আবু তাহের সরফরাজের চারটি ছড়া

প্রকাশিত : জুলাই ০৯, ২০২০

এক.
ঊ কার দিয়ে বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ রয়েছে, সে শব্দগুলো নিয়ে এই ছড়া

পূজনীয় পূজারির পূবদিকে ঘর
পূজা দিয়ে পূরবীর দেহ নড়বড়।
পূত হলো মন তার সাধ পূরণীয়
গূঢ়কথা চূড়ামণি খায় চূষণীয়।
চূড়া ছেড়ে চূতলতা ওঠে ওই আকাশে
সূচনায় সূচি নেই সূচকেই ফাঁকা সে।
যূথচারী মূষিকের মূলধন ভূমি
ভূমিকায় ভূষণের নাম লেখো তুমি।
ভূভারত খুঁজে আনো ভূগোলের বইটা
মূলনীতি মূল নয়, ভূত যেন ওইটা।
নূরানির নূর পেলে হাসে মূঢ়লোক
শূলে চড়ে খেতে চায় জল দুই ঢোক।

দুই.
ঋ কার দিয়ে বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ রয়েছে, সে শব্দগুলো নিয়ে এই ছড়া

কৃতিমান কৃমি ঘেঁটে বের করে মাছি
অপহৃত কৃষি নিয়ে বেঁচে তবু আছি।
গৃহিণীর গৃহদাহে কৃষকের গৃহ
আবৃত তৃণ দিয়ে জানলো না কেহ।
তৃণভোজী বৃটিশের কৃশকায় মেম
মৃতদের পৃথিবীতে হৃদয়ের হেম।
বৃথা হয় নৃপতির মৃগনাভি খোঁজা
সৃজনের বৃক্ষ কৃপণের বোঝা।
কৃতদার গৃহী তাই হৃদি গেল ভেসে
দৃঢ়চেতা তাই দেখে ফেললেন হেসে।

তিন.
ঈ কার দিয়ে বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ রয়েছে, সে শব্দগুলো নিয়ে এই ছড়া

চীনে গীতি গাও দেখি চিৎকার কোরে
বীণা হাতে শীগগির ছুটে আসো ভোরে।
নীপবনে ছায়াবীথি নীলিমার নীল
নীরবতা বলে কথা ছড়া দিতে মিল।

পীড়াপীড়ি করে ভীতু ভীমরতি সেন
রীতিনীতি ভুলে বীর ছবি আঁকলেন।
নীহারিকা খসে পড়ে ওই নদীতীরে
দীপাবলি জ্বলে আর নেভে ধীরে ধীরে।

নীলকুঠি থেকে পীর ফিরলেন জীবিত
শীতকাল তাই তিনি রীতিমতো পীড়িত।
দীনহীন দীননাথ লেখে তার জীবনী
জীবলোকে নীতিকথা কখনো সে শোনেনি।

লীলাভূমি থেকে সীতারাম পেল দীক্ষা
লীলাময় লীলাবতী দিল তাকে ভিক্ষা।
নীড় ছেড়ে হীরামন পাখি এলো উড়ে
ভয়ভীতি ছেড়ে গান গায় সুরে সুরে।

নিপীড়ক ভীরু নয় ক্ষণজীবী জীবনে
দীপশিখা হাতে নিয়ে গান গায় কী মনে!
জীবিকার টাকা পেল কীট বেচে বাজারে
চিনামাটি খুঁড়ে বীজ পুতে দিল হাজারে।

হীন হয়ে এতদিন বেঁচে ছিল দীপিকা
এইবার পেল তার সীমানায় জীবিকা।
জীবাণুর টীকা দিতে নেই তার দীনতা
সীমিত সে আয়োজন, তবু নেই হীনতা।

গীতা হাতে সীতা এসে করে অনুরোধ,
পীড়া হলে লীন হয়ে পড়ে নিও বোধ।

চার.
কু শব্দটি দিয়ে বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ রয়েছে, সে শব্দগুলো নিয়ে এই ছড়া

কুঁইকুঁই কাঁদে দুই কুকুরের ছানা
কুঁতকুঁতে চোখ মুদে খেয়ে চায় খানা।
কুমকুম নিজঝুম হেসে কুটিকুটি
কুঁচোকাঁচা খুলে খাঁচা পাখি ছাড়ে দুটি।

কুলাচার চুল তার কুচকুচে কালো
কুঠিয়াল ধরে হাল রাত হলে আলো।
কুটকুটে খায় খুঁটে কুচি কুচি কুলফি
কুরকুরে কিছু দূরে নাড়ে তার জুলফি।

কুঁজঅলা খায় কলা কুলকুচো কোরে
কুঁড়েঘর নড়বড় ভাঙে খুব ভোরে।
কুইনিন যায় চীন কুলমান ছেড়ে
কুপোকাত নাকে খত দিয়ে বলে, কে রে?

কুৎসিত খুব শীত পারে না তো সইতে
কুমুদিনী তাই চিনি ওকে দেন বইতে।
কুদরত খুব সৎ কুবিচার করে না
কুঁজিকাঠি হাঁটাহাঁটি তবু কেন করে না?

কুটকুট খুট খুট কুটনির কুটিরে
কুচফল খেয়ে জল কুপি হাতে ছুটিরে।
কুশীলব কুলি সব কোঁকড়ানো চুল
কুঁচকানো দুই কানও তুলে আনো ফুল।