আবু তাহের সরফরাজের প্রবন্ধ ‘থার্মোমিটারের কথা’

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৬, ২০২৩

যে যন্ত্র দিয়ে নির্ভুলভাবে তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায় সেই যন্ত্রকে থার্মোমিটার বলে। তাপ পরিমাপের একক থার্ম ও দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক মিটার শব্দদুটি একসাথে মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে থার্মোমিটার শব্দটি। দুটি বস্তু তৃতীয় কোনো বস্তুর সাথে যদি তাপীয় সমতায় থাকে তাহলে প্রথম বস্তু দুটি একটি আরেকটির সাথে তাপীয় সমতায় থাকবে। তাপীয় সমতার এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে থার্মোমিটার যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়। এক্ষেত্রে তৃতীয় বস্তুটি থার্মোমিটারের ভূমিকা পালন করে। থার্মোমিটার তৈরি করতে এমন পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে যে পদার্থের বিশেষ কোনো ধর্ম পরিবর্তিত হয়। কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের ভৌত গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার থার্মোমিটার তৈরি করা হয়। যেমন: তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে তরল পদার্থের আয়তনের পরিবর্তন হয়। তরলের এই ভৌতধর্মকে কাজে লাগিয়ে পারদ থার্মোমিটার ও অ্যালকোহল থার্মোমিটার তৈরি করা হয়েছে। স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন গ্যাসের তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়। আবার, স্থির আয়তনে গ্যাসের চাপ গ্যাসের তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়। গ্যাসের এই ধর্মের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে গ্যাস থার্মোমিটার। একইভাবে, বৈদ্যুতিক রোধ থার্মোমিটারে প্লাটিনামের বৈদ্যুতিক রোধের তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে প্লাটিনাম রোধ থার্মোমিটার।     

থার্মোমিটার স্কেল
তাপমাত্রা পরিমাপ করতে থার্মোমিটারের নলে দাগ কাটা স্কেল থাকে। এই স্কেলকে থার্মোমিটার স্কেল বলে। স্কেল আঁকার জন্য দুটি বিশেষ তাপমাত্রাকে নির্দিষ্ট করা হয়। এ দুটি বিশেষ তাপমাত্রাকে থার্মোমিটারের স্থিরাঙ্ক বলে। সমুদ্র পৃষ্ঠে ৪৫০ অক্ষাংশে ২৭৩.১৫ কেলভিন কিংবা ০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাড়াভাবে অবস্থিত ৭৬ সেন্টিমিটার উচ্চতার শুষ্ক ও বিশুদ্ধ পারদ স্তম্ভ যে চাপ প্রয়োগ করে, সেই চাপকে প্রমাণ বা আদর্শ চাপ বলে। থার্মোমিটারে স্কেল আঁকতে প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ জলের নিম্ন স্থিরাঙ্ক ও ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক নির্ধারণ করে নিতে হয়। এরপর থার্মোমিটার দিয়ে যে কোনো বস্তুর তাপমাত্রার পাঠ নেয়া যায়।

নিম্ন স্থিরাঙ্ক
প্রমাণ চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ গলতে শুরু করে অথবা বিশুদ্ধ জল জমতে শুরু করে, সেই তাপমাত্রাকে নিম্ন স্থিরাঙ্ক বা হিমাঙ্ক বলে। প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ বরফের মধ্যে থার্মোমিটারের বাল্বটিকে ডুবিয়ে রাখলে ঠাণ্ডায় বাল্বের পারদের আয়তন কমে যায়। ফলে পারদ নলের নিচের দিকে নেমে এসে এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে। এই জায়গায় একটি দাগ দেয়া হয়। এই দাগই নিম্ন স্থিরাঙ্ক।

ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক
প্রমাণ চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ জল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে, সেই তাপমাত্রাকে ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বলে। থার্মোমিটারের বাল্বকে প্রমাণ চাপে ফুটন্ত জলের ওপর রাখলে বাল্বের মধ্যে পারদের আয়তন বেড়ে যায়। ফলে পারদ নলের ওপরের দিকে উঠে গিয়ে এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে। এই জায়গায় একটি দাগ দেয়া হয়। এই দাগই ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক।

বিভিন্ন স্কেলের থার্মোমিটার
থার্মোমিটারের নিম্ন ও ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্কের মধ্যবর্তী তাপমাত্রার ব্যবসাধানকে মৌলিক অন্তর বা মৌলিক ব্যবধান বলে। মৌলিক ব্যবধানকে কয়েকটি সমান ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন তাপমাত্রার স্কেল তৈরি করা হয়। প্রত্যেক ভাগকে ডিগ্রি বলে। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক বিজ্ঞানী গ্যালেন প্রথম থার্মোমিটার তৈরি করতে চেষ্টা করেছিলেন। তাপ কী, কেন তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে, এসব বিষয়ে সেসময় কারো ধারণা ছিল না। আর তাই স্পর্শের মাধ্যমে সেই সময় তাপমাত্রা পরিমাপ করা হতো।

থার্মোস্কোপ
১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে ইতালির বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি পরীক্ষা করে দেখলেন, তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুর আয়তন বেড়ে যায়। বায়ুর এই ধর্ম কাজে লাগিয়ে তিনি তৈরি করলেন বায়ুভর্তি থার্মোস্কোপ। বায়ুর তাপমাত্রা বাড়ছে নাকি কমছে, এই যন্ত্র দিয়ে সেটা পর্যবেক্ষণ করা যায়। কিন্তু তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায় না। কেননা, তখনো তাপমাত্রা পরিমাপের একক নির্ধারিত হয়নি। ইতালির আরেক বিজ্ঞানী সান্তোরিও ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে থার্মোস্কোপের সঙ্গে একটি আনুপাতিক স্কেল যুক্ত করে মানব দেহের তাপমাত্রা পরিমাপের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

অ্যালকোহল থার্মোমিটার
তাপ দিলে অ্যালকোহলের আয়তন বেড়ে যায়। অ্যালকোহলের এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ১৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে ইতালির তাসকানির গ্রান্ড ডিউক দ্বিতীয় ফার্দিনান্দ প্রথম আধুনিক থার্মোমিটার তৈরি করেন। একটি কাচনলের মধ্যে অ্যালকোহল রেখে তিনি সেটায় তাপ দেন। যত তাপ দেন, অ্যালকোহলের আয়তন ততই বাড়তে থাকে। কতটুকু তাপ পেয়ে অ্যালকোহলের আয়তন কতটুকু বাড়ল, তা নির্ণয় করতে গিয়ে তিনি কাচনলে ৫০টি সমান দাগ দেন। প্রত্যেকটি দাগকে তিনি তাপমাত্রা পরিমাপের একক ধরেন। এই এককের নাম দেন ডিগ্রি। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার সাথে ডিগ্রির মিল না থাকায় ফার্দিনান্দের থার্মোমিটারে তাপমাত্রার পরিমাপ করা হতো অনুমানের ওপর নির্ভর করে।

শূন্য ডিগ্রির প্রচলন
১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট হুক থার্মোমিটারে শূন্য ডিগ্রির প্রচলন শুরু করেন। যে তাপমাত্রায় জল জমতে শুরু করে সেই তাপমাত্রাকে শূন্য ডিগ্রি ধরে নিয়ে তিনি অ্যালকোহল থার্মোমিটার তৈরি করেন। ০০ তাপমাত্রায় অ্যালকোহলের আয়তনকে তিনি সমান ৫০০ ভাগে ভাগ করেন। এরপর ০ ডিগ্রি থেকে ৫০০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা চালু করেন। কী পরিমাণ তাপমাত্রায় ১ ডিগ্রি হবে, তখনো সেই পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি।

রোমার স্কেল
ডেনমার্কের গণিতবিদ ওলে রোমার তাপমাত্রা পরিমাপের প্রথম স্কেল চালু করেন। এই স্কেল রোমার স্কেল নামে পরিচিতি লাভ করে। রোমার স্কেলে বরফের গলনাঙ্ক বা নিম্ন স্থিরাঙ্ককে ৭.৫ ডিগ্রি এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক বা ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ককে ৬০ ডিগ্রি ধরা হয়।

নিউটনের থার্মোমিটার স্কেল
১৭০১ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক ও কার্যকর থার্মোমিটার তৈরি করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। কাচের সরু নলের ভেতর একটু তিসির তেল ঢুকিয়ে নলের বাকি অংশ থেকে বায়ু করে নলের দুই প্রান্ত তিনি বন্ধ করে দেন। এরপর তৈরি করেন থার্মোমিটার স্কেল। এই স্কেলে বরফের গলনাঙ্ক বা নিম্ন স্থিরাঙ্ককে ০ ডিগ্রি এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক বা ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ককে ৩৩ ডিগ্রি ধরে মৌলিক ব্যবধানকে তিনি কয়েকটি সমান ভাগে ভাগ করেন।

ফারেনহাইট স্কেল ও পারদ থার্মোমিটার
১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল গাব্রিয়েল ফারেনহাইট রোমার স্কেলকে পরিবর্তন করে নতুন একটি স্কেল চালু করেন। এই স্কেল ফারেনহাইট স্কেল নামে পরিচিত। এই স্কেলে বরফের গলনাঙ্ক বা নিম্ন স্থিরাঙ্ককে ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক বা ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ককে (প্রমাণ চাপে) ২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট ধরে মাঝের অংশকে সমান ১৮০ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক ভাগকে ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বলা হয়। রোমার স্কেলের ১ ডিগ্রিকে প্রায় ৪ ভাগ করে ফারেনহাইট স্কেলের ১ ডিগ্রি ধরা হয়। ফারেনহাইট প্রথম থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহার করেন। থার্মোমিটারে অন্যান্য তরল পদার্থ ব্যবহারের চেয়ে পারদ ব্যবহার করা সহজ। কেন সহজ, সে বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. পারদ অস্বচ্ছ ও চকচকে বলে কাচের ভেতর দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায়। ফলে তাপমাত্রার পাঠ নিতে সুবিধে হয়।

২. জল বা অন্যান্য তরল পদার্থের মতো পারদ কাচের দেয়ালের সঙ্গে আটকে থাকে না। ফলে নলের মধ্যে সহজে ওঠা-নামা করতে পারে।

৩. বিশুদ্ধ পারদ সহজেই পাওয়া যায়।

৪. স্বাভাবিক কক্ষ তাপমাত্রায় পারদ তরল অবস্থায় থাকে। পারদের হিমাঙ্ক –৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও স্ফুটনাঙ্ক ৩৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মাঝমাঝি যেকোনো তাপমাত্রা পারদ থার্মোমিটার দিয়ে সহজেই পরিমাপ করা যায়।

৫. অন্যান্য তরল পদার্থের চেয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার অন্তরে পারদের প্রসারণ বেশি হয়। ফলে পারদ থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যায়।

৬. পারদের তাপধারণ ক্ষমতা খুবই কম। এজন্য একটি পারদ থার্মোমিটার কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এলে সেটা ওই বস্তুর খুবই সামান্য তাপ শোষণ করেই পারদের প্রসারণ ঘটে। এতে ওই বস্তুর তাপমাত্রার তেমন পরিবর্তন হয় না। ফলে পারদ থার্মোমিটার বস্তুর সঠিক তাপমাত্রা নির্দেশ করে।

৭. তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে পারদের প্রসারণ একই মাত্রায় থাকে।

৮. অন্যান্য তরল পদার্থের চেয়ে পারদ অনুদ্বায়ী। তাই থার্মোমিটারের শূন্যস্থানে খুবই সামান্য পারদ বাষ্প থাকে। এই বাষ্প পারদের ওঠা-নামায় বিঘ্ন ঘটায় না। যেসব তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বেশি, সাধারণ তাপমাত্রায় খুব ধীরে বাষ্পীভূত হয়, সেসব তরলকে অনুদ্বায়ী তরল পদার্থ বলে। যেমন: পারদ, তেল ও গিøসারিন। এরই বিপরীতে যেসব তরল পদার্থের স্ফুটানাঙ্ক কম, সাধারণ তাপমাত্রায় খুব তাড়াতড়ি মাত্রায় বাষ্পীভূত হয়, সেসব তরলকে উদ্বায়ী তরল পদার্থ বলে। যেমন: পেট্রল ও কেরোসিন।

৯. পারদ তাপের সুপরিবাহী। তাই পারদ সহজেই যেকোনো বস্তুর তাপ গ্রহণ করে তার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দিতে পারে।

পারদ থার্মোমিটারের গঠন
সব জায়গায় সমান ব্যাসের সূ² ছিদ্রবিশিষ্ট সরু কাচের শক্ত একটি নল থার্মোমিটার। নলটি সূক্ষ্ম ছিদ্রবিশিষ্ট হলেও নলের দেয়াল খুবই পুরু থাকে। নলের একপ্রান্ত বন্ধ থাকে। এই প্রান্তে ছোট একটি গর্ত থাকে। আরেক প্রান্তে একটি পাতলা চোঙাকৃতি কাচের বাল্ব থাকে। বাল্ব ও নলের কিছু অংশ পারদে ভর্তি থাকে। নলের বাকি অংশে থাকে সামান্য পারদ-বাষ্প। তাপমাত্রা পরিমাপ করতে কাচনলের গায়ে তাপমাত্রার স্কেল আঁকা থাকে। যে বস্তুর তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে সেই বস্তুর সংস্পর্শে থার্মোমিটারের বাল্বটিকে রাখা হয়। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে পারদ ফুলে উঠবে। নলের ভেতর বেশি জায়গার দরকার হবে বলে পারদ নলের ছিদ্র বেয়ে ওপর দিকে উঠতে থাকবে। তাপমাত্রা যত বাড়বে পারদ তত বেশি ওপরদিকে উঠতে থাকবে। পারদের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে পারদের ঘনত্ব কমে আয়তন বেড়ে যেতে থাকে। এরপর নল বরাবর যে দাগ পর্যন্ত পারদ ওঠে ওই দাগই হচ্ছে ওই বস্তুর তাপমাত্রার পরিমাপ।

সেলসিয়াস স্কেল
একটা সময়ে এসে ফারেনহাইট স্কেলের ত্রুটি ধরা পড়ল। বরফের গলনাঙ্ককে ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক ২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট কেন হবে, তার কোনো যুক্তি পাওয়া গেল না। আর তাই ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দে সুইডেনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস নতুন একটি স্কেল উদ্ভাবন করলেন। তার স্কেলের নাম সেলসিয়াস স্কেল। এই স্কেলে বরফের গলনাঙ্ক বা নিম্ন স্থিরাঙ্ককে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক বা ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ককে (প্রমাণ চাপে) ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরে মাঝের অংশকে সমান ১০০ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক ভাগকে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলা হয়।

কেলভিন স্কেল
স্কটল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী উইলিয়াম থমসন লর্ড কেলভিন ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে পরম শূন্য তাপমাত্রার ধারণা দেন। গবেষণাগারে পরীক্ষা করে তিনি দেখেন, –২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পদার্থের অণুগুলোর গতি একেবারেই থেমে যায়। এ কারণে পদার্থের চাপও শূন্য হয়ে যায়। এই তাপমাত্রাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা ধরে নিয়ে কেলভিন তাপমাত্রা পরিমাপের নতুন একটি স্কেল চালু করলেন। এই স্কেলের নাম কেলভিন স্কেল। পরম শূন্য তাপমাত্রাকে ০ ডিগ্রি কেলভিন ধরা হয়। এই তাপমাত্রার নিচে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, ০ ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রায় পদার্থের তাপ, চাপ ও পারমাণবিক গতি সবকিছুই শূন্য হয়ে যায়। কেলভিন স্কেলে বরফের গলনাঙ্ক বা নিম্ন স্থিরাঙ্কতে ২৭৩ কেলভিন এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক বা ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ককে (প্রমাণ চাপে) ৩৭৩ কেলভিন ধরে মাঝের দূরত্বকে সমান ১০০ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক ভাগকে ১ কেলভিন বলা হয়।

সেলসিয়াস স্কেল ও ফারেনহাইট স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক
সেলসিয়াস স্কেলের ১০০ ঘর = ফারেনহাইট স্কেলের ১৮০ ঘর
১০০ সেলসিয়াস ডিগ্রি = ১৮০ ফারেনহাইট ডিগ্রি
অতএব, ১ সেলসিয়াস ডিগ্রি = ১৮০১০০ = ৯৫ ফারেনহাইট ডিগ্রি
এবং ১ ফারেনহাইট ডিগ্রি = ১০০১৮০ = ৫৯ সেলসিয়াস ডিগ্রি

ভালো থার্মোমিটারের গুণ
যে থার্মোমিটারে নিচের গুণগুলো রয়েছে সেই থার্মোমিটারকে ভালো থার্মোমিটার বলা হয়।
১. বাল্বের কাচ খুব পাতলা হলে থার্মোমিটার দ্রুত কার্যকর হবে।
২. থার্মোমিটারের বাল্বের আকার ছোট হতে হবে। ছোট হলে বাল্বের পারদ দ্রুত অন্য বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করে ওই বস্তুর তাপমাত্রা লাভ করবে।
৩. নলের ব্যাসের প্রস্থচ্ছেদ সব জায়গায় সমান হতে হবে। তা না-হলে সরু জায়গায় পারদটি বেশি উঠে যাবে এবং মোটা জায়গায় কম উঠবে। ফলে তাপমাত্রা পরিমাপের স্কেল তৈরি করা কষ্টকর হবে।
৪. নলটি যত সরু ও দীর্ঘ হবে থার্মোমিটার তত বেশি সুবেদী হবে।

ডাক্তারি থার্মোমিটার
মানব দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে বিশেষভাবে তৈরি থার্মোমিটারকে ক্লিনিক্যাল বা ডাক্তারি থার্মোমিটার বলে। সুস্থ অবস্থায় মানুষের দেহের সাধারণ তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জীবিত মানুষের দেহের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম কিংবা ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হতে পারে না। তাই ডাক্তারি থার্মোমিটারের ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে। এই থার্মোমিটারের বাল্বের দেয়াল খুবই পাতলা হয়। সমান প্রস্থচ্ছেদবিশিষ্ট ও সূক্ষ্ম হয়। বাল্ব ও নলের ছিদ্রের মাঝে বাঁকানো একটি ছিদ্রপথ থাকে। এই অংশটি সন্ধিস্থল হিসেবে কাজ করে। থার্মোমিটারের সরু নল সন্ধিস্তলের কাছে আরও সরু হয়ে থাকে। দেহের তাপমাত্রা পরিমাপের সময় থার্মোমিটারের বাল্বকে জিভ কিংবা বগলের নিচে মিনিট দুয়েক রাখতে হয়। এর ফলে বাল্বের পারদ দেহের তাপমাত্রা লাভ করে। দেহের তাপমাত্রা অনুযায়ী বাল্বের পারদ আয়তনে বেড়ে সন্ধিস্থলের ভেতর দিয়ে সহজে চলে যায় এবং নলের ছিদ্রের ভেতর এগিয়ে যায়। কিন্তু ঠাণ্ডায় বাল্বের পারদ যখন সংকুচিত হয়ে হয় তখন নলের ছিদ্র দিয়ে যে পারদ চলে আসে তা আর সন্ধিস্থলের ভেতর দিয়ে বাল্বের মধ্যে ফিরে যেতে পারে না। ফলে পারদ থার্মোমিটারের ওপরের অংশেই থেকে যায়। এজন্য শরীরের তাপমাত্রা নেয়ার পর থার্মোমিটারকে বাইরে নিয়ে এলেও পারদ নিচে নেমে আসে না। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ চিকিৎসক টমাস ক্লিফোর্ড ডাক্তারি থার্মোমিটার উদ্ভাবন করেন।

গ্যাস থার্মোমিটার
তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে গ্যাসের চাপ ও আয়তন পরিবর্তন হয়। গ্যাসের এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে যে থার্মোমিটার তৈরি করা হয় সেই থার্মোমিটারকে গ্যাস থার্মোমিটার বলে। গ্যাস থার্মোমিটার দুই প্রকার। স্থির আয়তন গ্যাস চাপ থার্মোমিটার ও স্থির চাপ গ্যাস আয়তন থার্মোমিটার।

স্থির আয়তন গ্যাস চাপ থার্মোমিটার
স্থির আয়তন গ্যাস চাপ থার্মোমিটারে গ্যাসের আয়তন স্থির রাখা হয়। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে গ্যাসের চাপ পরিবর্তন হয় বলে গ্যাসের চাপ পরিমাপ করে এই থার্মোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়।

স্থির আয়তন গ্যাস চাপ থার্মোমিটারের গঠন
১ মিটার লম্বা ও ৩.৬ সেন্টিমিটার ব্যাসের ১ লিটার আয়তনের একটি বাল্ব থাকে। বাল্বটি শুষ্ক ও বিশুদ্ধ হাইড্রোজেনে ভর্তি থাকে। একটি কৈশিক (সরু ও সূক্ষ্ম ছিদ্রবিশিষ্ট) নলের সাহায্যে বাল্বটির সাথে বিশেষ ধরনের একটি ম্যানোমিটার যুক্ত করা হয়। ম্যানোমিটারের বাহুর পারদ স্তম্ভের ওপর নলের সাথে আটকানো একটি সূচকের থাকে। একটি রবাল নলের সাহায্যে ম্যানোমিটারের সাথে যুক্ত করা হয়। ম্যানোমিটারের অপর বাহুর ভেতর একটি ব্যারোমিটার থাকে।

ডিজিটাল থার্মোমিটার
তাপমাত্রা পরিমাপ করতে বর্তমানে পারদ থার্মোমিটারের পরিবর্তে ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহৃত হচ্ছে। ডিজিটাল থার্মোমিটারে কোনো পারদ থাকে না। ডিজিটাল থার্মোমিটার কাজ করে সুবেদী গ্রাহক যন্ত্রের সাহায্যে। বেশিরভাগ ডিজিটাল থার্মোমিটারের মূলনীতি হলো, বৈদ্যুতিক রোধ পরিমাপ। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে পদার্থের প্রতিরোধকের পরিবর্তন ঘটে। ডিজিটাল থার্মোমিটারে প্রতিরোধকের পরিবর্তনে বিদ্যুৎ প্রবাহের যে পরিবর্তন ঘটে, সেই পরিবর্তনের হিসাব করে তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়। কোনো ধাবত পদার্থের ভেতর দিয়ে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় সেই পরিমাণ সেই পরিমাণ বিদ্যুতের সঙ্গে এই রোধের সম্পর্ক রয়েছে। ধাতব পদার্থ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ওই পদার্থের অণুগুলোর কম্পন বাড়তে থাকে। আর তখন সহজে ওই পদার্থের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে না। মানে, ওই পদার্থে তখন বৈদ্যুতিক রোধ বাড়ে। এই রোধ পরিমাপ করতে বিশেষ ধরনের চিপ বসানো থাকে ডিজিটাল থার্মোমিটারে। রোধ কী পরিমাণ বাড়ল বা কমলো, সেই পরিমাণ অনুযায়ী পরিমাপ করা হয় দেহের তাপমাত্রা। ডিজিটাল থার্মোমিটারের পর্দায় সংখ্যায় তাপমাত্রার সেই পরিমাপ দেখা যায়। ডিজিটাল থার্মোমিটারের সামনের অংশে থাকে ধাতব পদার্থ, যে পদার্থ মানবদেহে কিংবা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে নেয়া হয়। তখন এই থাতব অংশ এর সংস্পর্শে থাকা ত্বক কিংবা বস্তুর পৃষ্ঠের তাপমাত্রার সমান হয়ে ওঠে। থার্মোমিটারের ব্যাটারি থেকে আসা বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ প্রবাহিত হয় থার্মোমিটারের ভেতর থাকা ইলেকট্রোডের মধ্য দিয়ে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোষে যে বিদ্যুত তৈরি হয় সেই বিদ্যুৎ যে পরিবাহীর মাধ্যমে কোষের বাইরে আসে সেই পরিবাহীকে ইলেকট্রোড বলে। থার্মোমিটারের ব্যাটারি থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারবে সেই পরিমাণ নির্ভর করে থার্মোমিটারের ধাতব অংশের সংস্পর্শে থাকা বস্তুর তাপমাত্রার ওপর। আর তখনই বৈদ্যুতিক রোধের মাত্রা অনুযায়ী তাপমাত্রার পরিমাপ ভেসে ওঠে থার্মোমিটারের পর্দায়।

অবলোহিত থার্মোমিটার
সূর্যের শাদা আলো প্রিজমের একটি প্রতিসারক তলে আপতিত হলে শাদা আলোর ভেতর থাকা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের সাতটি আলোকরশ্মি বিভিন্ন কোণে বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়। এই সাতটি বর্ণরশ্মিকে বর্ণালি বলে। বর্ণালির সাতটি বর্ণ হচ্ছে: লাল, নীল, বেগুনি, কমলা, সবুজ, হলুদ ও আকাশি। এটা থেকে বোঝা যায়, শাদা আলো আসলে সাতটি আলোর মিশ্রণ। বিভিন্ন বর্ণের রশ্মিগুলো প্রিজমের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন পরিমাণে প্রতিসৃত হয়। এ কারণে শাদা আলো প্রিজমের ভূমির দিক থেকে সাতটি বর্ণে বিভক্ত হয়ে বর্ণালি তৈরি করে। বর্ণালির সবথেকে ওপরে থাকে লাল বর্ণের আলো, আর সবার নিচে থাকে বেগুনি বর্ণের আলো। লাল বর্ণের আলোর কম্পাঙ্ক সবচেয়ে কম, আর বেগুনি বর্ণের আলোর কম্পাঙ্ক সবচেয়ে বেশি। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল একটি প্রিজমের মাধ্যমে সূর্যের আলোকে বিভিন্ন বর্ণের আলোয় বিভক্ত করেন। এরপর বিভিন্ন আলোয় থার্মোমিটার রেখে তিনি পরীক্ষা করেন, কোন বর্ণের আলো থার্মোমিটারকে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত করে। অবাক হয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন, বর্ণালিতে লাল আলোর পরের অন্ধকার যে এলাকা, সেখানেও তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটছে। এর মানে, সেখানে এমন কোনো আলো আছে যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। বেগুনি বর্ণের আলোর কম্পাঙ্ক ধীরে ধীরে কমে সবচেয়ে কম কম্পাঙ্কের লাল বর্ণে রূপ নেয়। কম্পাঙ্কের এই পরিবর্তনই আমাদের চোখে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের আলো হিসেবে ধরা পড়ে। হার্শেলের চিহ্নিত সেই আলোর কম্পাঙ্ক লালের চেয়েও কম। তাই এই আলোর নাম অবলোহিত। অব মানে নিচের দিকে গতি, আর লোহিত মানে লাল বর্ণ। তাহলে অবলোহিত মানে দাঁড়াচ্ছে, লালবর্ণের চেয়েও কম কম্পাঙ্কের আলোক বর্ণ। অবলোহিত আলোক তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ৩ জেট্টা হার্জ থেকে ৪০০ টেরা হার্জ, আর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৩০ সেন্টিমিটার থেকে ৭৪০ ন্যানোমিটার। তরঙ্গের ক্ষেত্রে কম্পাঙ্ক কমার মানে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া। দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে অবলোহিত আলোয় খুব বেশি শক্তি থাকে না। ফলে আমাদের চোখের রেটিনা অবলোহিত আলো শনাক্ত করতে পারে না। অবলোহিত আলো খালি চোখে দেখা না গেলেও এই আলোর তাপ আমরা অনুভব করতে পারি।

তাপ ও আলোর সম্পর্ক
যেকোনো উত্তপ্ত বস্তুই আলো বিকিরণ করে। মানবদেহ থেকেও আলোক তরঙ্গ নির্গত হয়। কোনো আলোর কম্পাঙ্ক বা তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোর সীমার বাইরে হলে ওই আলো আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। কোনো বস্তু থেকে কী পরিমাণ আলো নির্গত হবে সেই পরিমাণ নির্ভর করে ওই বস্তুর তাপমাত্রার ওপর। তাপমাত্রা যত বাড়ে তরঙ্গদৈর্ঘ্য তত কমে। সূর্যের তাপমাত্রা ৫,৭৭৮ কেলভিন বা ৯,৯৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে সূর্যের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ০.৪ থেকে ০.৭ মাইক্রন। মানবদেহ থেকে নির্গত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০ মাইক্রন। পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ— এই তিন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়। অবলোহিত রশ্মি বিকিরণের ক্ষেত্রে তাপ সঞ্চালনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কোনো বস্তুর তাপমাত্রা –২৭৩০ সেলসিয়াসের বেশি হলেই সেই বস্তু থেকে অবলোহিত রশ্মি আকারে তাপ নির্গত হয়। সাধারণত বৈদ্যুতিক যে বাতি আমরা ব্যবহার করি সেই বাতিতে তাপশক্তি ১০ ভাগের মতো আলোয় রূপান্তরিত হয়, বাকি ৯০ ভাগ অবলোহিত রশ্মির রূপ নিয়ে তাপ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এর মানে, দৃশ্যমান আলো রূপে খুবই কম তাপ নির্গত হয়। বেশিরভাগ তাপ নির্গত হয় অবলোহিত রশ্মি রূপে। খালি চোখে দেখা না গেলেও অন্ধকারে ছবি তোলা ও টেলিভিশনের মতো যন্ত্রপাতির রিমোট কন্ট্রোলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা অবলোহিত আলো ব্যবহার করে চলেছি।

অবলোহিত রশ্মি ব্যবহার করে কাজ করে অবলোহিত থার্মোমিটার। যে বস্তুর তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে সেই বস্তুর তাপীয় বিকিরণের একটি অংশের তাপমাত্রা অনুভব করে ওই বস্তুর তাপমাত্রা পরিমাপ করে অবলোহিত থার্মোমিটার। সঠিক তাপমাত্রা পেতে এই থার্মোমিটারে লেজার ব্যবহার করা হয়। বস্তুর তাপীয় বিকিরণকে একটি সুবেদী গ্রাহক যন্ত্রে একীভূত করতে লেন্স থাকে। এই লেন্স বিকিরিত তাপশক্তিকে একটি বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত করে। এরপর চারপাশের তাপমাত্রার বিকিরণকে এই হিসাব থেকে বাদ দেয়ার পরে ওই সংকেতকে তাপমাত্রার এককে পরিবর্তিত করে দেখানো হয়। অবলোহিত থার্মোমিটারের সুবিধে হচ্ছে, বস্তুর সংস্পর্শে না এনেও এই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়। পারদ থার্মোমিটারে তাপমাত্রা পরিমাপ করতে মিনিটখানেক সময় লাগে। কিন্তু অবলোহিত থার্মোমিটার দিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়। এই থার্মোমিটার দিয়ে মানব দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তনও শনাক্ত করা যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, খুব তাড়াতাড়ি এমন থার্মোমিটার উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে যে থার্মোমিটার দিয়ে মানব দেহের কোষের সামান্যতম পরিবর্তনও পর্যবেক্ষণ করা যাবে তাপমাত্রার পরিবর্তন পরিমাপ করে।