আয়েশা মুন্নির ৫ কবিতা

প্রকাশিত : জুন ০৬, ২০২০

এক ভরা বর্ষার প্লাবিত হাসি

কবির কাছে এসে বাউণ্ডুলে মুচকি হাসল
এক ভরা বর্ষার প্লাবিত হাসি,
কিছুই বুঝতে না পেরে কবি নিজেও হাসল।

কবির চুলে গোঁজা ছিল কাঁঠালিচাঁপার ফুল;
বুকে রাখা কিংশুক ঘ্রাণ,
চোখে স্বর্গীয় দীপ্তি।

বাইরে তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টির গান...
মন্ত্রমুগ্ধ মাতাল হাওয়া,
চারদিকে বৈশাখী প্রলয়ের পূর্বাভাস।

কবির শাড়ির আঁচল নিয়ে বাউণ্ডুলের কৌতূহল ছিল...
শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে থাকা একহারা গড়নে তীক্ষ্ণ মায়া,
যেন গুরুদক্ষিণার প্রবল উচ্ছ্বাস।

কবিতা ছুঁতে যেয়ে আঙুলে ছোঁয়া...
কবি— চকিত, চমকিত
অতঃপর— অবিরত ক্যামেরার টিক শব্দ।

সেই থেকে কবির অজান্তে
হৃদয়ের অণুতে অণুতে
বাউণ্ডুলের বসবাস।

এ প্রেম শাশ্বত

হে যুবক, তোমার বর্ণিল হৃদয়ে
আমার লালপেড়ে নীল শাড়ির মায়া,
লৌকিকতার চোখে দেখা
মানবিক প্রেম নয়,
বাউণ্ডুলে, এ প্রেম শাশ্বত।

তোমাকে ভালোবাসা
এ আমার গুণাবলি নয়,
তুমিও ভালবাসতে শেখো
দেখবে পৃথিবী মুষ্টিবদ্ধ...

মুক্ত চারণভূমিতে প্রেম খুঁজো না
অন্তর বিকশিত করো ধ্যানে
সুখ ঘুরপাক খাবে নিভৃতে
নিজেকে জানো, জানবে আমাকে।

তোমার শার্টের বোতামগুলো
আমার কবিতার অন্তমিল,
তোমার পদচিহ্নের ছাপে
ঢেলে দিয়েছি সবটুকু প্রেম...

বাউণ্ডুলে, এরপরেও আমি কি প্রেমিকা নই?

দ্বৈতাশ্রয়

ভালো লাগার দৈর্ঘ্য-প্রস্থে
মধুময় স্মৃতির রেখা টেনে দিয়ে
তুমি যখন গিলে খাচ্ছিলে সংযমী হৃদপিণ্ড
তখন আমার অভুক্ত আবেগী মন
কখন যেন উদাসী হয়ে গেল।

তুমি বললে, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমায়।
আমি জানি না কতটা ভালোবাসা দিলে
ভালোবাসা কতটা ভালোবাসতে শেখায়।

কখনো ডুব সাঁতারে ডুব দাও চুপিসারে
অভিমানে আমি তোমাকে দেই আড়ি
তখনো তুমি হেসেই বলো, বাউণ্ডুলে আমি
তবে ভালোবাসি সত্যিই।

অন্য জীবনে...
বেঁচে থাকা মানে
অভ্যাসের সুখ।
তীব্র আকাঙ্ক্ষা...
চোখে মুগ্ধতা দেখা,
রূপের গুণকীর্তন শুনার।
সম্পর্কের বোঝাপড়ায়
কেবল জাগতিক প্রেম।
তবুও
কোথায় যেন সুতোর বন্ধন...
কোথায় যেন পিপাসিত টান...
ভালোবাসার জল জোছনায়
গাণিতিক সূত্রে চির অমিল।

অবশেষে,
দ্বৈতাশ্রয়ে জীবন।
জীবন কত ধূম্রময়।

মায়াবতী প্রেমিকা

তুমি জানো না প্রেমিক...
কতটা বিপ্লবী প্রেমিকা আমি
আমি সমরেশের দিপাবলী
আমি প্রীতিলতা
আমি... তোমার তুমিতেও আমি।

তোমার উপর যখন অভিমান হয়
কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে রাষ্ট্রের সংবিধানে।
তুমি যখন কাঁদাও তখন সিদ্ধান্ত নেই
শোক প্রস্তাব পাঠাবো সংসদে।
তোমার সাথে ঝগড়ার প্রতিবাদে
মিছিলে স্লোগান দেবার সিদ্ধান্ত নেই তোমার বিরুদ্ধে।

যখনই ভাবি ছেড়ে চলে যাব তোমায়
ইচ্ছে করে সকল রাজনৈতিক সভা মুলতবি ঘোষণা করি।
বিচ্ছেদের দিনগুলো চোখে ভাসতেই
সিদ্ধান্ত নেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করি দেশ।

আবার তোমার অল্প কথার গুরুত্বে
সুপ্রীম কোর্টের রুলস জারি করি,
ভালোবাসি শুনলেই
রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাই ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন।
আমি নারী, মায়াবতী প্রেমিকা তোমার...

প্রতিশ্রুতি

শত শত জোনাকির আলোয়
আঁধার পাড়ি দেব,
তোমার পদচিহ্ন চিনে, পথে পথে
 ক্লান্তিহীন হেঁটে যাব,
নদী ছুঁয়ে ছুঁয়ে
অবলীলায় সমুদ্রে গড়াবো,
অন্তত শ`খানেক বসন্ত
তোমার প্রতীক্ষায় রবো,
আরও কয়েকটা জনম
তোমারই প্রেমিকা হয়ে জন্মাবো।

যদি জানি তোমার দেখা পাব না
আমি যাযাবর হবো।
যদি জানি তোমায় পাবো,
আমি আমৃত্যু প্রেমিকা থেকে যাব।
যদি জানি তোমায় পাব না,
মৃত্যুর পরও আবার জন্মাবো।