অমিতাভ পালের গল্প ‘শাড়ি সালোয়ার জিন্স’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১

বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাকের বিবর্তন আজকাল এক নতুন চাহিদার জন্ম দিচ্ছে লোকটার মনে। তার যৌবনের প্রারম্ভে মেয়েরা সচরাচর শাড়ি পরতো আর তখন তার মনে হতো, এই বিরাট বস্ত্রখণ্ডের ভিতরে যে নরম মসৃণ দেহটি বাস করে, তাকে উন্মোচনের আনন্দই আলাদা। অনেকটা যেন ফিতা এবং মোড়কের অজস্র পরত খুলে অস্থির শিশু একটা অদেখা উপহার বের করছে। ফলে সে সারাক্ষণ মনে মনে মেয়েদের শাড়ি খুলে বের করতো সেই অজানাকে আর হৃদয়মথিত এক কামনামুখর আত্মরতিতে ডুবে যেত।

তারপর পোশাকের দিন বদলে গেল আর মেয়েরা বস্তুজগতের ব্যস্ততার ইশারায় পরতে শুরু করলো সালোয়ার কামিজ। আর তারও উপহারের প্যাকেট বদলে গেল। এখন পরত হয়তো কম, কিন্তু সেলাই অনেক। যেন কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানোর জন্য সেলাই করে মজবুত করা হয়েছে। যেন পথের মধ্যে কেউ সেটা খুলতে না পারে।

কিন্তু লোকটা ঠিকই খুলে ফেলতো ওই অজস্র সেলাই, ওই মজবুত প্যাকেট। অবশ্য সেটাও মনে মনে। তবে এবার প্যাকেট খোলার আগেই যেন জেনে ফেলা যেত উপহারের ধরন। কেননা সালোয়ার আবছাভাবে জানিয়ে দিত ঊরু আর নিতম্বের গঠন, যোনির ভাঁজ এবং কামিজের পরিধিকে বাড়িয়ে স্থিতিস্থাপকতার শেষসীমা পর্যন্ত নিয়ে যেত তরুণ উদ্ধত স্তন।

কিন্তু লোকটার সেই সুখ বেশিদিন রইলো না মেয়েরা বোরকা পরা শুরু করবার পর। হঠাৎ যেন তারা ঢুকে পড়লো কোনো এক দূর্গের মধ্যে, ঘুমিয়ে পড়লো রূপার কাঠির ছোঁয়ায় এবং এখন যেন তাকে রাজপুত্র হয়ে রাক্ষস, দৈত্যদানো আর ডাইনিদের তৈরি করা অজস্র বিপদের পাথার পার হয়ে তাদের ঘুম ভাঙাতে হবে। বোরকার তীব্র কালো অন্ধকার তার মনেও ঢেলে দিল এমন এক দৃশ্যহীনতা, যেখানে কেবল একটা একঘেঁয়ে পর্দাই শুধু ঝোলে।

কিন্তু এরপরেই বিষয়টা পুরাপুরি পাল্টে গেল মেয়েরা যখন টপস আর জিন্স পরতে শুরু করলো। এবার তাদের শরীরের পরিধিরেখা আরো স্পষ্ট, আরো বিশদ, আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠলো। আর এরফলে লোকটাও মনে মনে উন্মোচনের কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়লো যে, অবসর বলতে তার আর কিছুই রইলো না। তবে এবার আকার আকৃতির চেয়েও সে খুঁজতো রঙ, সজ্জা, রুচি, গঠন এবং ছন্দ। হঠাৎ খুলে যাওয়া এই বিশাল জগৎ এবং শরীরের পরিধির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া পোশাকের হাতছানি তাকে এতটাই লোভি করে তুললো যে, মনে মনে না বরং হাতেকলমে কোনো একটা মেয়েকে খুলে দেখতে উন্মাদ হয়ে উঠলো তার ইচ্ছা। বস্তু, রক্তমাংস, চাক্ষুস অভিজ্ঞতা এবার নাম লেখালো তার চাহিদার তালিকায়।

কিন্তু এটা করতে গেলে তো কোনো একটা মেয়ের কাছে যেতে হবে, তাকে রাজি করাতে হবে এবং এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে ব্যক্তিগত হবার অবসর এবং জায়গা থাকবে অফুরন্ত, যাতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা যায় যাকিছু সে দেখতে চায়। এরজন্য সে অপেক্ষা এবং পছন্দের সাথে বন্ধুত্ব শুরু করলো এবং কোনো একদিন শুভক্ষণে জিন্স এবং টপস পরা একটা মেয়ের কাছে জানালো তার আকাঙ্ক্ষার কথা। মেয়েটাও নীরবে ধৈর্য নিয়ে তার সব কথা শুনলো। তারপর কথা শেষ হলে তার চোখে চোখ রেখে বললো, আপনি কি বিবাহিত? লোকটা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানানোর পর মেয়েটা বললো, তাহলে তো বউকে প্যান্ট পরিয়ে আবার খুলে দেখলেই পারেন।

দুই.
লোকটা আজকাল তার বউকে সপ্তাহে দুইদিন শাড়ি, দুইদিন সালোয়ার কামিজ আর তিনদিন জিন্স পরিয়ে রাখছে।