অমিত কুমার কুণ্ডু
অমিত কুমার কুণ্ডুর ৫ কবিতা
প্রকাশিত : জুলাই ১২, ২০২০
সব কথা বলতে নেই
সব কথা বলতে নেই
সব কথা বলা হয়ে গেলে
প্রেমিকার ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়
সেই প্রিয় মুখটি আর আগের মতো ভালো লাগে না।
কিছু কথা গোপন থাক,
সব চোরা কুঠুরির সন্ধান পেয়ে গেলে
জীবন পানসে হয়ে যায়।
জীবনের সব দিক দেখা হয়ে গেলে
প্রেমিকার সব তিল গোনা হয়ে গেলে
লজ্জা জড়ানো মুখ কোথায় লুকাবে?
সব প্রশ্ন করতে নেই
কিছু কৌতূহল তোলা থাক সময়ের পিঠে।
সময় আসলে ফিরে চলে যাব সেখানে
যেখানে তুমি নেই, আমি নেই
যোনি নেই, লিঙ্গ নেই
নেই কোন ঋতুবতী নারী—
যেখানে হাজার তারা, পাশাপাশি মিলেমিশে
যেখানে প্রেমের সাথে প্রেমিকের আড়ি।
সেই দেশে যাব আমি
সেই দেশে যাব এক ঋষি কবি নিয়ে
যে কবির ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই
নেই কোনো সঙ্গম লিপ্সা
যে কবি বাতাস খেয়ে বেঁচে থাকে
আলোর স্রোতে করে স্নান
সম্ভোগ করে রোজ কবিতার স্বাদ—
সে কবি আমার হবে একান্ত আপন।
আমার হৃদয় খুঁড়ে
লাগাব সেই কবির হৃদয়
দুজন মিলেমিশে একাকার হলে
পৃথিবী দেখবে এক নতুন সমাজ।
পৃথিবী বাসবে ভালো বঞ্চিতদের
পৃথিবী বাসবে ভালো পতিত মানুষ
পৃথিবী বাসবে ভালো বেশ্যার কোল
পৃথিবী বাসবে ভালো তোমাকে আমাকে।
তখন আমারও কাজ শেষ হয়ে যাবে—
তবুও বলছি প্রিয়,
সব কথা বলতে নেই
সব কথা বলা হয়ে গেলে
প্রেমিকার ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়।
অবগাহন
গোধূলি লগনে তোমার জঘনে
গোলাপি শাড়ির ভাঁজ
চিত্তে আমার গোপন প্রেমের
আগুন ছড়াল আজ।
চিত্তে আমার আবেগ ছড়াল
দিঘল বেণির দোল
হৃদয়ে প্রেমের পরশ বুলাল
মায়াবী হাসির রোল।
হৃদয়ে খুশির কাঁপন তুলল
তোমার অরূপ চোখ
তোমার সঙ্গে সঘনে আমার
মধুর মিলন হোক।
অমৃতের পুত্র
স্রোতের অনুকূলে সবাই চলতে পারে
স্রোতের প্রতিকূলে যে মাঝি নৌকা বেয়ে যায়
তার চোখে ধরা পরে পৃথিবীর রূঢ় বাস্তবতা।
প্রকৃতি তার শিক্ষালয় হয়ে ওঠে
সভ্যতা শেখে তার থেকে
তার জীবন, জীবনের সংগ্রাম
বন্ধুর পথে পথ দেখায়।
জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষগুলো
তাকে দেখে বাঁচার স্বপ্ন দেখে
সে হয়ে ওঠে নায়ক।
যে পথে সবাই হাঁটে
যে স্থানে সবাই যায়
যে বিদ্যা সবাই জানে
সে পথ, সে স্থান, সে বিদ্যা
গৌরব ছিনিয়ে নেয়।
বন্ধুর পথে হেঁটে চলে যে পথিক
যে পথ দেখায় নতুন পথের
যে খুঁজে নেয় নতুন আবাস
যে শেখায় নতুন বিদ্যা
সে বেঁচে থাকে অনাদি কাল পর্যন্ত।
তার মৃত্যু নই।
সমাজের বিপরীতে যে বীর সংগ্রাম করে,
সে অমৃতের পুত্র।
জীবন তো এমনই
স্নিগ্ধ বৃষ্টিতে ভিজে উঠেছে রাজ্যের অলসতা
কাটেনি পুরোপুরি অন্ধকার
চোরাবালির ওপর দিয়ে শুরু হয়েছে অনন্ত পথচলা
আমি তোমার সাথে হাঁটতে শিখেছি এ বাংলায়।
অনুবাদের মতো কিছু নেই
সবইতো হৃদয় ছুঁয়ে আছে।
হয়তো কোনো একদিন তোমার জন্য
হয়তো নিজেকেই হবে পাওয়া
নতুন ভাবে, নতুন কোনো বসন্তের সকালে।
অনেক ভালোলাগার একটি গান শুনে
বিভোর হয়ে রূপ সাগরে ডুব দেয়া
অচেনা অজানা কোনো স্বপ্নে হারিয়ে
নিজেকে পুনরায় খুঁজে পাওয়া—
এটাই তো জীবন।
হয়তো এভাবেই
হওয়ায় হাওয়ায় ভাসানো গোলবারের উপর দিয়ে
ছুটে আসে জীবনের রং
জীবনতো এমনই।
এমন ভাবেই শেষ হয়,
শেষ থেকে শুরু হলে মুছে যায় সব পরাজয়।
ঝাঁকের কই
সবাই দেখি স্রোতের তালে গা ভাসায়
`ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যায়`
এখন চলছে কবিতা নিয়ে খেলার স্রোত
ভেসে যাচ্ছে খ্যাত-অখ্যাত, নামি-বেনামি কবিরা।
কবিতা কি খেলার বস্তু কবি?
কবিতা কি ফুটবল?
কবিতা কি লুডু, দাবা, তাস?
কবিতা কি খেলার সামগ্রী?
কবিতা নিয়ে কী শুরু হলো এসব?
কেউ কবিতা নিয়ে খেলছে
কেউ দুই-তিন লাইনের কবিতা নিয়ে মেতে আছে
কবিতা হাসছে কবি!
কবিদের এই ছেলেমানুষি দেখে কবিতা হাসছে।
মধুসূদন হাসছে
রবীন্দ্রনাথ হাসছে
নজরুল হাসছে
জীবনানন্দ হাসছে
এমন কি সুকান্তও হাসছে
অমৃতলোকের কবিদের হাসি দেখে
আমার কেবলই হাসি পাই।
আমিও হাসছি।
আমার সাথে হাসছে কবিতার বই
কবিতার খাতা,
চেয়ার, টেবিল, কলম, তামাম দুনিয়া
হা হা হা হা অট্টহাসিতে প্রকম্পিত চারপাশ।
কবি, কবিতা কি খেলার বস্তু
যে তাকে নিয়ে খেলছেন?
























