আকরাম খান

আকরাম খান

আকরাম খানের করোনাকালের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : মে ০৭, ২০২০

মহামারির দিনে গুজব

১৪৪ ধারার চোখ রাঙানোকে বুড়া আঙুল দেখিয়ে
ছড়িয়ে পড়ছে গুজব
মানুষের আজাব থেকে সাময়িক মুক্তিতে জঙ্গলের
ঝোপঝাড়ের আড়ালে নাকি বুনো ফুলগুলো
উপচে পড়ছে!
হাইওয়েতে সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ের মতো
লাফঝাপ দিচ্ছে হরিণেরা
কাদা-পানি থেকে উঠৈ বাইসনেরা হাতির সুরে
শাওয়ার নিচ্ছে
ভাতঘুমে বেহুশ সৈনিকদের বন্দুকের নলে
উড়ে এসে বসছে
রংবেরঙের বড় বড় ডানাঅলা প্রজাপতি!
গোল চত্বরের ফোয়ারায় পেখম মেলেছে ময়ূর
অ্যাপার্টমেন্টের কার্নিশে প্রকাণ্ড মৌচাক ভরে উঠছে মধুতে
বুনো শূকরেরা নাকি এখন ফিয়েস্তায়,
জেব্রা জিরাফদের চলছে কার্নিভাল!
মহারাজ সিংহ এই মহোৎসবে স্থগিত রেখেছে
মাংস ভক্ষণ।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াড়িতে
লাল কাঁকড়ার সমাবেশ! বিপ্লবের ষড়যন্ত্র!

একে অপরের থেকে নিরাপদ দূরত্ব মেনে
আনকালচার্ডরা নাকি তুলছে না রেশন
মন্বন্তরের প্রেতাত্মারা রাস্তায় খুঁটছে চালডালের দানা
গাছ থেকে নেমে অমাবস্যায় গেছো ভূতেরা
মুর্দাদের মাটি দিচ্ছে
আরেক অমাবস্যায় মুর্দারা নাকি ফিরছে জিন্দা হয়ে!

নাজেহাল প্রশাসন
বিপর্যস্ত গোয়েন্দা প্রধান
গুজব উৎপাদনক্ষম সব কলকারখানা লকডাউন
তারপরও কোত্থেকে যে আসছে কারফিউ ভেঙে
দলে দলে ঢাকামুখী গুজব!

হাউস-অ্যারেস্ট

তেষট্টি হাজার তিনশত ষাট মিনিট হাউস-অ্যারেস্টে আছি।
উত্থাপিত অভিযোগ সমূহ—
ক্রসফায়ারে রাষ্ট্রের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে কবিতার
গ্রেনেড ছোড়া!
কোমলমতিদের ফুসলিয়ে রাস্তায় নামানো,
মন্ত্রী মহোদয় নাকি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যখন
কোমলমতিরা চেয়ারের পায়া ধরে টানাহেঁচড়া করেছে।
কৃষকদের নাকি প্ররোচিত করেছি সোনার ফসলে
আগুন ধরিয়ে দিতে!
আমার উসকানিতেই শ্রমিকরা কলকারখানার সামনে
বাঁধিয়েছে হট্টগোল।
সবচেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে
কোভিড নাইনটিন আমার উৎপাদিত!
মরার উপর খাড়ার ঘা পঙ্গপালও নাকি আমারই আমদানি!

এত খতরনাক মুজরিমকে পাথরের সাথে পা বেঁধে
সমুদ্রে ফেলে না দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে কেন?
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি, আমাকে নিংড়ে বের করা হবে
গোপন নীলনকশা আর যত নথিপত্র!
ষড়যন্ত্র বিশেষজ্ঞ চিলেকোঠার সেপাইরা চত্বরে নেমে
মার্চ শুরু করেছে আমার বাড়ির উদ্দেশ্যে,
এই দুই হাত দিয়েই নাকি উড়বে বিপ্লবের লাল নিশান!
আছি মাইনকা চিপায়
কি করে ওদের সামলাই, কি করে বুঝাই
একটা পাখাওয়ালা সামান্য তেলাপোকা আমি
মাঝেমধ্যে ফরফর শব্দে লাফঝাপ দিয়েই ক্ষান্ত।
ভাই ও বোনেরা রহম করেন
যে যার ঘরে ফেরত যান
হাউস-অ্যারেস্টে আছি, আপনাদের দয়ায় আবার
গুম না হয়ে যাই!

এপাচি সর্দার একচোখা ঈগল

এপাচি সর্দার একচোখা ঈগল মানব প্রজাতির নিঃশ্বাসের
এক তৃতীয়াংশ বাতাস জিম্মি করেছে!
বাকিটুকু পুরে রাখতে থলের মুখটা যেই খুলতে যাবে
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ,
দরজা খুলতেই কালো কোট-টাই সানগ্লাস পরা চারজন
আগন্তুক ঘরে ঢুকে ল্যাপটপ খুলে বসে।
দুর্যোগ, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, পরিসংখ্যান, বাজারদর,
বিপন্ন ভবিষ্যৎ এসব দুর্বোধ্য কথা বলে।
সর্দার স্পষ্ট জানতে চায় কেন এসেছে
তারা জানায় ঋণ মৌকুফের আর্জি নিয়ে,
নিস্পৃহ দৃষ্টির অনড় সর্দারকে দেখে অনুরোধ করে
অন্তত কিছুটা সময় বর্ধিত করতে।
সর্দারের মনে পড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সাদা চামড়ার
লাল চুলের লোকগুলো আগেও এসেছিল,
এরা শুধু মিথ্যা বলে
প্রতিশ্রুতি দেয় ভাঙার জন্য
এদের কথায় আর কাজে গড়মিল।
প্রাচীন এপাচি সর্দারের প্রাগৈতিহাসিক ওক গাছের
ছালের মতো চামড়া!
সে দৃঢ় মাথা নাড়ায়
আগন্তুকরা কিছুক্ষণ বসে থেকে হ্যালিকপ্টারে
সোজা ওয়াশিংটনে উড়ে যায়, পৃথিবীর ঈশ্বরদের সাথে করে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কালক্ষেপণ।
এদিকে একচোখা ঈগল ডেকোটার অন্তহীন প্রান্তর, নদী,
ঝর্ণা, পাহাড়, অরণ্য, হরিণ, বাফেলো আর
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বংশধরদের পাওনা সুদে-আসলে
আদায় করতে মুক্তবাজারের নিঃস্ব মানুষদের ভেন্টিলেটর
থেকে শুষে নেয় অবশিষ্ট শ্বাস!