আকরাম খান

আকরাম খান

আকরাম খানের ৪ কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ১৮, ২০২০

আনসার গফুর ও তার থ্রি নট থ্রি

চৈত্রের ঝিম মারা দুপুরে পাকুন্দিয়ার সুনসান স্টেশনের
বেঞ্চিতে বসে আছে আনসার গফুর।
হাড্ডিসার শরীরে তিন প্রজন্ম ক্ষেত মজুর গফুরের চাকরির মতোই বেমানান ঢিলাঢালা খাকি উর্দি আর
মাথার ক্যাপ।
চুপসে যাওয়া গালের পাকাদাড়ি কণ্ঠের হাড়ে নেমে এসেছে,
গর্তে ঢুকে যাওয়া নিঃস্বপ্রাণ দুই চোখের উপর সাদা ভুরু,
সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল সফেদ পাপড়ি,
মুখের বলিরেখা অন্তত কিছুক্ষণের জন্য ট্রেনের যাত্রীদের
ব্যস্ত রাখে বয়স অনুমানে।
গফুরের চাকরিগত বিশেষ যোগ্যতা থ্রি নট থ্রি কাঁধে
সারাদিন দাঁড়ায় থাকতে পারা
আর বসে থাকতে আমরণ!

বুজুর্গ এই থ্রি নট থ্রি’র ইতিহাস বেশিকিছু জানা যায় নাই,
জালিয়ানঅলাবাগে এক গোরা সৈনিকের হাতে নাকি
গর্জে উঠেছিল সে,
৭১রে কোনো পাকহানাদাররে গুলিবিদ্ধ করতে না পারলেও
কালিগঞ্জের আলবদর আসগর খাঁর বুক ফুটা করে দিয়েছিল!

লাঙল ছেড়ে ৩৫ বছর আগে যেদিন গফুর থ্রি নট থ্রিটা
প্রথম হাতে নেয়, সেদিন থেকে বন্দুকটা অহিংস!
মৃধাবাড়ির মেট্রিক পাসরে যৌতুক না দিতে পারায় গফুরের
কলিজার টুকরা অছিমন যখন কীটনাশক খায়
তখন গান্ধিবাদী থ্রি নট থ্রি মিউচুয়ালে ব্যস্ত!
বিনা চিকিৎসায় আমেনা যেবার মরলো
ঠাণ্ডা নলে কপাল ঠেকানো গফুরের চোখ থেকে তিনদিন দুইরাত পানি পড়ছিল,
হুঁশিয়ার আঙুল তারপরও চেপে ধরে নাই ট্রিগার।
আসছে শ্রাবণে গফুরের চাকরির মেয়াদ শেষ,
অস্ত্র জমা দেয়ার আগে তার খুব ইচ্ছা চার-পাঁচটা গুলি ছোড়ার,
কিন্তু শ্যাওলা পড়া মগজ আর ছানি পড়া চোখে
শত্রু-মিত্র চিনতে পারে না আর পাকুন্দিয়ার
গফুর আলি আনসার!

ওগো সুন্দর ওহে সুশীল

সংবাদপত্রের শিরোনাম না
ভেতরের পাতায় হারায় যাওয়া হারানো বিজ্ঞপ্তি
আমি তোমার লজ্জা একমাত্র অস্বস্তি!
ব্যবস্থাপনায় তুখোড়, সমান্তরালে নিখুঁত চালাও দুই জীবন
একটা প্রকাশ্য একটা গোপন।
তোমার দপ্তরে পদহীন আমি কর্মচারী
ঘুরিফিরি মাছি মারি
ভাবি, পেছনের বারান্দায় কখন টানবো বিড়ি।
সানগ্লাসের আড়ালে আমি পাথরের চোখ
তোমার চর্ম যৌন গোপন রোগ।
দস্তানার নিচে একটা খাটো আঙুল
দাঁত আর মাড়ির চিপায় এক চিমটি গুল।
মারো কাটো যাই করো আমি খাই তোমারই নুন
ওগো সুন্দর ওহে সুশীল ঘন কালো চুলের ভেতর
আমিতো উকুন!

দাম্পত্য

ওগো প্রাণ প্রিয় মুখরা
সূর্যের রশ্মি যেন অব্যর্থ তীর
ধনুকের মতো বাঁকানো তোমার ক্ষমাহীন ভুরুকুটি!
সন্ধ্যা নামে বাতাস বহে ধীর
রাতের শিউলি ছড়াতে থাকে প্রশ্রয়ের মৃদু ঘ্রাণ
অনায়াস উন্মুক্ত অন্তর্বাস
মধুর অনুমোদন কি নিবিড় সহবাস!

স্মৃতিকাতর

বিকালের আলোয় তোমার নিপুণ অলীক হাতের পাশে
মরা মাছের মতো পড়েছিল আমার উদ্যমহীন হাত।
চলে যাবার সময় অস্ফুট বলেছিলে,
আমার পায়ের নিচে শর্ষে।
রোজ সকালে তোমার অনুপস্থিতি এ শহরে
আড়মোড়া ভাঙে
আশা-নিরাশায় উড়িয়ে দেয়া কবুতরগুলো
দিকবিদিক পথ হারায় শূন্যে।
দূরবীনে চোখ লাগিয়ে উত্তাল সমুদ্রে
খুঁজি কাঙ্ক্ষিত মাস্তুল
সূর্যের সাথে সাথে আমার বাসনাপুঞ্জ পূবে উদয় হয়
পশ্চিমে যায় অস্ত!
তোমার চোখে যখন সন্ধ্যা নামে
নখদর্পনে যতই থাকুক ছায়াপথ গ্রহ নক্ষত্র
আমারই মতো তোমাকেও মনে হয় কাতর গৃহস্থ!