আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজের বাস্তবতা
মৃদুল মাহবুবপ্রকাশিত : জুন ২২, ২০২০
আমাদের দেশে বাবা দিবস অতি নতুন ঘটনা। এটাকে নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করি। ভালো বা মন্দের জাজমেন্টে আমি যেতে চাই না। যার যা ইচ্ছা তা পালন করুক। দেশে যারা এগুলো পালন করে তারা বেশির ভাগই ইউরোপীয় থট, আর্ট, কালচার দিয়ে আচ্ছন্ন। তা দ্বারা আবেশিত থাকার কারণও যথেষ্ট আছে। ফলে সমগ্র দেশে বাবা দিবসের হাওয়া না থাকলেও, যারা আমার সাথে কানেক্টেড, আমি যে স্যোসালাইজেশন মেইন্টেইন করি, তাতে বাবা দিবসের আওয়াজ আমার কাছে পৌঁছানো স্বাভাবিক। এবং এই আওয়াজ পাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি, আসলেই আমাদের বাপ আছে। বাবা দিবস মাস্ট এদের জন্য। তবে পশ্চিমে যে কালচারল কনটেক্সট থেকে ফাদার’স ডে উদ্ভুত তা আমাদের বাবা মায়ের বৈধ সন্তানদের জন্য অতটা প্রযোজ্য বা জরুরি না। তবে পশ্চিমের নানা অনুকরণের একটা অনুসঙ্গ এটা। যে সমাজে বাপের ঠিক নাই, মানে সন্তান বেড়ে ওঠে সিঙ্গেল মাদারের চূড়ান্ত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে, তাদের জন্য বাবা দিবস একটা ঘটনা বটে। ফলে মেয়ের বাবা হিসাবে ফাদারস ডে শব্দটা শোনার পর বুকটা ভারি হয়ে আসে। সিঙ্গেল মাদারের সাথে বেড়ে উঠতে থাকা বাচ্চাটির কাছে বাবা আসলে একটা দিবস পালন করার মতোই ব্যাপার।
শুধু এমনই না, পশ্চিমের পারবিারিক সম্পর্কের জায়গা থেকে মা দিবস, বাবা দিবস এগুলো খুবই অর্থবহ ঘটনা তাদের জন্য। আমাদের সমাজে যেমন প্রতিদিনই বাবা দিবস, মা দিবস, তাদের তো তা নয়। যেকোনো কালচারে ফাদার ফিগারকে কীভাবে দেখা হয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইউরোপের যে নৈতিকতা তা খ্রিস্টানিটি আচ্ছন্ন। প্রায় দুই হাজার বছর আগেই দেখেন যিশু একজন ব্র্যাত লোক। বাপ ছাড়া পোলা। দেখবেন পশ্চিমা সংস্কৃতিতে সিঙ্গেল মাদার সাধারণ ঘটনা। এটা তাদের ঐহিতিহাসিক ও সামাজিক প্রয়োজনীয় বাস্তবতা অন্তত দ্বিতীয় বিশ্বযদ্ধের পর থেকে। ধর্মীয় নৈতিকতার জায়গা থেকেও একে অধিগ্রহণ করতে বাধা নাই। আমার পরিচিত বন্ধু বান্ধব এক দুজন ওই দেশি যারা আছে, তারা কেউ কেউ সিঙ্গেল মাদার। সামাজিক ভাবে তাদের সমস্যা নাই। বাচ্চারা বাপের সাথে সময় সুযোগে দেখা স্বাক্ষাতে যায়। বাবা দিবস এই দেখা স্বাক্ষাতের এক্সট্রা খাতির। কিন্তু এর একটা শূন্যতা পুরো উইরোপ বা আমেরিকার মরালিটির ভেতর রয়ে গিয়েছে। দে সিরিয়াসলি ফিল ইট নাউ এ ডেজ। ফলে দেখবেন, তারা যে অ্যানিমেটেড ফিল্ম বানায় তাতে বাপেরা খুবই কেয়ারিং, মহৎ। পরিবারের জন্য সব করবে। আইস এজ সিরিজের ফিল্ম দেখলে দেখতে পাবেন। বাবা, পরিবার এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তাদের জন্য।
জর্ডান পিটারসনের এতে ভক্ত এই কারণেই। কারণ হলো শূন্যতা। ইউরোপীয় বা আমেরিকান অনেককে দেখেছি তারা রীতিমত আমাদের পারিবারিক বন্ধনকে হিংসা করে যদি তারা এমন কিছু একটা পেতে। তাদের শুধু আমাদের এই পারস্পারিক কেয়ারিংটাকে খুব বড় করে দেখতে দেখেছি। তাদের মোরালিটিতে যে ফাদার ফিগারের শূন্যতা তা তারা ফিল আপ করতে চায়। ফাদার ফিগার যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পশ্চিমা দুনিয়ায় তার কথা প্রথম বড়সড় করে তুলছিলেন মনে হয় নিৎসে। তারপর ফ্রয়েড, ইয়ুং। বাপ না থাকা যে সমস্যা, তা নিৎসে বলেছে। একজন নিৎসে হয়ে ওঠা বাবা না থাকার কারণ। এই অঞ্চলের কালচার হিন্দু ধর্ম ও মুসলিম ধর্ম নিয়ন্ত্রিত। হিন্দু ধর্মের দেবি স্বরসতী ও দূর্গা। মাদার ফিগার প্রধান। ভক্তিতে পরিপূর্ণ। ইসলমামি কালচারে বাবা মা, পরিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। ফলে ধর্মীয়, সমাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে এই অঞ্চলে ফাদার বা মাদার ফিগারের শূন্যতা নাই বলেই চলে। তারপর ইউরোপের অনুকরণে আমরা হয়তো শূন্যতা বোধ করছি। বিষণ্ণতা, নিঃসঙ্গতা কালচারাল ফ্যাক্ট, শুধু অর্থনৈতিক বা সামাজিক বা শারীরিক ঘটনা না। ফলে ধীরে ধীরে আমরা বাবা ছাড়া সমাজে প্রবেশ করতেছি। এই ভালো, নাকি মন্দ জানি না। তবে এটা আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজের বাস্তবতা।
লেখক: কবি
























