
আবুল মনসুর আহমদ: প্রিয় পূর্বসুরী
পর্ব ২
মারুফ ইসলামপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
নজরুল প্রদত্ত এই সনদকে অবিশ্বাস্য মনে হলে বারবার ফিরে যেতে হবে আবুল মনসুর আহমদের রঙ্গ-ব্যঙ্গ রচনাগুলোর কাছে। অন্তরদৃষ্টি উন্মীলন করে পাঠ করতে হবে আয়না ও ফুড কনফারেন্স বই দুখানি। তাহলেই উপলব্ধি করা যাবে ভাষার কান মলে কী সুর তিনি সৃষ্টি করেছেন। আয়না গল্পগ্রন্থে রয়েছে মোটে সাতটি গল্প। গল্পগুলো হচ্ছে: হুজুর কেবলা, গো দেওতা কা দেশ, নায়েবে নবী, লিডারে কওম, মুজাহেদীন, বিদ্রোহী সংঘ ও ধর্মরাজ্য। প্রতিটি গল্পেই ধরা আছে সমাজবাস্তবতা। পাঠককে কখনো হাসিয়ে কখনো চাবুকপেটা করে দেখিয়েছেন সমাজের নানা অসংগতি।
প্রসঙ্গত আলোচনা করা যেতে পারে হুজুর কেবলা গল্পের সারসংক্ষেপ। গল্পটি অতিবিখ্যাত। বিশ্বসাহিত্যের অংশ হওয়ার দাবিদার। এই গল্পে রয়েছে একজন ভণ্ডপির। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য জঘন্য ভণ্ডামির আশ্রয় নেয় সে। গ্রামের শিক্ষার আলোবঞ্চিত অসহায় সহজ-সরল মানুষগুলোকে বোকা বানিয়ে সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের খাস মহলে পৌঁছে যায়। গল্পের ঘটনা এমন: এই ভণ্ডপির তারই এক বিশ্বস্ত মুরিদের যুবতী স্ত্রীর রূপে আকৃষ্ট হয়ে তাকে কাছে পাবার লালসায় বহুবিধ ফন্দি আঁটতে থাকে। ছলনার আশ্রয় নিয়ে মুরিদ ও তার স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করে। এবং একসময় সম্পর্ক ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। অতঃপর ভণ্ডপির ওই সুন্দরী যুবতী নারীকে বিয়ে করে। অথচ ইতিপূর্বে এই ভণ্ডের আরো তিন-তিনটি স্ত্রী বহাল তবিয়তেই রয়েছে।
এই গল্প মোড় নেয় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এমদাদের মাধ্যমে। এমদাদ একদা পির মহাশয়ের ভণ্ডামি ধরে ফেলে। সে প্রবল উত্তেজিত হয়ে পিরকে শারীরিক আক্রমণ করে বসে। এই আক্রমণের সুযোগ কাজে লাগায় ভণ্ডপির। সে এমদাদকে পাগল আখ্যা দেয়। এভাবে লেখক আবুল মনসুর আহমদ হুজুর কেবলার চরিত্রের কলুষতা আয়নার মতো করেই পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরেন।
এই হুজুর কেবলারা এখনো আমাদের সমাজে রয়ে গেছে। নানাভাবে ভোল পাল্টে তারা তাদের কৃতকার্য এখনো সম্পাদন করে যাচ্ছে। কিন্তু সমাজে নেই কোনো আবুল মনসুর আহমদ যিনি কলমের আঁচড়ে আঁকবেন তাদের বিভৎস মুখ। তাই তো ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পরশুরাম হিন্দু দেবতাদের নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায় তা সহ্য করেছে। আবুল মনসুর আহমদের দুঃসাহসও সেদিন সমাজ সহ্য করেছিল। কিন্তু আজ কোনো সম্পাদক এমন গল্প ছাপতে সাহস করবেন কিনা এবং সমাজ তা সহ্য করবে কিনা, সে সম্পর্কে আমার সন্দেহ আছে।’ চলবে