধি বিবেক বাঁধতে পারি দল
বল প্রয়োগে কাজ না হলে প্রয়োগ করি ছল!
দখল করি হাওড় বাওড় নদী শ্মশানঘাট
পরের জমি পরের বাড়ি গাঁও গেরামের হাট
নকল করি পরীক্ষাতে টুকলিফাইয়ে পাশ
মাল কামাতে আঁধার রাতে প্রশ্ন করি ফাঁস!
কী জঘন্য! হাঁটুর সমান কন্যা করি রেপ
সেই নিচুতা মোবাইলে করে রাখি টেপ
এধারকা মাল ওধার করি ট্যাক্সও ফাঁকি দিই
সোনার চালান পাচার করে ফেন্সি গাঁজা নিই!
দেশে দেশে যুদ্ধ বাঁধাই ফেলি মরণ বোম
চুরি করি ত্রাণের অর্থ, আমরা কিসে কম?
দরিদ্রদের শাসন করি শোষণ করি রোজ
চুরির টাকায় ডাইনিংয়ে হয় নিত্য ভুরিভোজ!
সরকারি ঘর বাঁশের চটায় করতে পারি বেশ
নিজের পকেট ভরলে খুশি ধ্বংস হলেও দেশ
গুজব ছড়াই দাঙ্গা বাঁধাই ধর্মে করি খুন
প্রেম জীবে নয়, হিংসা ঘৃণা এই আমাদের গুণ!
পর্ব এলেই সব জিনিসের দাম বাড়াতে চাই
বৌকে ঘরে বন্দি রেখে ভ্রমর হয়ে যাই
আমরা মানুষ হত্যা করি নিজেই নিজের ভাই
সর্বশ্রেষ্ঠ এমন জীব আর ত্রিভুবনে নাই!
কবি তুমি পালাও
যেখানে
ভালোবাসতে গেলে সমাজের অনুমতি নেয়া লাগে
সেখানে আর যাই হোক, কবিতা লেখা যায় না।
ভেজা ঠোঁটের স্পর্শে কবিতা প্রাণ পায়—
কবিতার পাপড়িগুলো গোলাপের মতো বিকশিত হয়।
যেখানে
বুকের উষ্ণতা নিতে সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া লাগে
সেখানে আর যায় হোক, হৃদয় নির্মাণ হয় না।
বুকের নরম পেলব উষ্ণতায় হৃদয়ের কপাট খুলে যায়
সেই হৃদয় সমুদ্রের মতো বিশাল হয়, অসীম হয়।
যেখানে
দুজন মানুষ একসাথে থাকলে
উন্মাদ জনতা পুলিশ নিয়ে আসে
সেখানে আর যাই হোক, ব্যক্তি অধিকার থাকে না।
অধিকারহীন, অতৃপ্ত আত্মা, ভুখা আত্মা, বঞ্চিত আত্মা
উন্মদ হতে হতে, বিকৃত হতে হতে, পচেগলে নষ্ট হয়ে যায়।
সেই নষ্ট আত্মার প্রতিধ্বনি শুনি আজ হাটে বাজারে
চায়ের দোকানে, রেস্তোরাঁয়, বাসে, ট্রেনে সবখানে।
নষ্ট বঞ্চিত শোষিত সমাজ কবির জন্য নয়।
কবি, তুমি পালাও
এ শহর ছেড়ে পালাও
ঐ মাঠ পেড়িয়ে, ঘাট পেরিয়ে,
গাঁও গেরামের হাট পেড়িয়ে পালাও।
কবি তুমি ছোটো
শহর ছেড়ে, নগর ছেড়ে
কিশোরী বৌয়ের আঁচল ছেড়ে ছোটো।
এ সমাজ তোমার নয়, তুমিও এ সমাজের নও
এ নষ্ট সমাজ ছেড়ে, এ গলিত প্রথা ছেড়ে
এ পশ্চাৎপদ সংস্কৃতি ছেড়ে দূরে চলে যাও।
যেখানে ভালোবাসা বাঁধাহীন হবে
সমাজ ও আইনের রক্ত চক্ষু যেখানে থাকবে না
কবি, তুমি সেখানে যাও।
তোমার জন্য উষ্ণ হৃদয়
ভেজা ঠোঁট, প্রসারিত বাহু
অপেক্ষা করে আছে।
তৃষিত হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাও কবি
কবি, তুমি মুক্ত হও।
























